* ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে সরাসরি নগদ অর্থ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন
মিরর বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ব্যাংকিং পরিসেবার মাধ্যমে করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে সরাসরি নগদ অর্থ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। একই সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং/অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্বলিত বোতাম টিপে স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
প্রধানমন্ত্রী এসময় বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অসহায়দের সহযোগিতায় আরও বেশি করে এগিয়ে আসুন।তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আবারও আহ্বান জানান, নিজ নিজ এলাকার অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে এবং ধান কাটায় অংশ নিয়ে কৃষকদের কষ্ট লাঘব করতে। সব ধরনের পতিত জমিতে যে কোনও ধরনের ফসল ফলানোর উদ্যোগ নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, কোনও মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়। সরকার সেই চেষ্টা করছে। আপনারা মনোবল শক্ত করে যে কোনও কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে অনেক বড় পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই পরিকল্পনা সীমিত করা হয়েছে।এই পরিকল্পনার যেসব খাতে অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব তা করে সেই অর্থ অসহায়দের সহায্যে কাজে লাগানো হবে।
সারাদেশে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা নগদ সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। বিকাশ, রকেট, নগদ ও সিওর ক্যাশের মতো মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে সাড়ে ১২শ’ কোটি টাকার তহবিল বিতরণ করা হবে। প্রতি পরিবারে ধরা হয়েছে চার জন সদস্য, সেই হিসাবে এই নগদ সহায়তায় উপকার ভোগী হবে দুই কোটি মানুষ। প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষ নগদ সহায়তা পাবেন এবং পুরো তহবিল ১৪ থেকে ১৮ মে’র মধ্যে বিতরণ করা হবে।
জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, সদস্য, শিক্ষক, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এই সহায়তাপ্রাপ্তদের তালিকা তৈরি করেছেন। ভাতা পাওয়ার তালিকায় আছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও হকারসহ নিম্ন আয়ের নানা পেশার মানুষ।
তালিকাভুক্তদের মধ্যে নগদ, বিকাশ, রকেট, এবং শিউরক্যাশ এর মাধ্যমে সরাসরি চলে যাবে এই টাকা, ফলে বাড়তি কোনও ঝামেলা পোহাতে হবে না তাদের। টাকা পাঠানোর খরচ সরকার বহন করবে। এই টাকা উত্তোলন করতে ভাতাভোগীদের কোনও খরচ দিতে হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন,সরকারি নিষেধাজ্ঞার শিথিলতার জন্য হয়তো সংক্রমণ একটু বেড়ে গেছে। তবে আশা করি এটাও আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো। উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা এটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। তবুও দেশের জনগণকে বলবো আর একটু নিজেরা সুরক্ষিত থাকেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই দোয়া করেন যেন আমরা এই অবস্থা থেকে দ্রæত বেরিয়ে আসতে পারি। এটা বলবো না সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকেন। কেননা আপনাদের কিন্তু ওক্সিজেন নিতে হবে নিঃশ্বাস নিতে হবে। কারও সঙ্গে কথা বলার সময় বা যখন জনসমাগমে যাবেন বা বাজারঘাটে যাবেন তখন পরবেন। যখন এমনি থাকেন তখন কিন্তু এটা পরবেন না। এটা কিন্তু অনেক সময় ভালোর চেয়ে ক্ষতিও করে। এমন মাস্ক পরতে হবে যাতে সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যায় সেটা। এন৯৫ মাস্ক কিন্তু সাধারণ মানুষের পরার জন্য না। এটা যারা ডাক্তার, নার্স বা যারা কোভিড রোগীর সেবা দেবে তাদের জন্য। এটা সাধারণ মানুষের পড়ার দরকার নাই বা যৌক্তিকতাও নাই। ঘরে তৈরি করেও মাস্ক পরা যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই রমজান মাসে সবাই মসজিদে যায়। তারাবি নামাজ পড়ানোয় মসজিদে ইমাম-মোয়াজ্জিনদের ভালো আয় হয়। কিন্তু এবার সেটা হচ্ছে না। যদিও যারা মসজিদ কমিটিতে আছেন তারা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন, বিত্তশালীরা দান করে যাচ্ছেন। এরপরও আমি মনে করি আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। সব মসজিদে ঈদ-রমজান উপলক্ষে আমি কিছু আর্থিক সহায়তা দেবো। সেই তালিকাটাও আমরা করে দিচ্ছি।’
ঈদের আগে আরও সাত হাজার কওমী মাদ্রাসাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন কওমী মাদ্রাসায় সহায়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রায় ছয় হাজার ৮৬৫টি কওমী মাদ্রাসায় আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। প্রায় ১০ কোটি টাকা আমরা ব্যয় করেছি। কোন মাদ্রাসায় কতজন এতিম আছে আমরা হিসাব নিয়েছি। সে হিসাব অনুযায়ী প্রত্যেক মাদ্রাসায় আমরা টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও সাত হাজার কওমী মাদ্রাসাকে ঈদের আগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় যারা এতিম-অসহায় যারাই আছে কোনও শ্রেণিই যেন অবহেলিত না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
করোনা সংকটের কারণে নতুন একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রবাসী, কর্মহীন ও গ্রামের দরিদ্র মানুষকে ঋণ সহায়তা যোগাতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনকে ৫০০ কোটি করে মোট দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে এটি হতে যাচ্ছে সরকারের ঘোষিত ১৮তম প্রণোদনা প্যাকেজ। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে মোট এক লাখ এক হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হলো, যা দেশের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।