করোনা মোকাবেলায় ৩০ দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জরুরি বৈঠক

801
  • ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় 
  • মানিকগঞ্জে হোম কোয়ারেনন্টানে ৫৯ জন

মিরর বাংলাদেশ: করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ৩০ দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীস্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের ৩০টি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে করোনাভাইরাস নিয়ে ওই বৈঠকে আমেরিকা,চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইটালি, ইরান, ভারতের রাষ্ট্রদূতসহ মোট ৩০ জন রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা ভাইরাসের ফলে বর্তমান সময়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। করোনা ভাইরাসের ফলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ও পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রেখে এই ভাইরাস মোকাবেলায় একযোগে কাজ করার কথা তুলে ধরেন তিনি।

এছাড়াও বৈঠকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ তাদের নিজ নিজ দেশের করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার এসময় করোনা ভাইরাসে তার দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে পারস্পরিক যোগাযোগ ব্যাবস্থা প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। আমেরিকার রাষ্ট্রদূত এসময় বাংলাদেশ সরকারকে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আগামী দুই দিনের মধ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদানেরও আশ্বাস দেন।

চীন, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালিসহ আক্রান্ত অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা আদান প্রদানে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে রাষ্ট্রদূতরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে উপস্থিত সবাইকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে বলে জানান। বিদেশি কূটনীতিক ও পর্যটকদের সঙ্গে করোনা ভাইরাস নিয়ে কোথায় কিভাবে যোগাযোগ করতে হবে সে বিষয়েও মন্ত্রী সভায় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

সভায় উপস্থিত সকল রাষ্ট্রদূত এসময় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ও একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে অর্থ বিভাগ। শিগগিরই এই বরাদ্দ দেয়া হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের উপসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ  বলেন, টাকা বরাদ্দের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। তবে শিগগিরই বরাদ্দ দেয়া হবে।

একই কথা বলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সুশীল কুমার পাল। তিনি বলেন, এখনও বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তবে আশা করছি শিগগিরই বরাদ্দ পাব।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গত ৫ মার্চ ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সুশীল কুমার পাল স্বাক্ষরিত চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ‘কোভিড-১৯’ এর চিকিৎসার নিমিত্তে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জেলা/উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা করে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

“কোভিড-১৯’ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখতে হয়। এ জন্য সিসিইউ, আইসিইউ, আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু, সহায়ক স্বাস্থ্যসেবা (সাপোর্ট কেয়ার), করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য কীট এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সব জেলা বা জেনারেল হাসপাতালসহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের জন্য চিকিৎসা সুবিধা স্থাপন/সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবালয় অংশে সাধারণ থোক বরাদ্দ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন।’

“এ অবস্থায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও ‘কোভিড-১৯’ এ আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা সুবিধা স্থাপন বা সম্প্রসারণের জন্য অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিক খাত থেকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো,’- বলা হয় চিঠিতে।

এদিকে মানিকগঞ্জে করোনাভাইরাসের বাড়তি সতর্কতার জন্য বিদেশ ফেরত ৫৯ জন ব্যক্তিকে নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার (১০ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত ইতালি, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মানিকগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় ৫৯ জন ব্যক্তি বাড়ি ফিরেছেন। তাদের মধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় চারজন নারীসহ ৩২ জন, সাটুরিয়া উপজেলায় ১৮, শিবালয়ে ছয়, দৌলতপুরে দুজন এবং সিংগাইর উপজেলায় একজন রয়েছেন। বিদেশ ফেরত ওই ব্যক্তিদের নিজ নিজ বাড়িতে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় (কোয়ারেন্টাইন) রাখা হয়েছে। যাতে তারা বাইরে অবাধে চলাফেরা না করেন এজন্য নিষেধ করা হয়েছে। তবে তারা সবাই সুস্থ আছেন এবং শারীরিক কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। ওই সব ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস জানান, বিদেশ ফেরত ওই সব ব্যক্তি ও পরিবারের কাউকে আপাতত বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। তাদের কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতাল কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে।

এদিকে মানিকগঞ্জে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে মঙ্গলবার জেলা সদর হাসপাতালে ১২ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট চালু করা হয়েছে। হাসপাতালের পুরোনো ভবনের দোতলায় একটি বড় আয়তনের কক্ষে এ ইউনিট খোলা হয়।

হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) সাকিনা আনোয়ারকে প্রধান করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আইসোলেশন ইউনিটের রোগীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠাবে।

উল্লেখ্য, করোনায় আক্রান্ত ইতালিফেরত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসায় ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জে ৪০ জন ও মাদারীপুরে ২৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।