মিরর বাংলাদেশ : অন্তরালে থাকা উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে ঘিরে রহস্য কাটছেই না। কেউ বলছে, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত ৩৬ বছর বয়সী কিম গুরুতর অসুস্থ। কেউবা বলছে, তিনি ‘মারা গেছেন’। কোনটা সত্য আর কোনটা গুজব- তা পরিষ্কার করছে না দেশটির কর্তৃপক্ষ।
গত ১৫ এপ্রিল দাদার জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না কিম। রাষ্ট্রীয় ছুটির দিনে এ গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকায় তাকে নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়।
গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম জানায়, কিমের হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার হয়েছে বা তিনি করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য আইসোলেশনে রয়েছেন। তবে উত্তর কোরিয়ায় সন্দেহজনক কোনো কর্মকান্ড নজরে আসেনি বলেও জানান দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা।
লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক খবরে জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার একত্রীকরণ মন্ত্রী কিম ইয়ন চুল বলেন, ‘সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উত্তর কোরিয়ায় অস্বাভাবিক কিছু ঘটার লক্ষণ দেখা যায়নি।’
তবে কিম উনের কার্ডিওভাস্কুলার সার্জারি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার মন্ত্রী কিম ইয়ন চোল। তার দাবি, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে যে হাসপাতালের নাম বলা হয়েছে সে হাসপাতালে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের সক্ষমতাই নেই। তবে কিম জনসম্মুখে না থাকার অর্থ তিনি স্বাভাবিক ভাবে কাজ করছেন না।
‘১১ এপ্রিল থেকে তার কোনো ধরনের আইন প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। এতে আমরা আশঙ্কা করছি, তিনি হয় অসুস্থ, না হয় করোনা ভাইরাসের কারণে আইসোলেশনে রয়েছেন। তিনি মারা যাননি, বেঁচে আছেন।’
এর আগে উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী দেশটিতে নেই। তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা তাদের এ দাবি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইনের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মুন চাং ইন বলেন, ‘আমাদের সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। কিম জং উন বেঁচে আছেন এবং ভালো আছেন। ১৩ এপ্রিল থেকে তিনি ওনসানে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহজনক কর্মকান্ড চোখে পড়েনি।’
গত সপ্তাহে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, কিমের ব্যক্তিগত একটি ট্রেন ওনসানে রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার তথ্য একেবারে ভিত্তিহীন নয়।
এদিকে সংশ্লিষ্ট অন্য তিন ব্যক্তি জানান, গত সপ্তাহে কিমকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য চিকিৎসা বিশেষজ্ঞসহ একটি দল উত্তর কোরিয়ায় পাঠিয়েছে চীন। কিন্তু চীনা বিশেষজ্ঞ দল কিমকে কোন অবস্থায় পেয়েছে সে সম্পর্কে কোন খবর এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে আসেনি।
এর আগেও এভাবে আড়াল হয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী এ নেতা। ২০১৪ সালে এক মাসেরও বেশি সময়ের জন্য গায়েব হয়ে যান কিম জং উন। তখনো তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা বিভাগ জানায়, কিমের গোড়ালি থেকে একটি সিস্ট অপসারণ করা হয়েছে। এ সময় কিমকে ছড়ির সাহায্যে হাঁটতে দেখা যায়।
নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে কিমের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার কিম জং উনের শরীরের ওজন তিনশ পাউন্ডের বেশি। অত্যধিক পরিমাণে ধূমপান করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের অনেকেরই হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। ৩৬ বছর বয়সী কিম জং উনের দিনে অন্তত চার প্যাকেট সিগারেট লাগে। এর বাইরে অস্বাস্থ্যকর বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং মদ তার প্রিয়।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে ছয় বছর আগে জানানো হয়েছিল, কিম জং উনের মদ্যপানের জন্য বছরে খরচ হয় ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। শারীরিক গঠন কিছুটা ঠিক রাখার জন্য এর আগে তিনি সার্জারি করেছেন বলেও মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
২০১১ সালে কিম জং উন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার আসনে বসার আগে তার বাবা কিম জং ইল ৭০ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তার আগে কিম জং উনের দাদা কিম ইল সাং ১৯৯৪ সালে হার্ট অ্যাটাকে প্রয়াত হন। কিম জং ইল ধূমপায়ী ছিলেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন।
বিভিন্ন ধরনের মদ সংগ্রহ করে তিনি পান করতেন। ভোজন রসিক হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন। ২০০৭ সালে কিম জং ইল মারা যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় তিনি ছোট চুল নিয়ে জনসম্মুখে হাজির হন। তখন নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়, তিনি হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। বড় ধরনের কোনো সার্জারি হয়েছে।
এরপর ২০০৮ সালে কিম জং ইল স্ট্রোক করেন। চীন এবং ফ্রান্সের চিকিৎসকরা ওই সময় তার চিকিৎসা দিয়েছেন বলে দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমে দাবি করা হয়। তিন বছর পর তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তবে, গুঞ্জন রয়েছে- তিনি অনেক আগেই মারা গেছেন।
তার দাদার মতোই কিমের মৃত্যুর খবর অনেক পরে প্রকাশ করা হবে, নাকি অসুস্থতা উৎরে ফের স্বরূপে ফিরে আসবেন- সেটাই এখন দেখার জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। কারন উত্তর কোরিয়ায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় দেশটি থেকে কোনো তথ্য বের করা অত্যন্ত কঠিন।