খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ চান নেতারা, আজ শেষ হচ্ছে হোম কোয়ারান্টাইন

671

 মিরর বাংলাদেশ :  করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিতে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ১৪ দিন পূর্ণ হবে বুধবার (৮ এপ্রিল)। তার শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি না হলেও মানসিকভাবে আগের তুলনায় ভালো আছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। এদিকে কোয়ারেন্টিনে থাকার কারণে মুক্তির পর দলের অনেক নেতাই চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। এ অবস্থায় কোয়ারেন্টিন মেয়াদ শেষ হলে সীমিত পরিসরে তার সঙ্গে দেখা করতে চান দলের সিনিয়র নেতারা। যদিও তারা বলছেন, এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে খালেদা জিয়ার ইচ্ছার ওপর। তিনি এবং তার ব্যক্তিগত ডাক্তারদের অনুমতি পেলেই তারা দেখা করতে যাবেন।

গত ২৫ মার্চ বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ওঠেন। ২৬ মার্চ থেকে তার হোম কোয়ারেন্টিন শুরু হয়। সেই হিসাবে ৮ এপ্রিল (বুধবার) ১৪ দিন পূর্ণ হবে।

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আছে। এখনও তিনি হুইল চেয়ারে চলাফেরা করছেন। নতুন করে কোনও রোগ হয়নি। তবে পারিবারিক পরিবেশে থাকার কারণে দিন দিন মানসিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। খাবারের প্রতি রুচিও কিছুটা বেড়েছে। বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়েদা রহমানের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে। তিনি কোয়ারেন্টিনে থাকার কারণে শুধু নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বোন সেলিমা ইসলাম এবং ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা এবং ব্যক্তিগত ডাক্তাররা তাকে দেখতে গেছেন।

খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বুধবার খালেদা জিয়ার কোয়ারেন্টিন শেষ হবে। তার শরীরের অবস্থা ভালো না। এখনও দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারছেন না। এক কথায় তার শরীরের অবস্থা আগের মতোই আছে। তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। তবে মানসিক অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো।
তিনি আরও বলেন, তার চিকিৎসা চলছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে পরবর্তীতে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার পক্ষে এখন কোথাও মুভ করা সম্ভব নয়।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সদস্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ডা. জোবায়েদা রহমানের তত্ত্বাবধায়নে ম্যাডামের চিকিৎসা চলছে। তার আগের চিকিৎসার সঙ্গে মিল রেখে কিছুটা পরিবর্তন করে নতুন চিকিৎসা হচ্ছে। আগে তো তার নিয়মিত ফলোআপ হতো না, এখন সেটা নিয়মিত হচ্ছে। দুই বছরের বেশি সময় তিনি অসুস্থ, সেখানে থেকে পরিবর্তনের জন্য তার আধুনিক চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে বর্তমানে সামগ্রিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমরা তার চিকিৎসা শুরু করেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার একজন চিকিৎসক বলেন, সবার আগে খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যাবে। আর বাসায় চাইলেও তাকে সর্বোচ্চ আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। আবার এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে তাকে হাসপাতালে নেওয়াও সম্ভব না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা বলছেন, আমরা নিজেরাও সবাই এখন স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টিনে আছি। তারপরও খালেদা জিয়ার হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হলে সীমিত পরিসরে তার সঙ্গে দেখা করতে যাবো। যদিও এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে ম্যাডামের ইচ্ছার ওপর। আগামী শনিবার (১১ এপ্রিল) দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হলে সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। কারণ, খালেদা জিয়া এখনও পুরোপুরি পরিবারের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। সেখানে দল কীভাবে তার চিকিৎসা বা অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারে সেটারও চিন্তাভাবনার দরকার আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ম্যাডাম খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতা এখন সবার আগে। এরপর অন্য কিছু দেখা যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ম্যাডামের মুক্তির পর আমরা কয়েকজন তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। স্থায়ী কমিটির কয়েকজন এখনও তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। স্বাভাবিকভাবে তার হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হলে আমরা দেখতে যেতে পারি। তবে তিনি বা ডাক্তাররা এ বিষয়ে কী বলেন তার ওপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এই নেতা আরও বলেন, ম্যাডাম মুক্তি পেয়েছে এতেই খুশি। কারণ, তিনি কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে। অনেক সময় তাদের ঘিরেই দলের রাজনীতি চলতে থাকে। এখন কিছুটা হলেও সেই অবস্থার পরিবর্তন হবে।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের নেতাদের সাক্ষাতের বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। কারণ, এ নিয়ে তার সঙ্গে আমার কোনও আলাপ হয়নি।’

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সূত্রের ভাষ্য, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে খালেদা জিয়ার এভাবে মুক্তিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতা অসন্তুষ্ট। কিন্তু এখানে বিএনপির কিছু করার নেই। কারণ, তার মুক্তির বিষয়ে পরিবার সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেছে, এখানে দলের কোনও ভূমিকা ছিল না।