করোনার কাছে সরকারের আত্মসমর্পনের সুর ধ্বনিত হচ্ছে: রিজভী

387

মিরর বাংলাদেশ :
জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যে করোনার কাছে আত্মসমর্পনের সুর ধবনিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করে বলেন, গতকাল (বুধবার) জাতীয় সংসদে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে যতই শক্তিশালী হোক, যতই অর্থশালী, অস্ত্রশালী হোক, কোনো শক্তিই কাজে আসছে না। করোনা ভাইরাসই যেন সবচেয়ে শক্তিশালী। তাহলে আপনার একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী হুংকার দিয়ে বলেছিলেন ‘আওয়ামী লীগ নাকি করোনার চেয়ে শক্তিশালী’। সেই শক্তি গেল কোথায়? আওয়ামী লীগের এই শক্তি শুধু বিএনপিসহ বিরোধী মত ও চিন্তার মানুষকে জুলুম-নির্যাতন করতেই ব্যবহার হয়। বিএনপির নারী নেত্রীসহ যুব-ছাত্র কাউকেই এই দুর্যোগকালেও গুম-গ্রেফতার ও হয়রানির হাত থেকে রেহাই দেয়া হচ্ছে না।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এখন করোনার কাছে আত্মসমর্পণের সুর ধ্বনিত হচ্ছে। দম্ভোক্তি করে নিজেদেরকে করোনার চেয়ে শক্তিশালী ভেবে পুরো লকডাউন না দিয়ে সাধারণ ছুটি ও ক্ষুধার্ত মানুষের জনরোধ থেকে ময়ুরের সিংহাসনে যাতে ধাক্কা না লাগে সেজন্য জীবন-জীবিকার প্রশ্ন উস্কে দিয়ে করোনার ভাইরাসকে আমন্ত্রণ জানাতে সব কিছু উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এই মুহুর্তে করোনা কালবৈশাখীর ঝড়ে বাংলাদেশ লন্ডভন্ড। হু হু করে আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণের সংখ্যা বাড়ছে। গোরস্থানে লাশ দাফন করা যাচ্ছে না বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীদের আত্বীয়স্বজন পর্যন্ত কেউই এই সর্বগ্রাসী করোনার আগ্রাসনের মুখেও ত্রাণ চুরি থেকে নকল মাস্ক এর ব্যবসাসহ এহেন অপকর্ম নেই, যেটির সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। যার কারণে এখন করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সর্বাধিক মাশুল দিতে হচ্ছে। ছুটি মার্কা তামাশা না করে নিশ্ছিদ্র লকডাউন ও সর্বোচ্চ টেস্ট এবং রোগী শনাক্ত করণের মাধ্যমে সংক্রামণের বিস্তার প্রতিরোধ করে করোনা থেকে মানুষকে রক্ষায় যে পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিলো সেটা তারা করেননি।
তিনি বলেন, করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য বিভিন্নভাবে ১ কোটি লোক আবেদন করলেও সরকারী তথ্য অনুযায়ী এপর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪ লক্ষ ৪২ হাজার। অর্থাৎ ৯৬% মানুষ চিকিৎসা সেবার বাইরে রয়ে গেছে। যারা চিকিৎসা পাচ্ছেন মূলত: তারা ক্ষমতাশালী ও সরকারী প্রভাবশালী মানুষ। সিংহভাগ মানুষ কোনো সেবাই পাচ্ছে না। এই হলো বর্তমানে বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবার হাল-হকিকত। তাহলে বিগত ১২ বছরে লাখ কোটি টাকার উপর যে বাজেট পেশ হয়েছে সেই টাকা গেল কোথায়? বাংলাদেশে ৩০% হাসপাতালে অক্সিজেনের কোনো ব্যবস্থা নেই, ভেন্টিলেটর তো দুর আকাশের তারা। আইসিইউ বেড এখন সোনার হরিণের মতো স্বপ্নে দেখা যায়, কিন্তু বাস্তবে পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্যখাতে ১২ বছরে বাজেটে বরাদ্দকৃত টাকা শুধু লুটপাটেই ব্যয়িত হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের কল্যাণে এই টাকা উধাও হয়ে গেছে বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে। আর দেশের সাধারণ মানুষ সবসময় চিকিৎসা বঞ্চিত থেকেছে। এখন বর্তমানে বিশ^ব্যাপী করোনা মহামারীর তান্ডবে এদেশের করোনা আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসার অভাবে এক বিভিষিকাময় মৃত্যুর সম্মুখীণ হয়েছে।
গত ৯ জুন নড়াইলে বিএনপির রবিউল ইসলাম পলাশের বাড়িতে এক সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলার পলাশ ও তার দুইবোনের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবি ও হামলায় গুরুতর আহত তিন ভাইবোনের আশু সুস্থতা কামনা করেন রিজভী।