দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কামুর পরিবারের ভয়ঙ্কর পতন কাহিনী

490
মনু ও কামু

“বন্দরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কামু থেকে মনু কেউই বেঁচে নেই “

কামাল উদ্দিন সুমন :
বাবা কামাল উদ্দিনকে ট্রাক চাপা দিয়ে এবং মা ফুল বিবিকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিশোধ নিতে একসময় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জে বন্দরের উত্তরাঞ্চলের আতংক কামরুজ্জামান কামু। বাবা -মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে ৯১ সালের দিকে  উত্থান ঘটে কামুর। ভাই কামুর পথ ধরে তার বাকী ভাই-বোন নুরুজ্জামান নুরা, মনিরুজ্জামান মনু, বড় ভাই বাবুল আক্তার ও আবুল হোসেন, বোন নিলুফা ও রেহানা। এদের হাতে খুন হয় প্রতিপক্ষের প্রায় দেড় ডজন মানুষ। বিনিময়ে এরাও আজ আর কেউ বেচে নেই। সর্বশেষ শুক্রবার প্রকাশ্যে পিটিয়ে খুন করা হয় কামুর বেঁচে থাকা একমাত্র ভাই মনিরুজ্জামান মনুকে । শুক্রবার পৈচাশিক কায়দায় মুনকে পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা।

নিহত মনুর স্ত্রী সাবিনার অভিযোগ, বন্দরের মুরাদপুর এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে একই এলাকার সন্ত্রাসীরা মিঠু, টিটু ও মনিরের নেতৃত্বে ১০/১২ জন মিলে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে ।
এদিকে মনু খুনের মধ্য দিয়ে বন্দরের মদনপুরের এক সময়কার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কামুর পরিবারের শেষ অধ্যায় রচিত হয়েছে। ২০১২ সালের ২৫ নভেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যায় কামু। এর আগে ঐ বছরের ২১ অক্টোবর ৫ বছর জেল খেটে বের হয় কামু। তার বিরুদ্ধে ছিল প্রায় ২ ডজন মামলা। এসময় মামলার বেশিরভাগাই খুনের ঘটনায় দায়ের করা হয়।
এলাকাবাসী জানান, বহু বছর  আগে উপজেলার মদনপুর মুরাদপুর গ্রামের কামালউদ্দিনকে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এ হত্যাকান্ডের পর থেকে কামালউদ্দিনের ছেলে কামরুজ্জামান কামু বদলা নিতে সন্ত্রাসী কার্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। এ কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপ সন্ত্রাসী কামুকে না পেয়ে তার মা ফুলবিবিকে কুপিয়ে হত্যা করে। পিতা ও মাতার হত্যার বদলা নিতে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে কামু। তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যোগ দেয় তার ছোট ভাই নুরুজ্জামান নুরা, মনিরুজ্জামান মনু, বড় ভাই বাবুল আক্তার ও আবুল হোসেন। পুরো মদনপুর এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সন্ত্রাসী আধিপত্য বিস্তার ও পরিবহন সেক্টরের চাদাবাজির ভাগ বসাতে প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নেয় চাঁনপুর গ্রামের স্বর্ণ মিয়ার ছেলে সুরুত আলী। এ নিয়ে কামু বাহিনী সুরুত আলীর ভাই দলিল লেখক বাতেনকে হত্যা করে।
এরপর থেকে মদনপুর এলাকায় একের পর হত্যাকান্ড রক্তপাতের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসীদের এক রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা হয়। সুরুত আলী ও কামু দুই বাহিনীর মধ্যে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। যাকে যেখানে পাওয়া যেত সেখানেই হত্যা করা হতো। সুরুত আলী বাহিনীর হাতে কামরুজ্জামান কামুর ছোট ভাই নুরুজ্জামান নুরা ও বড় ভাই বাবুল আক্তার খুন হয়। ওই হত্যাকান্ডের কয়েক মাস পর কামুর বড় বোন নিলুফা বেগমকে তুলে নিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় সুরুত আলী বাহিনী। এরপর কামুর ছোট বোন রেহানা বেগমকে তুলে নিয়ে লাশ টুকরা টুকরা করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এখনো লাশের সন্ধান মেলেনি। এভাবে কামু বাহিনীর সদস্য ঘোড়া দেলোয়ার, ফুলহরের শাহজাহান ও তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাসুদকেও খুন করা হয়। সর্বশেষ খুন করা হয়েছে ফুলহর গ্রামের ব্যবসায়ী রিপনকে।
একইভাবে সুরুত আলী বাহিনীর সদস্য জুলহাস, সামছুল হক, সুমন ও তার ভাই দলিল লেখক বাতেনকে হত্যা করে কামু বাহিনী। এ ছাড়াও কামুর বড় ভাই আবুল হোসেন ও ফুলহর গ্রামের আলী আহম্মদের ছেলে মুকবুল পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। কামুর দুই ভাই ও দুই বোনের হত্যার প্রতিশোধ নিতে সুরুত আলীকে নয়াপুর এলাকায় প্রকাশ্যে হত্যা করে শরীর থেকে মাথা কেটে নিয়ে যায় কামুর বড় ভাই আবুল হোসেন।
নিহত মনুর ছেলে মিনহাজ ও ভাগনি মুনমুন জানান, সোনারগাঁয়ের কুতুবপুর মামির জানাজা শেষে শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে মনিরুজ্জামান মনু বন্দরের মদনপুরের মুরাদপুর নিজ বাড়িতে আসে। এসময় একই এলাকার নুরা মিয়ার তিন ছেলে মিঠু, টিটু ও মনিরের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ঘর থেকে বাহির করে প্রথমে মাথায় গুলি ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে পরিবারের লোকজন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করলে দুপুর ২ টার দিকে চিকিৎসাধিন অবস্থায় সে মারা যায়।
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)গোলাম মোস্তফা বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মনিরুজ্জামান মনুকে কুপিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় প্রতিপক্ষ একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। এঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, নিহত মনু মুরাদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কামুর ছোট ভাই। তার আরেক ভাই আবুল পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হন। কামু পুলিশ হেফাজতে মারা যায়। এছাড়া এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিহত মনুর ভাই নুরুজ্জামান নুরা ও বাবুল আক্তার, বড় বোন নিলুফা ও রেহানা অপর সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে খুন হয়েছেন। তার পর থেকে মনু কাপাসিয়ায় বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করতো।
গত বৃহস্পতিবার নিহত মনু পাশ্ববর্তী সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরের কুতুবপুর এলাকায় তার মামি মারা যাওয়ার খবর পেয়ে ওই বাড়িতে যায়। শুক্রবার সকালে মনু নিজ বাড়িতে পৌঁছালে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে।