জানা যায়, আবারও বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে কয়রা ও ডুমুরিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। স্থানীয় মানুষের দেওয়া রিংবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ভেঙে যাচ্ছে বাঁধগুলো। কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ও কয়রা সদর ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। নুতন করে পানি ওঠায় দুর্ভোগের সীমা নেই এ এলাকার মানুষের। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন কর্মকর্তা পরিদর্শনেও আসছে না।
এদিকে ডুমুরিয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়ীবাঁধ না থাকায় বাঁশতলা-লতাবুনিয়া গ্রাম দু’টি ফের প্লাবিত হয়েছে। এতে এলাকাবাসীর মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে। মাত্র ১৬দিন আগে আম্পানের প্রভাবে গ্রামরক্ষা বাঁধ ভেঙে ঘেংরাইল নদীর পানিতে সম্পূর্ণভাবে নিম্মজিত হয় গ্রাম দু’টি। জীবন বাঁচাতে বানভাসিদের আশ্রয় মেলে স্কুল বারান্দায়। খেয়ে না খেয়ে দিন যায় তাদের। এক পর্যায়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি মেরামত করা হয়। কিন্তু গত বুধবার মধ্যরাতে সর্বনাশা ঘেংরাইল নদীর পানির চাপে আবারো সেখানে ভেঙে এলাকাটি প্লাবিত হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে কয়রা উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের, ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাটির তৈরি ঘরগুলো ধসে পড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো ভূমিকা না থাকায় দুর্ভোগে পড়া মানুষ নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করে পানি আটকায়।
গেল দুই সপ্তাহ ধরে ভাঙনের সবকয়টি স্থান মেরামত করে স্থানীয় লোকজন। তবে বুধবার রাতে সেসব বাঁধ আবারও ভেঙে তলিয়ে যায়। স্থানীয়দের দাবি এসব বাঁধ রক্ষনাবেক্ষন প্রয়োজন ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড সেটি না করায় বারবার ভেঙে যাচ্ছে। উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাজীপাড়া এবং কয়রা সদরের ঘাটাখালী এলাকার বাঁধ ভেঙে আবারও প্লাবিত হয়েছে। বুধবার রাত থেকে পানি ঢুকে সব এলাকা আবারও প্লাবিত হয়েছে।
কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষদের সাথে নিয়ে আমরা বাঁধ দিয়ে পানি আটকে ছিলাম। এরপর সেগুলো রক্ষাণাবেক্ষণের প্রয়োজন ছিল। এ কাজটি করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের আমরা অনুরোধ করেছিলাম। তবে তারা সেটি না করায় আবারও ভেঙে পানি ঢুকছে এলাকায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে মানুষকে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়তে হবে। তিনি বলেন, একদিকে মানুষের খাবারের জন্য কষ্ট অন্যদিকে পানির কারণে ভোগান্তির শেষ নেই। স্বেচ্ছাশ্রমে গরীব মানুষ আর কতদিন কাজ করতে পারে।
স্থানীয় মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উত্তর বেদকাশির গাজীপাড়া, দীঘিরপাড়, বড়বাড়ি, কয়রার গোবরা, ঘাটাখালী, ২ নং কয়রাসহ বেশ কিছু গ্রামের মানুষ রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বাড়িঘর সব পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রথম দফায় বাঁধ দেওয়ার পর মানুষ মনে করেছিল লবণপানি আর ঢুকবে না লোকালয়ে। তবে সে আশা টেকেনি।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, নতুন করে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদের এখনও পানি থই থই করছে। একদিকে খাবার সংকট অন্যদিকে লবণ পানির চাপ। মানুষ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। মানুষ বাঁধ দিয়ে স্বস্তিতে ছিল। তবে জোয়ারে পানির চাপে সব বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের কষ্ট বিফলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন রকমের তদারকি করছে না। অন্যথায় এ বাঁধ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো। তিনি অবিলম্বে বাঁধ মেরামত পাউবো কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করেন।
কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহা. হুমায়ুন কবির জানান, স্থানীয় মানুষ পানি আটকানোর জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করছে। পাউবো কর্তৃপক্ষ একটু সহযোগিতা করলে এ বাঁধ টেকানো সম্ভব হতো। তবে তাদের উদাসীনতার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে উত্তর বেদকাশী ও কয়রার বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে মানুষ।
ডুমুরিয়ায় বাঁধভাঙা পানিতে ফের বাঁশতলা-লতাবুনিয়া গ্রাম প্লাবিত : ডুমুরিয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ না থাকায় বাঁশতলা-লতাবুনিয়া গ্রাম দু’টি ফের প্লাবিত হয়েছে।
জানা যায়, ডুমুরিয়ায় উপজেলার সাহস ইউনিয়নাধীন ঘেংরাইল ও ভদ্রা নদীর মধ্যবর্তী একটি দ্বীপে অবস্থিত বাশতলা ও লতাবুনিয়া গ্রাম। এখানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় গ্রাম দু’টি বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ। নড়বড়ে রিং বাঁধের কারণে বারবারই ভাঙনের কবলে পড়ছে। গত ২০ মে ঘূর্ণিঘড় আম্পানের প্রভাবে ঘেংরাইল নদীর পানির চাপে রক্ষাবাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে গ্রাম দু’টি প্লাবিত হয়। এরপর উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় বানভাসি প্রায় ৪শ’ পরিবার আশ্রয় নেয় লতাবুনিয়া স্কুলসহ বিভিন্ন জায়গায়। খেয়ে না খেয়ে দিন গেলেও তারা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে বাঁধটির ক্ষতিগ্রস্ত স্থান মেরামত করে। কিন্তু চলমান পূর্ণিমার গোনে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধটি ফের ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বাঁশতলা এলাকার ডা. জোতিন্দ্র নাথ গাইন, শিক্ষক বনমালি মন্ডলসহ অনেকেই বলেন, গত পূর্ণিমার গোনে গ্রামরক্ষা বাঁধটি ভেঙে জোয়ারের পানিতে আবারও আমাদের গ্রাম দু’টি তলিয়ে গেছে। এখনও আমরা বাড়ি ঘরে ফিরতে পারেনি। এতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় এমপি নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত স্থান নদী পথে ঘুরে ঘুরে দেখেছি এবং স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করেছি। বাঁশতলা ও লতাবুনিয়া গ্রাম বাঁচাতে হলে টেকসই বেড়িবাঁধের একান্ত প্রয়োজন। এমপি আরো বলেন, এই মুহূর্তে জরুরিভাবে এডিপিসহ উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ বরাদ্দে এবং এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে আবারো বাঁধ মেরামত করতে হবে। পরবর্তিতে এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার আশ্বস্ত করেন তিনি।