করোনা দুর্যোগে রায়পুরের একজন মানবিক নেতা মারুফ বিন জাকারিয়া

1265

ছবি:অসহায় মানুষের জন্য এভাবেই ত্রাণ নিয়ে ছুটছেন মারুফ বিন জাকারিয়া

কামাল উদ্দিন সুমন : কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত। ছুটে চলেছেন তিনি। অন্তরে সততা আরে কাঁধে দায়বদ্ধতা। এ বাড়ি থেকে ওই বাড়ি। এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ড। এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়ন।
কখনো পায়ে হেঁটে আবার কখনো মোটর সাইকেলে করে। খাবার সামগ্রী নিজেই বহন করে নিচ্ছেন অসহায় মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। হ্যাঁ, তিনি মারুফ বিন জাকারিয়া। তিনি রায়পুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। করেনা দুর্যোগে তিনি রায়পুরের মানবিক নেতা।
মানুষের চরম এ দু:সময়ে বয়সে তরুন এনেতার মানবিকতা দেখে রায়পুরের সর্বস্তরের সাধারন মানুষ বলছেন,মানুষ যদি কৃতজ্ঞ হয়,তাহলে সারাজীবন মারুফ বিন জাকারিয়াকে স্মরণ রাখবে। তারা বলছেন,মানবতার ফেরিওয়ালা বলতে যা বুঝায় তা তিনি রায়পুরের মানুষকে অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। মারুফের জন্য দোয়া,ভালোবাসা ও শুভকামনা করে অনেকে বলেছেন,এমন জনপ্রতিনিধি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

  ছবি : মানুষের জন্য ত্রান নিয়ে ছুটছেন মারুফ বিন জাকারিয়া

সবশেষ ২৫ এপ্রিল মারুফ বিন জাকারিয়া যে মহৎ কাজ করে সবাইকে শিখিয়ে দিয়েছেন তা বিরল ও এক অনন্য দৃষ্টান্ত । এক অসহায় নারীর ৩০ বছরের দুর্দশা ঘুছিয়ে দিয়েছেন তিনি । ত্রান দিতে গিয়ে লক্ষীপুর সদর থানার খিদিরপুরে এক অসহায় নারীর সন্ধান পান মারুফ । নাম লুজি বেগম। যাকে মারুফ খালা বলে সম্ভোধন করেন । সেই লুজি বেগমের জীর্ণশীর্ণ নাম মাত্র একটি ঘর। যেখানে বসবাস করার মতো নয়। অথচ সেই লুজি বেগম এ ঘরটিতে কাটিয়ে দিলেন ৩০ বছর । এই ৩০ বছর কোন জনপ্রতিনিধির নজরে আসেনি লুজি বেগমের নিদারুন কস্টের কথা । চোখে পড়েনি তার অসহায়ত্ব।
ত্রান দিতে লুজি বেগমের বাড়িতে গিয়ে তরুন জনপ্রতিনিধি মারুফ জানতে পারে লুজি বেগমের ৩০ বছরের করুন কাহিনী। সিদ্ধান্ত নেন লুজি বেগমকে ঘর দেয়ার। সে অনুযায়ী ২৫ এপ্রিল শনিবার নতুন ঘর উপহার  দিয়ে আসেন তিনি।

