* আইইডিসিআরের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ
মিরর বাংলাদেশ : নারায়ণগঞ্জ জেলাকে করোনা ভাইরাসের ক্লাস্টার নগরী বলা হলেও এখনো প্রাণঘাতী এ রোগে আক্রান্ত আর মৃতের দিক থেকে এখনো শীর্ষেে রয়েছে ঢাকা। এরপর সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত এলাকা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর।
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) হিসাবে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার রাতে আইইডিসিআর তাদের ওয়েবসাইটে করোনা পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। এই তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক করোনা রোগী ঢাকায় শনাক্ত হয়েছে। ঢাকা শহরে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৮৪৩ জন।
করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৩২ শতাংশই ঢাকার বাসিন্দা। এরপরেই রয়েছে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার অবস্থান।
ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় শনাক্তের সংখ্যা ৭৬৩। ঢাকার পর এই বিভাগের অন্যান্য জেলার মধ্যে শনাক্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি নারায়ণগঞ্জে। এরপর গাজীপুর ও নরসিংদীতে। এই তিন জেলায় শনাক্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৩০৯, ১৬১ ও ৯৩ জন।
একক মহল্লা হিসেবে হিসেবে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছে মিরপুরের টোলারবাগে। সেখানে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছেন ১৯ জন। আরেকটি এলাকা শাঁখারীবাজারে আক্রান্ত ১০ জন। বাসাবোতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ জন।
ঢাকার তেজগাঁওয়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৬ জনের। বংশাল, গেন্ডারিয়া ও হাজারীবাগেও শনাক্ত হয়েছেন ১৬জন করে রোগী। গুলশানে শনাক্ত হয়েছেন ১৪ জন।
রাজারবাগ, আজিমপুর ও মিরপুর-১১ প্রতিটা এলাকায় ১৩ জন করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন। চকবাজার ও মহাখালীতে ১২ জন বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মগবাজার, বাবুবাজার ও মিরপুর-১২ তে ১১ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকার গ্রীনরোডে শনাক্ত হয়েছেন ১০ জন।
সূত্রাপুরে ৯ জন, মিরপুর-১, বাড্ডা ও বনানীতে ৮ জন করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মিরপুর-১০ এ শনাক্ত হয়েছেন সাতজন। বসুন্ধরা, ইস্কাটন, মিরপুর-১৪ ও শাহবাগে ছয়জন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
আদাবর, আগারগাঁও, জিগাতলা, লক্ষ্মীবাজার, নাখালপাড়া, রমনায় পাঁচজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া ঢাকার অন্যান্য অনেক এলাকায় কয়েকজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
সরকারি হিসাবে দেশে রোববার পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত হলেন ২ হাজার ৪৬৫ জন। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯১ জনের। আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন ৬৬ জন।
নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি :
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্থবির জনজীবন। চেনা নারায়ণগঞ্জ যেন অচেনা রূপে। এখানে প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। সর্বশেষ তথ্য মতে, জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পাঁচ নারীসহ ২৬ জন।
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জে প্রথম পজিটিভ রোগী শনাক্ত করা হয় ৮ মার্চ। আর জেলাতে প্রথম আক্রান্ত হয়ে মারা যান শিউলী ওরফে পুতুল নামে এক নারী। ৩০ মার্চ বন্দরের রসূলবাগ এলাকার বাসিন্দা এই নারী মারা গেলেও তার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় ২ এপ্রিল।
সর্বশেষে এই জেলায় প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয় মৃণাল ধর (৬২) নামে এক বৃদ্ধের। শহরের চাষাড়া মিশনপাড়া এলাকার বাসিন্দা এই বৃদ্ধ শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) বেলা ১১ টার দিকে নিজ বাড়িতেই চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা গেছেন। তার স্ত্রীও পজিটি। বৃদ্ধের সৎকার শেষে আক্রান্ত মাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছেন ছেলে।
