তারা নির্ধারিত অর্থ জমা করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। ওই বাংলাদেশিরা আশায় রয়েছেন, হজের আগেই প্রাণঘাতী করোনা দুনিয়া থেকে বিদায় হবে এবং তারা ধর্মীয় বিধান পালনে সৌদি যেতে পারবেন। ২০২০ সালের জন্য হজে বাংলাদেশের কোটা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজারের মত। অবশ্য গত মার্চে এক ঘোষণায় সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ওমরাহ কার্যক্রম স্থগিত করে এবং হজের প্রস্তুতি বিশেষত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কারও অঙ্গীকার বা চুক্তিবদ্ধ না হতে নির্দেশনা দেয়।
উল্লেখ্য, গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি ওমরাহ ও ভিজিট ভিসায় সৌদিতে প্রবেশ বন্ধ হয়। ৫ই মার্চ মক্কার বাইরের লোকদের ওমরাহ পালন ও মসজিদে নববীতে গমণে বিধি-নিষেধ কার্যকর হয়। সেই থেকে বাইরের লোকজনের তাওয়াফ, সাফামারওয়ায় সাঈ করাও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় রিয়াদের বাংলাদেশ মিশন এবং জেদ্দাস্থ কনস্যুলেট ও হজ অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এখন পর্যন্ত রিয়াদের নতুন কোনো নির্দেশনা নেই। সবাই সৌদি সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। তারা বলেন, হজ হবে এটা নিশ্চিত। তবে কোন ফর্মে হবে, বিদেশিদের এলাও করবে কি-না? করলেও বাংলাদেশের পুণঃনির্ধারিত কোটা কত হবে- মোটামুটি একটা ধারণা পেলে বাংলাদেশ সরকার একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারতো। কিন্তু স্পষ্ট কোনো ধারণাই পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার কারণে ইন্দোনেশিয়ার সরকার নিজে থেকেই তাদের নাগরিকদের এ বছর হজে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল এক প্রতিনিধি বলেন, ঢাকা আগবাড়িয়ে হয়তো কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। কারণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হজের বিষয়টি ধর্মীয় এবং রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর।
নিবন্ধিতরা ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে অগ্রাধিকার : এদিকে এবার শেষ পর্যন্ত পবিত্র হজব্রত পালনে বাংলাদশিরা সুযোগ না পেলে কিংবা নিবন্ধিত সবাইকে পাঠানো সম্ভব না হলে করোনাউত্তরকালে তারা অগ্রাধিকার পাবেন। গণমাধ্যমকে এমনটাই জানিয়েছেন ধর্মসচিব। তার ভাষ্য যদি পরিস্থিতির কারণে নিবন্ধিতরা হজে না যেতে পারেন, তাহলে আগামীতে তারা অগ্রাধিকার পাবেন। হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হাব প্রেসিডেন্ট এম শাহাদত হোসাইন তসলিমও মনে করেন, করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বের হজযাত্রীরা পবিত্র হজ পালনে যেতে পারবেন কি-না? তা সৌদি সরকার থেকে সিদ্ধান্ত আসবে। তিনি নিশ্চিত করেন যে, এ বছর ইসলাম ধর্মের এই বিধান পালনে ৬৫ হাজার ৫১২ বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছেন। এ বছর হজ পালনে সরকার পরিচালিত সর্বনিম্ন ব্যয় ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে প্যাকেজ-৩ এর আওতায় হজ প্যাকেজ-২০২০ এর খসড়া ফেব্রুয়ারিতে অনুমোদন করে মন্ত্রিপরিষদ।
হজযাত্রীদের জমাকৃত অর্থ এবং সরকারের কতিপয় নির্দেশনা: ওদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ডেস্কের সরবরাহ করা তথ্য মতে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে আগ্রহী প্রত্যেকে ১ লাখ ৫১ হাজার ৯’শ ৯০ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কারণে বাকী অর্থ জমা না দেয়ার আগাম নোটিশ দেয়া হয়েছে। তাদের দফায় দফায় সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অতিরিক্ত অর্থ জমা করলে সরকার কোনো দায় নেবে না। কোন এজেন্সি নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত অর্থের অতিরিক্ত দাবি করলে তাৎক্ষণিকভাবে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতেও বলা হয়েছিল। সরকারি নোটিশ মতে, হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় গৃহীত অর্থ, কোন অবস্থাতেই এ পর্যায়ে হজ কার্যক্রম বাবদ বাংলাদেশে ব্যয় করা যাবে না কিংবা সৌদি আরবেও প্রেরণ করা যাবে না। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কোন এজেন্সি ব্যাংক থেকে ওই টাকা উত্তোলন করতে পারবে না। ওই অর্থের সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপকগণকে সদা-সতর্ক থাকতে বলেছে সরকার।
অনিশ্চয়তা তবুও আশায় ৬৫ হাজার হজ্ব প্রত্যাশি বাংলাদেশি
মিরর বাংলাদেশ :
করোনার প্রভাব পড়েছে ওমরাহ হজে। সামনে হজ মৌসুম। এখন পর্যন্ত হজ পালনে রয়েছে অনিশ্চয়তা। মহামারি করোনার গতি-প্রকৃতির উপর নির্ভর করছে এ বছর হজ হবে কি হবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সৌদি সরকার হজের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে-এমনটাই আশা করছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল প্রতিনিধি বলছেন, এ নিয়ে অন্য কোনো দেশের করণীয় তেমন নেই। তবে হজ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য বিকল্প ভেবে নিবন্ধনসহ কিছু মৌলিক কাজ এগিয়ে রেখেছে ঢাকা। দফায় দফায় সময় বাড়ানো এবং মানুষকে আশ্বস্ত করার প্রেক্ষিতে ৬৫ হাজারের মত বাংলাদেশি (সরকারি বেসরকারি মিলে) পবিত্র হজ পালনের আগ্রহ দেখিয়েছেন।