আন্দোলন সংগ্রাম করে কেউ কিছু করতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী

231

 

* পাতাল রেলে নির্মান কাজের উদ্বোধন

মিরর বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। জনগণ তাদের সাথে আছে। কাজেই আন্দোলন সংগ্রাম করে কেউ কিছু করতে পারবে না। দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি কেউ রুখতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে অঅনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং বাংলাদেশে জাইকা’র চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুছি তোমোহাইড। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে এমআরটি লাইন-১-এর ওপর একটি ভিডিও চিত্র এবং প্রকল্পের ওপর এটুআই নির্মিত একটি ‘থিম সং’ পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুৃল কাদের , বস্ত্রমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর বীর প্রতীকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন্
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা আস্থা রাখতে পারেন (আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা) যে জনগণ আমাদের সাথে আছে। কারণ, আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। কাজেই জনগণ যতক্ষণ আমাদের সাথে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম করে কেউ কিছু করতে পারবেনা। ‘
তিনি বলেন, পাতাল রেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হলো’ এবং ‘পাতাল রেলে বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু হলো’।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেশ আরো এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি আর কেউ রুখতে পারবে না।
তিনি সবাইকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় বিপদের শঙ্কা রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এটা সম্ভব হয়েছে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বলেই। এই গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ইনশাল্লাহ ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য সংকটসহ বিশ্বে চলমান অস্থিরতার কথা বিবেচনা করে জনগণকে হিসাব করে চলার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবকিছুর দাম বেড়েছে। সবাইকে অনুরোধ করবো কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে, সাশ্রয়ী হতে হবে। পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। সবাইকে হিসাব করে চলার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমরা আছি, সমস্যা হলে দেখবো।
প্রকল্প সূত্র জানায়, সরকার ২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং পূর্বাচল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত মাটির নীচ দিয়ে এবং এলিভেটেড উভয় সুবিধা সম্বলিত ৩১ দশমিক ২৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ করবে। ২০৩০ সাল নাগাদ রাজধানী ঢাকায় মোট ছয়টি মেট্রোরেল রুট উদ্বোধন করা হবে এবং ডিএমটিসিএল এই মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে যাতে এই অবস্থা না হয়।… আমাদের এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। এখন পর্যন্ত সবকিছু ম্যানেজ করে যাচ্ছি, করে যাবো। তবে আপনাদেরই সাশ্রয়ী হতে হবে।
দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নির্বাচনি ইশতেহার আমরা বাস্তবায়ন করেছি। ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। এমনকি আগামী ১০০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনাও আমরা করে রেখেছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কথা দিলে সেটা রাখে, আমরা সেই কথা রেখেছি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, দেশের মানুষের উন্নতি হয়। সারাদেশে যোগাযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেন, জনগণের সাহায্য-সহযোগিতায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এখানে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। আমরা মানুষকে কতটুকু দিতে পারি সেটাই আমাদের বিবেচ্য বিষয়। নিজেদের টাকায় সেতু করে আমরা বিশ্বকে দেখিয়েছি। যতক্ষণ জনগণ সঙ্গে থাকবে কেউ কিছু করতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব না, সবথেকে বড় পরিচয় আমি জাতির জনকের কন্যা। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আমার কাজ।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত জাপানের সাত নাগরিকের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সাত জন যারা আমাদের এই মেট্রোরেলের পরামর্শক, তারা জঙ্গি হামলায় মারা গেলেন। তাদের স্মরণে আমরা স্মৃতিস্তম্ভ করেছি। এই ঘটনার পরেও জাপানের নেতারা হাত গুটিয়ে নেননি। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাবো।
প্রধানমন্ত্রী জানান, পাতালরেলের কাজ করার সময় মাটির নিচ থেকে বোরিং মেশিন দিয়ে গর্ত করে টানেল করা হবে। এখানে জনগণের চলাচলের কোনও সমস্যা হবে না। ভূপৃষ্ঠের ১০ মিটার নিচে কাজ হবে, ফলে ওপর থেকে বোঝা যাবে না যে মাটির নিচে কাজ চলছে। এই পাতালরেলের পূর্বাচল অংশ হবে উড়ালপথ। এছাড়া বিমানবন্দর রুটে ১২টি পাতাল রেলস্টেশন নির্মাণ করা হবে। খননকাজের সময় মানুষের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব কাজ হবে।
দেশের প্রথম পাতালরেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিএমটিসিএল কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাদেশের প্রথম পাতালরেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিএমটিসিএল কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
উল্লেখ্য, দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উড়ালপথের অংশ রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এবার দ্বিতীয় মেট্রোরেলের কাজ শুরু হচ্ছে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত, যা মূলত পাতালরেল। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) অধীনে বাস্তবায়ন হতে চলা প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ মাটির নিচে নির্মিত হবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, দ্বিতীয় মেট্রোরেলের (উড়াল ও পাতাল) দুটি রুটের মোট দৈর্ঘ্য ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। এটি এমআরটি লাইন-১ হিসেবে পরিচিত। এরমধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রায় ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার পাতালরেল। এই রুটে ১২টি স্টেশন হবে। এগুলো হলো- বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর।
এছাড়া পূর্বাচল রুটে নতুন বাজার স্টেশনটি পাতালে নির্মাণ করা হবে। নতুনবাজার থেকে পূর্বাচলের নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ পর্যন্ত যাবে এই রুট; যার দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। উড়ালপথের এই রুটে স্টেশন হবে ৯টি। এগুলো হলো- নতুন বাজার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা, পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল ও পিতলগঞ্জ ডিপো।
এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা জাপানি ঋণ আর বাকি অর্থ ব্যয় করবে সরকার। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।
প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রকল্পটি চালু হলে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পৌঁছাতে ১২টি স্টেশনে থেমে ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড সময় লাগবে। নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত ৯টি স্টেশনে থেমে ২০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড এবং কমলাপুর থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে থেমে ৪০ মিনিট লাগবে।
নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ডিএমটিসিএল। এ বিষয়ে কোম্পানিটির এমডি এমএএন সিদ্দিক জানান, ২ ফেব্রæয়ারি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় দেশের প্রথম পাতালরেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে রূপগঞ্জ জমতা উচ্চবিদ্যালয় সংলগ্ন রাজউকের কমার্শিয়াল প্লট মাঠে একটি সভারও আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ মৌজায় ৮৮ দশমিক ৭১ একর ভূমিতে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্য দিয়ে পাতালরেলের নির্মাণকাজ শুরু হবে। মূলত এমআরটি-১ প্রকল্পের একটি অংশ পাতাল এবং অপরটি উড়াল হবে। বিমানবন্দর রুট ও পূর্বাচল রুটে চলাচলকারী সব মেট্রোরেল ডিপোটির সুবিধা পাবে।