৪ এপ্রিল ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান সদর উপজেলার কাশিপুর বড় আমবাগান এলাকার হোসেয়ারী ব্যবসায়ী হাজী আবু সাঈদ (৫৫) নামে এক ব্যক্তি। তিনি চিকিৎসাধিন অবস্থায় এদিন রাতে মারা যান। একইদিন রাতে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় শহরের দেওভোগ আখড়ার মোড় এলাকার চিত্তরঞ্জন ঘোষ (৫৮) নামে এক ব্যক্তি মারা যান।
অন্যদিকে শহরের জামতলা হাজী ব্রাদার্স রোড এলাকার বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন (৬০) নামে এক ব্যক্তি ৫ এপ্রিল বিকেলের দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এছাড়া ৬ এপ্রিল দুপুরের দিকে ফতুল্লার বাসিন্দা ও শহরের নয়ন সুপার মার্কেটের ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ (৫৫) নামে এক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এদিন দিবাগত রাতে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান শহরের বঙ্গবন্ধু রোডের মাসুদা প্লাজার মালিক চৌধুরী মাহমুদ হাসান (৬০) নামে এক ব্যক্তি। তবে, তার মৃত্যুর পরদিন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এছাড়াও একই দিন রাতে শহরের দেওভোগ কৃষ্ণচূড়া মোড়ের খায়ারুল আলম হিরু (৩০) নামে এক গিটারিস্ট মারা গেছেন। তার মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহে করোনা পজিটিভ আসে।
অন্যদিকে ৮ এপ্রিল দুপুরের দিকে আদমজী শ্রমিকলীগের সহসভাপতি মজিবুর রহমান প্রধান (৬৫) নামে এক নেতা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধিন ছিলেন।
৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা ও ডাইং ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন বেপারী (৭০) নামে এক বৃদ্ধ মারা যান। তিনি উত্তরার রিজেন্ট নামক একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান। তিনি সস্তাপুর এলাকার মৃত চাঁন বেপারীর ছেলে।
১১ এপ্রিল ঢাকার কুয়েত-মৈত্রি হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান শহরের দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার মনির (৬৫) নামে এক ব্যক্তি। তিনি করোনাভাইরাস পজিটিভ ছিলেন।
১২ এপ্রিল কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সদর উপজেলার বাসিন্দা বেলায়েত (৪০)। একই দিন রাত সাড়ে ৯ টার দিকে একই হাসপাতালে মারা গেছেন ফতুল্লা ইসদাইর এলাকায় রহিমা বেগম (৫৫) নামে এক নারী। তিনি ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মী সুলতানের স্ত্রী।
এছাড়া ১২ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মাজেদা বেগম (৮৫) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পূর্বপাড়া এলাকার আয়নাল হকের স্ত্রী।
১৩ এপ্রিল দুপুরের দিকে শাহিদা বেগম (৫০) নামে এক নারী ঢাকা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। তিনি ফতুল্লা ধর্মগঞ্জ মাওলা বাজার এলাকার বাসিন্দা।
১৪ এপ্রিল দিবাগত রাতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোস্তফা সরকার আরিফ (৬০) নামে এক বৃদ্ধ মারা যান। তিনি বন্দর উপজেলার দড়ি সোনাকান্দা এলাকার বাসিন্দা।
১৫ এপ্রিল রাতে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ষাটোর্ধ্ব কোহিনূর বেগম। তিনি নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের গাইনি ডাক্তার মিনারা সিকদারের মা এব খানপুরের বাসিন্দা। এছাড়াও একইদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাহবুব রহমান বাবু (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের পশ্চিম মাসদাইর এলাকার বাসিন্দা। অন্যদিকে একই তারিখে বন্দরে সিএসডির (খাদ্যগুদাম) নিরাপত্তা প্রহরী মো. সুরুজ মিয়া (৫৫) ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি বন্দর একরামপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
১৬ এপ্রিল সকালের দিকে হরিহর সরকার (৫৬) নামে এক ব্যক্তি করোনায় মারা যান। তিনি সিটি ১৪নং ওয়ার্ডের দেওভোগ আখড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া শহরের চাষাড়ার ল্যাব এইডের উল্টো পার্শ্বের সাবিত্রী ফার্মার মালিক কালি প্রসাদ দাস নামে এক যুবক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মৃত্যুর পাঁচদিন পর বৃহস্পতিবার তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
১৮ এপ্রিল মারা গেছে ফতুল্লা পুজা উদযাপন কমিটির সেক্রেটারি অরুন দাস এবং দুদু মিয়া।