ফরিদপুরে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী জনসভা
* ৭ জানুয়ারি ভোট দিয়ে বিএনপিকে উপযুক্ত জবাব দিন
* ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত এখনো থেমে যায় নাই
মিরর বাংলাদেশ : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি জাতির পিতার কন্যা। কারও কাছে মাথা নত করি না, মাথা নত করব না। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিল গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে। আমি গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি বলে ষড়যন্ত্র করে আমাকে আসতে দেয়নি।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফরিদপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী শামীম হকের সভাপতিত্বে জনসভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুর রহমান, ফরিদপুর-২ আসনের প্রার্থী শাহাদাব আকবর লাবু চৌধুরী, মাগুরা-১ আসনের প্রার্থী সাকিব আল হাসান, রাজবাড়ী-১ আসনের প্রার্থী কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী-২ আসনের প্রার্থী ঝিল্লুল হাকিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আরিফ, পৌর মেয়র অমিতাভ বোস প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কেবল নিজে নয়, পরিবার-পরিজন নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী বিএনপি-জামায়াতকে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
ভোটারদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনার ভোট আপনি রক্ষা করবেন আর অগ্নিসন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী বিএনপি-জামায়াতকে উপযুক্ত জবাব দেবেন। ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।
নৌকার প্রার্থীদের জন্য ভোট প্রত্যাশা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা দিয়েছে। এই নৌকাই পারবে মানুষকে উন্নত জীবন দিতে, শান্তি-সমৃদ্ধি দিতে। এই নৌকায় আপনারা ভোট দিয়েছিলেন বলেই আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। নৌকায় ভোট দেবেন। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যই আজকের নির্বাচন। কাজেই এই নির্বাচনে ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ফরিদপুর, মাগুরা ও রাজবাড়ী জেলার নির্বাচনি আসনের নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, নৌকা মার্কার প্রার্থীদের আপনাদের দিয়ে গেলাম। তারা আপনাদের সেবা করবে, আসনবাসীর সেবা করবে। আপনারা তাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
ভোটারদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা ওয়াদা করেন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থীদের নির্বাচিত করবেন।
‘তরুণ সমাজ বা তারুণ্যই হচ্ছে উন্নয়নের অগ্রদূত’ উল্লেখ করে তাদের ভোট প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা। তিনি অন্যান্য নির্বাচনি জনসভার মতো প্রথমবারের মতো ভোটারদের নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে ক্রিকেট মাঠের মতো নির্বাচনেও ‘ছক্কা মেরে দিতে’ বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটা রতœ আছে। এই রতœটা ক্রিকেট রতœ। মাগুরা-১ আসনে আমরা এবার নমিনেশন দিয়েছি। সাকিব আল হাসান। সে বলেছে বক্তৃতা দিতে পারে না। আমি বলেছি বক্তৃতা দেওয়ার দরকার নাই। তুমি শুধু বলবা তুমি ছক্কা মারতে পারো, আর বল করে উইকেট ফেলে দিতে পারো, তাহলেই হবে। এইবার ইলেকশনেও ছক্কা মেরে দিও।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা জয়ী হই। আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসনে জয়লাভ করে। আর এই বিএনপি বড় বড় কথা বলে, লম্পঝম্প করে, তারা পেয়েছিল মাত্র ৩০টি সিট। যে কারণে তারা ২০১৪ তে নির্বাচন করেনি। ২০১৮ তে নির্বাচনে প্রার্থী বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য করে নিজেদের মধ্যে গোলমাল করে সরে যায়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সমর্থন নিয়ে ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১৫ বছর ক্ষমতায় আছে। আমরা ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। ৮ হাজারের ওপরে ডিজিটাল সেন্টার আজকে আমাদের দেশের মানুষকে সেবা দিচ্ছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেকটা মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে দিয়েছি। ওয়াইফাই কানেকশন দিয়ে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। এই দেশ গড়ে তুলতে হলে কাকে দরকার? আপনারা বলেন। কে ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে? একমাত্র নৌকা মার্কা, নৌকা মার্কা যদি ভোট পায়, শুধুমাত্র নৌকা মার্কা ভোট পেলেই আমি সরকারে আসতে পারব। আর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়তে পারব। বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে যাবে না।
তিনি আরও বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আছে। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেয়নি, তাদের চক্রান্ত এখনো থেমে যায় নাই। যেহেতু তারা জানে আমরা কারও কাছে মাথা নত করি না, সেজন্য চক্রান্ত আরও বেশি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করার ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। অনেককে বলতে গেলে নর্দমা থেকে টেনে তোলা হয়েছে। তাদের পয়সা বানানো, ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ দিয়েছে। মিডিয়া চালানোর সুযোগ দিয়েছি। এখন তারা টাকা ছড়ায়। তারা মনে করে টাকা দিয়েই সব কেনা যাবে। খুব ভালো কথা টাকা তারা ছড়াক। কারণ যত টাকা বানিয়েছে তা তো জনগণের হাতে যাবে। তবে একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- টাকা দিয়ে মানুষ কেনা যায় না। টাকা দিয়ে ফরিদপুরের জনগণকে কেউ কিনতে পারে নাই, পারবে না।