করোনায় প্রায় ৪শ টিকিৎসক আক্রান্ত, স্বাস্থ্য খাতে উদ্বেগ

697

খাদিজা পারভীন উপমা : দেশে ক্রমেই বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসকের সংখ্যা। প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে ডাক্তার নার্স। যারা করোনা চিকিৎসা দিবেন তাদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যখাতে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের ৭ শতাংশের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী। এ অবস্থাকে উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন চিকিৎসকরা। আর দেশের বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক অব্যবস্থাপনা আরো প্রকট হয়ে উঠছে বিশেষ এ সময়ে। এ অবস্থায় দরকার নতুন করে পরিকল্পনার।

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এই সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে অব্যবস্থাপনার অভিযোগও প্রবল হয়ে ওঠে।

এর মধ্যে মারা গেছেন একজন চিকিৎসক ও একজন স্বাস্থ্যকর্মী। মৃত্যুর হার কম হলেও আতঙ্কিত করছে, দেশে মোট রোগীর তুলনায় চিকিৎসা কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার চিত্র। ১৬ কোটি মানুষের দেশে যেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার আর সেখানে শুধু চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৪শ’।

গত ১ সপ্তাহের প্রাপ্ত্ তথ্য বলছে, ২১ এপ্রিল যেখানে আক্রান্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল ২শ’, সবশেষ ২৭ এপ্রিল সে সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৭৩ জনে। আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে শুধু ঢাকাতেই আছেন ২৮৩ জন। পরের অবস্থানে আছে ময়মনসিংহ।

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ডা. নিরুপম দাশ বলেন, এটা আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ঝুঁকির ক্ষেত্রে অশনিসংকেত। করোনা যুদ্ধ শুরুই হয়নি, এরমধ্যে যদি আমাদের চারশ’ চিকিৎসক আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে ভবিষ্যৎ নিয়ে আসলে আমরা ভীত।

এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত চিকিৎসাকর্মীদের জন্য নানা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। কর্মরত চিকিৎসকদের জন্য আবাসনসহ নানা সুবিধা নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে।

বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনার কথা বলছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা।

কোভিড-১৯ জাতীয় প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ইকবাল আর্সালান বলেন, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের হার অনেক বেশি বৈশ্বিক তুলনায়। আগে থেকে তাদের প্রস্তুত করা হয়নি। মানসম্পন্ন সামগ্রী হয়ত সংগ্রহ করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম।

টিআইবির ন্যায়পাল অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, এ খাতটি আগে থেকেই দুর্বল ছিল। এখন আরও দুর্বল হয়েছে। বিশাল সংখ্যায় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হচ্ছেন। তার মানে এ সমুখসারির যোদ্ধোদের যথাযথ সুরক্ষা দিতে পারছি না। এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলোর সদুত্তরের ওপর আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, বর্তমান দুঃসময় মোকাবিলায় চিকিৎসকদের যেমন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করে তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে।