খালেদা জিয়া ভোটচোর হিসেবে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল : প্রধানমন্ত্রী

237

গনভবনে আওয়ামীলীগের বিশেষ বর্ধিত সভা

*  নির্বাচনের বিষয়ে জনগণের প্রতিই আওয়ামী লীগ দায়বদ্ধ
*  ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করতে আওয়ামী লীগই সংগ্রাম করেছে
* বিএনপির ‘দুর্নীতি ও দুঃশাসনের ফলে’ দেশে সামরিক শাসন জারি হয়েছিল

মিরর বাংলাদেশ  : ওয়ান-ইলেভেন সৃষ্টির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তত্তাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়, যা বাংলাদেশে ‘ওয়ান-ইলেভেন’ নামে পরিচিত। রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় সেনা সমর্থিত তত্বধায়ক সরকার। সেদিন বিকেলে জরুরি অবস্থা জারির পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্তবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। তিনি বলেন, বিএনপির দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণেই দেশে ওয়ান-ইলেভেন হয়েছিল। খালেদা জিয়া ভোটচোর হিসেবে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।
গতকাল রোববার সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতির প্রারম্ভিক বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের প্রায় তিন হাজার নেতা এবং জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে গনভবনে এই বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা সভায় যোগ দিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় সংসদের দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও সভায় উপস্থিত রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোটচুরি করলে দেশের মানুষ মেনে নেয় না বলেই খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। জনগণই ভোটের মালিক। আওয়ামী লীগকে ভোট দিলেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে চলতে পারবে দেশের মানুষ। আওয়ামী লীগের কোনো প্রভু নেই। জনগণই আওয়ামী লীগের প্রভু। নির্বাচনের বিষয়ে জনগণের প্রতিই আওয়ামী লীগ দায়বদ্ধ।
তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে একমাত্র আওয়ামী লীগই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। বিএনপির হাতে দেশ ও দেশের মানুষ নিরাপদ নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান- সবাই খুনি।
২০০১ সালের নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের কারণে আওয়ামী লীগ হেরেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় এবং দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্তের কারণে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
অর্থনীতিবিদদের কাছে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেই দারিদ্র্য বিমোচন ১৮ শতাংশের নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। আগে কেন ১৮ শতাংশে দারিদ্র্যের হার আসেনি? আমি অর্থনীতিবিদদের কাছে জিজ্ঞাসা করবো, তারা কোন অংকে এসব করেন? ২০০৯ সালের আগে কি এনজিও ঋণের কারণে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে? হয়নি। আওয়ামী লীগের প্রতিটি পদক্ষেপেই কর্মমুখী।
২০০৯ সালের আগে দারিদ্র্যতার হার ৪১ শতাংশ ছিল। সেখান থেকে আমরা কমিয়ে ১৮ তে নিয়ে এসেছি। একটি পত্রিকায় অর্থনীতিবিদদের আর্টিকেল পরলাম। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের দারিদ্র্যতার হার কমেছেÍ শুধু নাকি দুটি ক্ষুদ্রঋণের প্রতিষ্ঠানের কারণে। সে ভদ্রলোকের নাম আমি বলবো না, আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই যে, যদি এনজিওদের ক্ষুদ্রঋণে দারিদ্র্য বিমোচন হয়ে থাকে তাহলে আগে কেন হলো না?
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সালে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ। জনগণ চাইলে দেশ এগিয়ে যাবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে।’
বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ কী চায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাক? বাংলাদেশের জনগণই ভোটের মালিক। তারা যদি চায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, তাহলে আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণই ভোটের মালিক, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে চলতে পারবে দেশের মানুষ।’
জেলা ও উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের পদচারণায় গণভবন প্রাঙ্গণ আজ ধন্য। অনেক দিন পর আপনাদের সঙ্গে কথা বলার একটা সুযোগ হলো।’
বিএনপির ‘দুর্নীতি ও দুঃশাসনের ফলে’ দেশে সামরিক শাসন জারি হয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করতে আওয়ামী লীগই সংগ্রাম করেছে।’
স্বাধীনতার পরে একটি ‘চক্রান্ত’ শুরু হয়েছিল মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘সেই চক্রান্তে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের হত্যা করা হয়। ২১ বছর আমাদের শুধু আহতদের চিকিৎসা ও লাশ টানতে হয়েছে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। মানসিক শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি।’তিনি আরও বলেন, ‘পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছি বলে সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।’
‘দুটি ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের কারণে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে’, এমন একটি লেখার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে এনজিও অনেক কাজ করেছে। তবে দুটি এনজিও’র কারণে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে, এটি সত্য নয়। এনজিও’র কারণে দারিদ্র্য বিমোচন হলে এতদিন হলো না কেন? উচ্চ হারের সুদে দারিদ্র্য বিমোচন হয় না। বরং তাদের ঋণের কারণে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে বাধ্য হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া সবাই খুনি। এই খুনিদের হাতে এ দেশ ও দেশের মানুষ নিরাপদ নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণের পাশে থাকে। জনগণ উপকৃত হয়।