মিরর বাংলাদেশ : কারো হাতে ছিল সন্তানের আবার কারো হাতে ছিল স্বামী স্বজনদের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের ছবি। যা দেখে গা শিউরে উঠছিল প্রত্যক্ষদর্শীদের।
নির্যাতনের শিকার এক আওয়ামী লীগ নেতা দাঁড়িয়েছিলেন নিজের রক্তাক্ত জামা নিয়ে। পঙ্গুত্ব বরণ করা আওয়ামী লীগের একজন কর্মীও দাঁড়িয়েছিলেন মানববন্ধনে।
শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়ায় মানববন্ধন করেছেন রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি গোলাম রসুল কলি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার ৭৩টি পরিবারের সদস্যরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, শুধু সাধারণ মানুষই নয় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত নির্যাতনের শিকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পরে গোলাম রসুল কলি বাহিনীর বিচারের দাবিতে মিছিল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
মানববন্ধনের অংশ নিয়ে কাঞ্চন পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি আয়ুবুর রহমান খোকা জানান, আমার বড় চাচা মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান মোল্লার ছেলে রূপগঞ্জ গ্রাজুয়েট এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি এবং পায়রা টাওয়ারের স্বপ্নদ্রষ্টা শফিকুল রহমান মোল্লাকে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলি ও তার সহযোগিরা কুপিয়ে জখম করে। এ সময় আশপাশের লোকজন ছুটে এলেও সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ভয়ে কেউ সামনে যায়নি। একপর্যায়ে হামলাকারীরা শফিকুলকে মৃত ভেবে চলে গেলে স্থাণীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমরা আদালতে মামলা দায়ের করতে গেলেও সেই মামলা নেয়া হয়নি।
তিনি জানান, কলি বাহিনীর অন্যতম সন্ত্রাসী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল। কাঞ্চনে কলি বাহিনী এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে হামলা চালায়। এ পর্যন্ত কলি বাহিনী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ৭৩ জনের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। তারা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নির্যাতনের শিকার সাধারণ মানুষ মামলা দায়ের করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়না। কলি বাহিনী স্থানীয় থানা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও কারো কথার মূল্যায়ন করে না। মন্ত্রী মহোদয়েরও কথা শোনে না। স্থানীয় কিছু ভূমিদস্যু গ্রুপ ও বিএনপির ক্যাডারদের নিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এ বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
কাঞ্চন ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গোলাম রসুল কলি আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার মাথায় ও হাতে পায়ে কুপিয়ে জখম করে। আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেও কেন হামলার শিকার হলাম এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই।
পঙ্গুত্ববরণকারী একজন আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। গোলাম রসুল কলি বাহিনীর হামলায় তিনি পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। তিনি মামলা দায়ের করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি।
নির্যাতনের শিকার হাজেরা বেগম বলেন, তার ছেলেকে গোলাম রসুল কলি নির্যাতন করার পাশাপাশি সাথ থেকে আটটি মিথ্যা মামলায়ও ফাঁসিয়েছে।
আসমা নামে অপর এক নারী বলেন, কলি বাহিনীর হামলার শিকার হয়ে তার স্বামী পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।
এদিকে স্মারকলিপিতে কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি গোলাম রসুল কলিকে চোরাই ও অবৈধ গ্যাস লাইনের মূল হোতা, মাদক ব্যবসা, ভূমিদস্যুতা, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ তুলে ধরেন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা।