করোনা দুর্যোগে কার কাছে যাবে শত শত পথ শিশু,কোথায় পাবে খাবার

785

খাদিজা পারভীন উপমা :  করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সব মানুষ যখন ঘরে, তখন ঘরহীন পথশিশুরা দল বেঁধে ঘুরছে, খেলছে। রেলস্টেশন বাস টারমিনাল, কোনো ভবনের নিচে জটলা করছে, পাশাপাশি ঘুমাচ্ছে।

সুত্র জানায়,করোনাভাইরাসরে কবলে সারা বিশ্ব এখন একটা বদ্ধঘর। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বের হচ্ছে না। করোনা আক্রান্ত অঞ্চলকে জরুরি ভিত্তিতে লকডাউন করতে বলা হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা (ইউনিসেফ) থেকে। ইতোমধ্যে লকডাউনে নানা দেশ। বাংলাদেশের অর্ধেক জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা লকডাউনের কবলে। কিন্তু করোনার লকডাউনে কতটা সুরক্ষিত দেশের ছিন্নমূল পথশিশুরা।
শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, এরা নিজেরা যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে, তেমনি এদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, বিমানবন্দর রেলস্টেশন, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড, রমনা পার্কসহ বিভিন্ন স্থানে পথশিশুদের জটলা করে খেলতে কিংবা আড্ডা দিতে দেখা গেছে। তবে সবকিছু বন্ধ বলে নিয়মিত খাবার জুটছে না তাদের।
কমলাপুরে পথশিশু শাহিন। স্টেশনে কুলির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন কোনো কাজ নইে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহিন বলে, শুনছি কি একটা রোগে সব অফিস বন্ধ কইরা দিছে। আমরা তো না খাইয়া মরতাছি, কোনো কামকাজ নাই। না খাইয়া মরুম।
শাহিনের সঙ্গে বসে থাকা পলাশের কাছে করোনাভাইরাস কিছু না। এই রোগের বিপদ সম্পর্কে জানালে সে বলে, স্যার আমগো মরণ নাই।
নিজের প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে  রায়েরবাগ  বসে ছিলেন হোসনে আরা। করোনাভাইরাস বিষয়ে জিজ্ঞাস করলে হোসনে আরা জানান, টাকা দিবেন? দিলে কথা কমু। সারাদিন চাইর আনা পয়সাও কেউ দেয় নাই।’ দশ টাকার একটা নোট তাকে দেওয়ার পর তিনি বলেন, আমরা কিছুই জানি না। শুধু হুনছি বিদেশ থেইকা মানুষ নাকি কি একটা রোগ নিয়া আইছে এইডা সবার হইতেছে।’
একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পথশিশুদের সংঘবদ্ধ চলাফেরা ও রাতযাপনের কারণে করোনাভাইরাসের বাহক হিসাবে খুব ঝুঁকির মধ্যে আছে এরা। সংক্রমণ ঠেকাতে এই পথশিশুদের নিরাপদ স্থানে রাখার পরামর্শ তাদের।
সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন বলেন, পথশিশুদের সংক্রমণের হার কম। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঝুঁকিতে আছে এরা। এরা ভাইরাসটির বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে। কেননা এই সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। ফলে এদের মাধ্যমে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে পারে। নিজেদের কমিউনিটিতে এরা ঝুঁকি তৈরি করবে। এরা দলবদ্ধভাবে বসবাস করে, রাতের বেলা একসঙ্গে থাকে।
সরকারের বাজেটে পথশিশু পুনর্বাসন কার্যক্রম আছে। অন্তত মেগা সিটিগুলোতে যে শিশুরা আছে তাদের জন্য করোনায় বিশেষ সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের পরিচালক। পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন ও এনজিওগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
আবদুল্লা আল মামুন বলেন,এখন স্কুল-কলেজ বন্ধ। পথশিশুদের আশ্রয় হিসেবে অস্থায়ীভাবে সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এলাকাভিত্তিক এটা করা সম্ভব। স্বেচ্ছাসেবী পাওয়া যাবে, অবকাঠামো প্রস্তুত, শুধু সঠিক পরিকল্পনা দরকার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মো. মোজাহেরুল হক  বলেন, করোনা মহামারিতে সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ছিন্নমূল মানুষ। তারা গাদাগাদি করে অনেকে একসঙ্গে থাকে। বস্তির রাস্তাগুলো অনেক সরু হওয়ায় তাদের একজন অপরজনের শরীরের সংস্পর্শে আসতেই হচ্ছে।
ত্রাণ বিতরণের যেকোনো অব্যবস্থাপনাও অসহায় মানুষদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হচ্ছে বলে জানান ডা. মোজাহেরুল। বলেন, স্বল্প আয়ের এসব মানুষ ত্রাণের আশায় বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসছে। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে তারা মৃত্যুঝুঁকি নিচ্ছে। কেউ সচেতন নন, কেউ বা করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার বিষয়টি পাত্তাই দিচ্ছেন না। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে
Show quoted text