করোনা বাতাসেও ছড়ায়, ডব্লিউএইচও’র নির্দেশনা যথেষ্ট নয় : সায়েন্সডিরেক্ট

671

সাদেকুর রহমান : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(ডব্লিউএইচও) করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে ঘন ঘন হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, শুধু তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না বলছে একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। এর মতে, বাতাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাস। তাই সে বিবেচনায় সতর্ক থাকতে বিশ্ববাসীকে আহ্বান করেছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা

কভিড-১৯ এর জেনেটিক কোড সার্স-কভ-টু সম্পর্কিত এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা গবেষণায় স্বীকৃত বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম ‘সায়েন্সডিরেক্ট’। তাতে এ কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এতে বলা হয়েছে, ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ডব্লিউএইচও’র নির্দেশনা কভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এগুলোই যথেষ্ট নয়। শুধু এগুলো সংক্রমণ রোধ করতে পেরে ওঠছে না। কারণ এই ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়। তবে বেশি দূর পর্যন্ত যেতে সক্ষম নয়। মিটার দশেক যেতে পারে এর ভাইরাল সামগ্রী।
ভাইরালের এ ধরনের বহনের ক্ষেত্র বিশ্লেষণে সায়েন্সডিরেক্ট বলছে, বাতাসের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এভাবে হলে লকডাউন বলেন, শারীরিক দূরত্ব বলেন, এসবের কিছুই প্রধান কার্যকর বিষয় নয়। অন্দর পরিবেশেও সংক্রমণ হতে পারে। তবে করোনা ভাইরাসে এখনও কেউই আক্রান্ত হননি এমন পরিবেশের মধ্যে ছাড়াবে না।
সাধারণত একটি কাশি দেওয়ার আগে একজনকে বড় করে নিঃশ্বাস নিতে হয়। এরপর প্রচন্ড শক্তিতে কাশি হয়। তখন ফুসফুসের দম নেওয়া বাতাসের সঙ্গে বের হয় ফুসফুসের মিউকাস। এছাড়া এক-একটা কাশিতে প্রায় তিন হাজার ড্রপলেটস (কাশের কণা) নির্গত হয়। আর এই কণা ঘণ্টায় প্রায় ৫০ মাইল বেগে মুখ থেকে বের হয়। এবং আমরা জানি তা কয়েক ফুট দূর পর্যন্ত যায়।
যদিও হাঁচির ব্যাপারটা আরও ভয়াবহ। হাঁচির মাধ্যমে নাক-মুখ থেকে প্রচন্ড বেগে প্রায় ৪০ হাজার ড্রপলেটস বা জলীয় কণা বের হয়। যার গতি ঘণ্টায় ২শ’ মাইল। আর এসব কণা থেকেও দ্রুততায় নির্গত হয় ভাইরাস।
এক্ষেত্রে ওই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির কণা ভাইরাল সামগ্রী বহন করে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। যা পরিবেশকে সুস্থদের জন্য সুরক্ষিত রাখে না। পরিবেশের অন্তত ১০ মিটার পর্যন্ত করোনা ভাইরাস দূষিত করে ফেলে। এছাড়া আশপাশে ছড়িয়ে পড়া এই কণার ভাইরাস কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত সজীব থাকে এবং সুস্থ দেশে সংক্রমণ করতে পারে।
সায়েন্সডিরেক্ট বলছে, এ ধরনের ভাইরাল সামগ্রী বহন প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা এবং প্রমাণ দেওয়ার পরও কোনো দেশ বা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করেনি। ভাইরাসের এই অভ্যন্তরীণ বিস্তার রোধে বিধিমালা হিসেবে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরামর্শ থাকবে, বিশ্ববাসীকে এই বাস্তবতা মেনে নেওয়া উচিত। মেনে নিতে হবে।
বিশেষত, সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিতে নিয়মিত জীবাণুনাশক স্প্রে করা কার্যকর উপায়। পাশাপাশি শারীরিক দূরত্বের পরিমাণও বাড়ানো উচিত হবে। একইসঙ্গে ডব্লিউএইচও’র যে নির্দেশনা আছে, হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, নাক-মুখ-চোখে হাত না দেওয়া ইত্যাদিও মানতে হবে। এছাড়া দিতে হবে ভাইরাসবাহী রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর পরামর্শও।
এসবের পরেও এই ভাইরাস মোকাবিলায় যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইসোলেশনে (একাকী পরিবেশ) রাখার ব্যাপারেও পরার্মশ রয়েছে ওই ব্যাখ্যার। এছাড়া এই ব্যাখ্যার মূল বক্তব্য হচ্ছে, এই করোনা ভাইরাসকে শুধু কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সম্প্রদায়গত সংক্রমণ না ভেবে বায়ুবাহিত সংক্রমণও বিবেচনা করা উচিত হবে। আর এই বাস্তবতা মানতে হবে।
এদিকে, এই ব্যাখ্যা সমর্থন করেছে অস্ট্রেলিয়া-চীন ফর এয়ার কোয়ালিটি সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (এসিসি-একিউএসএম)।