: সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি :
৫ মে মঙ্গলবার। সমগ্র বিশ্বে করোনাভাইরাসে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। বাংলাদেশও থেমে নেই। এরই মধ্যে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আমার নারায়ণগঞ্জ জেলা। অনেকের মতে- নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি বাসিন্দাকে টেস্ট করলে করোনা পজেটিভ আসবে ৯০% মানুষেরই এবং যত কম টেস্ট, তত কম শনাক্ত। তবে এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই এখানকার কিছু মানবিক মানুষ নিজেদের জীবনকে ঝুঁকিতে রেখেই অসহায় মানুষদের জন্য যেভাবে দিনরাত কাজ করে চলেছেন তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। করোনার ভয়ে যেখানে মানুষ লকডাউনে নিজেরা ঘরে থেকে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় মগ্ন, সেখানে কেউ কেউ নিজেদের জীবন বাজি রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌছে দিয়ে তাদের প্রাণ বাঁচাতেই জীবনের পূর্ণতা খুঁজে নিচ্ছেন। গতকাল রাতে খবর পাবার পর আজ বিকেলেই ইফতারের ঠিক আগ মুহুর্তে ২৫টি মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ফটোসেশনবিহীন ত্রাণ এর ব্যবস্থা করে ফিরলাম এমনই একজন মানবিক জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায়। তার পাঠানো এইসব খাদ্যসামগ্রীগুলো তার নির্বাচনী এলাকার বাইরের একটি এলাকায় পৌছে দিতে পেরে মনের ভেতরে অন্যরকম এক শান্তি অনুভব করছি। যদিও বাংলাদেশে করোনাভাইরাস এর প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই এলাকার সবার নিরাপত্তার জন্য নিজ উদ্যোগে জীবানুনাশক ছিটানো থেকে শুরু করে সমগ্র জেলার বিভিন্ন এলাকা এবং দেশের বেশ কয়েকটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে পরিচিত-অপরিচিত অসহায় মানুষদের ত্রাণ সহায়তা পৌছে দেয়ার কাজটি নিয়মিত করে যাচ্ছি। এই ক্রান্তিলগ্নে অসহায়দের কল্যােণে কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি- কিছু মানুষ বড় হয় তার ভাবে, আর কিছু মানুষ বড় হয় তার কর্মে। তবে ভাবের বড়ত্ব চিরস্থায়ী হয় না, কর্মের বড়ত্বটাই চিরস্থায়ী এবং ইহকাল- পরকালের জন্য তা সৃষ্টিকর্তার মাধ্যমে উত্তম প্রতিদান হয়ে ফিরে আসে। নিজের নির্বাচনী এলাকার বাইরে ওই এলাকার এই ২৫টি পরিবারকে আজ আমার মাধ্যমে সহযোগিতা পাঠালেন অন্য একটি এলাকার একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। অথচ কোনো ধরনের প্রচারনা করলেন না তিনি, এমনকি ত্রাণগ্রহিতাদেরও কোনো পরিচয় জানতে চাইলেন না। এরা কিন্তু তাঁকে আগামীতে ভোট দিতে পারবে না, তাকে রাজনৈতিক সাপোর্টও করতে পারবে না, শুধু অদেখা মানুষটির জন্য তারা প্রাণভরে দোয়া করতে পারবে৷ অদেখা বলছি এই জন্য যে সেই মানবিক মানুষটি তার ত্রাণের ব্যাগগুলোতেও তার নিজের প্রচারণার জন্য কোনো ধরনের লিফলেটটি পর্যন্ত ব্যবহার করেন নি। শুধু নাম প্রচারের জন্য এক কেজি দুই কেজি নয়, বরং প্রতিটি প্যাকেটে ১০ কেজি করে চাল থেকে শুরু করে পরিবারগুলোর যেনো অন্তত আগামী মাসখানেক কারও কাছে পাতা না লাগে তেমনভাবেই পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন তিনি। এভাবে এই পর্যন্ত নিজের এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় তিনি ঘরে ঘরে তিনি নিরবে নিভৃতে ত্রাণ পৌছে দিয়েছেন। অসাধারণ এক ব্যক্তিত্বের অধিকারী এ মানুষটি আমার দেখা হাতেগুণা ১/২ জন সেরা মানুষের মধ্যে অন্যতম। কেউ না খেয়ে আছে, কারও ঘরে খাবার নেই- এই কথাটি শোনার পরেই এই মানুষটি কোনোদিন এলাকাগত দুরত্বের হিসেব করেন নি, হিসেব করেননি ধর্ম-বর্ণ তথা কোনো ধরনের অসঙ্গতির। হিংসা বা অহংকারবশত কোনোদিন বলেননি-“অপর জনপ্রতিনিধির এলাকায় আমি কেনো বিনালাভে ত্রাণ সহায়তা দিব”। যেখানে এই করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর মানুষ আগাম ভোটবাণিজ্য করে যাচ্ছেন সেইসব নির্বাচনী এলাকায় ভবিষ্যৎ ভোটারদেরকে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে, সেখানে ভোটার কিংবা এলাকাভিত্তিক চিন্তা না করে, স্থান-কাল-পাত্র চিন্তা না করে নিঃস্বার্থভাবে সকল মানুষের পাশে থাকা এমন একজন মানবিক জনপ্রতিনিধির একের পর এক মানবিক কাজগুলো সত্যিই আমাকে আবেগাপ্লুত করেছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (প্যানেল মেয়র-২) কাউন্সিলর আলহাজ্ব মতিউর রহমান মতি ভাইয়ের জন্য প্রাণভরে দোয়া করি, আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীন যেনো তাকে পরিবার পরিজন তথা চেনাজানা সবাইকে নিয়ে সব সময় হেফাজতে রাখেন। তার মতো মানবতা নিয়ে অন্যেরাও এগিয়ে আসুক এটিও প্রত্যাশা করি আমি।
লেখক : সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী