মিরর বাংলাদেশ: রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইনে থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে ইতালি থেকে দেশে ফেরা ১৪২ বাংলাদেশি। এ সময় বাইরে থেকে তাদের স্বজনরাও বিক্ষোভে যোগ দেন। এ পরিস্থিতিতে সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ইতালিফেরতদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তায় শনিবার সন্ধ্যায় সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)।
এর আগে শনিবার দুপুর ২টার দিকে ইতালিফেরত লোকজন ও তাদের স্বজনরা ক্যাম্পের ভেতর ও বাইরে এই বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে ইতালিফেরতরা হজ ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ইতালিফেরত লোকজন ও তাদের স্বজনদের কথা-কাটাকাটি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটে।
বিক্ষুব্ধরা তখন অভিযোগ করে বলেন, তাদেরকে হজ ক্যাম্পে আনার পর কর্তৃপক্ষ কী করতে চায়, তা বলছে না। তাদেরকে শুধু পানি ছাড়া কোনো খাবারও দেয়া হচ্ছে না। তারা বলছেন, কোয়ারেন্টাইনে থাকলে তারা প্রয়োজনে বাড়িতেই থাকবেন। এ সময় পুলিশকে উদ্দেশ্য করে অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করেন বেশ কয়েকজন প্রবাসী। হজ ক্যাম্পের প্রধান গেটে এসে বিক্ষোভ ও গেট ধাক্কাধাক্কি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন কয়েকজন প্রবাসী। এ সময় তারা প্রশাসনের অবহেলার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এদের একজন বলেন, এখানে তারা অমানবিক অবস্থার মধ্যে আছেন। শিশুরা আছে। কিন্তু কোনো খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্ষোভ শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যেই বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় এবং প্রবাসীদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয় পুলিশ।
বিকাল সাড়ে ৫টায় হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ইতালিফেরত জুনাঈদ আহমেদের সঙ্গে যুগান্তরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, আমরা ইতালির রোমে বিমানবন্দরে একবার টেস্ট করে এসেছি। দুবাইতে আবারও টেস্ট করানো হয়েছে। এরপর শাহজালাল বিমানবন্দরে টেস্ট করে দেখা হয়েছে আমাদের মধ্যে কোনো উপসর্গ ছিল না। এরপরও কেন আমাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হল?
তিনি বলেন, বিকালে সাড়ে ৫টা বাজে। আমাদেরকে লাইনে দাঁড় করানো হয়েছে পরীক্ষা করানোর জন্য। কোনো নিয়ম শৃঙ্খলা নেই। একজনের গা ঘেষে আরেকজনকে দাঁড় করানো হয়েছে। এমনভাবে দাঁড় করানো হয়েছে, কেউ যদি আক্রান্ত থাকে, তবে তার শরীর থেকে এ ভাইরাস অন্য জনের শরীরে ছড়াবে নিশ্চিত।
বিক্ষুব্ধ হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জুনাঈদ আহমেদ বলেন, আমাদের যখন হাজি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হল, তখন থাকা খাওয়া এমনকি শৌচাগারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। তিনি বলেন, যেখানে আমাদের রাখা হয়েছিল ওই জায়গাটি অনেক নোংরা ছিল। এ কারণের অনেকের মাঝেই ক্ষোভের মাত্রা বেশি ছিল। এখন যেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, সে জায়গাটি মোটামুটি পরিচ্ছন্ন। অবশ্য এর আগে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে হজ ক্যাম্পের ভেতর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। তাদের একজন জানিয়েছেন, নোংরা রুমগুলো তাদের দিয়ে পরিষ্কার করানো হয়েছে।
এদিকে ইতালিফেরত লোকজনের স্বজনরা সকাল থেকেই তাদের জন্য বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের কেউ ঢাকা ও আশপাশ থেকে এসেছেন, আবার কেউ কেউ এসেছেন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের নাঈমুল হাসান জানান, তার ছোট ভাই ইতালি থেকে এসেছেন। তিনি বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন ভাইকে রিসিভ করার জন্য। সেখানে দেখা করতে পারেননি। পরে যখন আশকোনা হজ ক্যাম্পে নিয়ে আসা হল তখন তিনিও হজ ক্যাম্পের সামনে এসে ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি।
তিনি বলেন, স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেয় না। কিছু ভেতরে দিতে চাইলে তারা নিজেরা নিয়ে দেয়।
গোপালগঞ্জের মুকসেদপুরের বাসিন্দা দুইজন পুরুষ ও একজন নারী এসেছেন ইতালি থেকে। তাদেরকেও হজ ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তাদের স্বজন দেলওয়ার হোসেন থাকেন উত্তরায়। তিনি ও তার দুই স্বজন তাদেরকে রিসিভ করার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, বাসা থেকে রান্না করা খাবার ভেতরে পাঠিয়েছি। তবে তাদের কখন ছাড়বে, কেউ কিছু বলছে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান ভুইয়া স্বজনদের জন্য অপেক্ষা করছেন হজ ক্যাম্পের বাইরে। তিনি জানান, ইতালিফেরত তার দুই মামা ও ছোট দুই ভাইকে এখানে রাখা হয়েছে। তারা ইতালিতে ব্যবসা করেন। সেখানকার দোকানপাট বন্ধ, তাই তারা দেশে চলে এসেছেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, দেশে এসেওতো এখন তারা বাড়ি ফিরতে পারছে না। অথচ তাদের শরীরে করোনাভাইরাস নেই। তিনি বলেন, তাদেরকে এখানে আনা হবে, পরীক্ষা করা হবে, রাখা হবে। এ বিষয়টি যদি আগে জানিয়ে দেয়া হতো, তাহলে তাদের আর এই সমস্যাটি হতো না।