ছবি : লুজি বেগমের আগের জরাজীর্ণ ঘর পাশ্বে মারুফের দেয়া নুতন ঘর।

লুজি বেগমকে ঘর উপহার দিয়ে এসে মারুফ তার ফেসবুকে লিখেছেন,

ত্রিশ বছরের একটি গল্পের পরিসমাপ্তি মাত্র দেড় দিনে 

লুজি বেগম , আমি ডাকি লুজি খালা । ত্রান দিতে গিয়ে জানা হলো এক নিদারুন কষ্টের ইতিহাস । লক্ষীপুর সদর থানার খিদিরপুরে তাহার বসবাস। আপন বলতে শুধুই প্রতিবেশি মানুষ গুলো । ৩০ টি বছর পার করে দিয়েছে এই ভাঙ্গা ঝুপরি ঘরে ।বিদ্যুতের আলো, বিছানা, টয়লেট কিছুই ছিলো না তাহার । এই গল্পের সমাপ্তি করবো তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিছু করার। দ্রুত সব কিছুর অর্ডার করলাম যেন রমজানের আগেই করতে পারি । 
গতকাল সকাল ৭টায় শুরু হলো নতুন কিছু করার। এলাকার সবাই স্বেচ্ছায় আমার সাথে অংশগ্রহন করলো ।প্রায় ৩০/৪০ জন বৃষ্টি উপেক্ষা করে সন্ধ্যার মধ্যে পাকঘর, টয়লেট ও  ঘরের ৯০% কাজ শেষ করেছি । দুবার প্রচন্ড  ঝড় বৃষ্টির কারনে কাজ বন্ধ থাকায় পুরো শেষ করতে পারিনি । আজ সকালে গিয়ে বাকি কাজটুকু শেষ করে লুজি খালাকে সব বুজিয়ে দিয়ে বিদায় নিলাম । প্রত্যেকটি মানুষকে আন্তরিক সহযোগিতায় কাজটি দ্রুত সম্পূর্ন হয়েছে । তোমাদের সকলের প্রয়োজনে আমাকে পাশে পাবে ভাই । টাকা দিয়ে যা ১ দিনে সম্ভব হতো না তোমরা স্বেচ্ছায় তা করে দিয়েছ । ধন্যবাদ আমার আম্মি ( মা) কে যিনি আমাদের সকলের জন্য নিজে পাক করে দুপুরের খাবার পাঠিয়েছেন । এই ঘরটির যাবতীয় খরচ আমি বহন করতাম কিন্তু এখনো অনেক মানুষ আছে যারা মানবতার কাছে নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় সম্পৃক্ত করতে পছন্দ করে । ধন্যবাদ মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব সেলিনা ইসলাম এমপি, Gazi Kamal ভাইয়া নিজ থেকে এই কাজে আর্থিক অংশগ্রহন করার জন্য । মোট খরচ  ৫১৭০০/ যা আমরা ৫ জন বহন করেছি । করোনা অনেকের জন্য অভিশাপ হলেও আমার জন্য আশির্বাদ ।করোনার কারনে লুজি খালাকে চিনতে পেরেছি ।

 

লক্ষীপুরের রায়পুর উপজেলার রাখালিয়া গ্রামের মাতাব্বর হাট এলাকার এক সম্রান্ত ও বনেদি পরিবারে জন্ম মারুফ বিন জাকারিয়ার। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম জাকারিয়া জীবদ্দশায় একজন পরোপকারী ও ভালো মানুষ ছিলেন। তিনিও মানুষের সুখে দু:খে ছুটে যেতেন। মানুষকে সাধ্যমতো সহায়তা করতেন। রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব এবি এম জাকারিয়ার কথা আজও মানুষ স্মরন করেন।

  ছবি : নিজে মোটর সাইকেলে করে মানুষের বাড়ি বাড়ি ত্রান নিয়ে যাচ্ছেন মারুফ

মুক্তিযোদ্ধা বাবার আদর্শ আর ঐতিহ্য ধরে রেখে মারুফ অল্প সময়ে তার কর্মগুনে মানুষের প্রিয়জনও প্রিয় নেতার আসনে স্থান করে নিয়েছেন। মানুষ তাকে ভালোবাসে তার কর্মে। মানুষের জন্য যেমনটি কাজে করে যাচ্ছেন প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের এ দুর্যোগের সময়। তার ইচ্ছে,রায়পুর উপজেলার মানুষ ভালো থাকুক।
করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুতে তিনি মানুষকে সচেতন করার জন্য মাঠে নেমেছেন। জীবনের ঝুকি নিয়ে ছুটেছেন উপজেলার এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত। মাইক হাতে নিজেই মানুষকে সচেতন করার জন্য ক্যাম্পেইনে নেমেছেন। মানুষকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়েছেন।

 ছবি: করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষকে সচেতন করছেন মারুফ

ঘরবন্দি মানুষের পাশে তিনি আছেন, এমনটা জানিয়ে দিয়েছেন। নিজ উদ্যোগে প্রথমে শুরু করেছেন ত্রান বিতরণ। খাদ্য সামগ্রী নিয়ে বাড়ি বাড়ি তিনি পৌছে দিয়েছেন। কেউ না খেয়ে আছেন কিনা সে খোঁজ নিতে খাদ্য সমাগ্রী নিয়ে রাতে ছুটেছেন অসহায় মানুষের কাছে।অসহায় মানুষের একটাই কথা এমন দুর্দিনে মারুফই আমাদের মানবিক নেতা।