সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : আজ লিখব আমার প্রাণের শহর নারায়ণগঞ্জের ২জন কৃতি সন্তান তথা সমগ্র নারী জাতি যাদের নিয়ে গর্ববোধ করে বলে আমার মনে হয়। শারীরিকভাবে দেখতে নারী হলেও কোনো কোনো পুরুষের চেয়েও মানসিক শক্তি ও সাহসের দিক থেকে এই ২জন নারী অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। একজন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৬-১৭-১৮ নং ওয়ার্ড এর সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ আফসানা আফরোজ বিভা হাসান, অন্যজন ৭-৮-৯ নং ওয়ার্ড এর সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচিত কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা। আমার দেখা সেরা সাহসী ও মানবতার উদাহরন এই দুই মহিয়সী নারী। সাধারন মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সুখে-দু:খে তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন থেকে শুরু করে নিজস্ব মানবিক কর্মকাণ্ডের গুণাবলি নিয়েই স্ব স্ব যোগ্যতায় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত এই ২ নারী। সমগ্র পৃথিবীতে মানুষ মানুষকে ছুঁলে যেখানে মৃত্যু অবধারিত, সেখানে এই দুই নারী তাদের পরিবার-পরিজন এমনকি দুধের শিশুটিকে পর্যন্ত ঘরে ফেলে এসে এমনকি নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনাভাইরাসে ‘রেডজোন’ খ্যাত এলাকা নারায়ণগঞ্জের অসহায় জীবীত মানুষ ও অসহায় মৃত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমার এ শেষ লাইনটুকু অর্থাদ ‘‘অসহায় মৃত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি’’ কারো কারো কাছে অদ্ভূত মনে হলেও বলব- হ্যা, এটি সত্যি। বলছি আরও একটু পরে…। করোনার কড়াল গ্রাস থেকে বাঁচাতে সাধারন জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এলাকার বিভিন্ন স্থানে জীবানুনাশক ছিটানো, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাস্ক-হ্যান্ড সেনিটাইজার, খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেয়া থেকে শুরু করে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন কাফনের জন্যও সবার আগে দৌড়ে যাওয়া এই নারীরাই নারায়ণগঞ্জের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। একদিকে আয়সা আক্তার দিনা নাওয়া খাওয়া সহ নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা না করে সর্বোপরি জীবনের মায়া ত্যাগ করে অসাধ্যকে সাধন করে নিজের জীবন বাজি রেখে যেভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে এই দুর্যোগ মুহুর্তে, তা অনেক পুরুষ জনপ্রতিনিধি করতেও সাহস বা বুকে বল পাচ্ছেন না। তাদের কেউ কেউ এই দুর্যোগ মুহুর্তে জনগণের কল্যাণে কিছু কাজ করলেও এই নারীরা যেনো রীতিমতো অসাধ্যকে সাধন করতে নেমেছেন। অপরদিকে আফসানা আফরোজ বিভা হাসান একইভাবে কাজ করার পাশাপাশি নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা গিটারিস্ট হিরো’র লাশ এর দাফন-কাফন এর ব্যবস্থা করেছেন। অথচ হিরোর পরিবার কিংবা আত্মীয় তখন করোনাভাইরাসের ভয়ে হিরোর লাশের পাশে যায়নি। এম্বুলেন্সের ড্রাইভারটি পর্যন্ত শেষ সময়ে রোগির করোনা উপসর্গ আছে জেনে এম্বুলেন্স রেখেই পালিয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আমাদের অতিপরিচিত গিটারিস্ট হিরো লিসান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। অথচ বিভা হাসানই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সেখানে গিয়ে নির্ভয়ে হিরোর লাশ দাফন কাফনের সার্বিক ব্যবস্থা করল। জীবনের মায়া কি তা যেনো এই নারীরা জানেনই না। কোথা থেকে যেনো একটা সাহসের পাহাড় এসে তাদের ২জনের বুকে ভর করেছে। যুগে যুগে কালে কালে এভাবেই নারী ঘর-সংসারকে সামলেও তার কর্মদক্ষতা, মানবতা ও অদম্য সাহস নিয়ে কালের পরিবর্তন করে এগিয়ে গেছে। আর কিছু কাপুরুষ বরাবরই বলে বেড়ায়- নারী তার রুপ দেখিয়ে পদ পদবি হাসিল করে। কর্মক্ষেত্রে নারী এভাবেই যোগ্যতা অর্জনের মধ্যদিয়ে পদ পদবি তথা সমাজকে শাসন করতে পুরুষের সম পরিমান মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয় দেখে অনেক পুরুষ এসব মহিয়সী নারীকে হিংসা করে, এসব সাহসী নারীদের দুমরে মুচড়ে দিতে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে কুৎসা রটায়। যেনো তারা মেনেই নিতে পারেনা নারীর এসব সাহসী কৃতিত্বকে। ধিক্ জানাই ওইসব পুরুষকে। স্যালুট জানাই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ কাউন্সিলর বিভা হাসান ও কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনাকে। এ দেশের জন্য দ্বিতীয় একাত্তরের ভয়াবহ সময়ে যে নারীরা তাদের পরিবার পরিজনের কথা না ভেবে মৃত্যুর ছোবল আছে জেনেও একাত্তরের বীর মুক্তিসেনাদের মতো মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমি নিজে নারায়ণগঞ্জের মেয়ে হিসেবে এই দু’জনকে নিয়ে গর্ববোধ করি যে- তারা আমারই বোন। জয় হোক্ নারীর। বিশ্বময় এই দুর্যোগ মুহুর্তে এই নারীদ্বয় নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে বলে বিশ্বাস করি। স্যালুট নারী। আল্লাহ পাক নিশ্চয়ই আপনাদেরকে হেফাজত করবেন ইনশাল্লাহ।
লেখক : সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি
(সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী)
লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া