* ভিন দেশে বসে উস্কানি দিচ্ছে হাসিনা
* ঘাপটি মেরে থাকা দোসররা সক্রিয়
মিরর বাংলাদেশ : দেশে বর্রব গণহত্যা চালিয়ে গেলো বছর ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগষ্ট বিদায় নেয়া ফ্যাসিবাদ আওয়ামীলীগ নুতন করে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে । ভারতে বসে এদেশে ঘাপটি মেরে থাকা দোসরদের বিভিন্ন ভাবে উস্কানি দিচ্ছে। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নামে চালাচ্ছে প্রোপাগান্ডা।
অপরদিকে ফাসিবাদী দল আওয়ামীলীগের ফেসবুক পেজ থেকে গোপন কর্মসূচি ঘোষণার নামে অস্থিরতা তৈরী করার চেস্টা করছে। এর আগে কয়েকটি কর্মসূচি ঘোষণা করলেও তা বাস্তবায়ন তো দুরের কথা মাঠে দেখা যায়নি। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি জুড়ে ফেসবুকে হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এসব কর্মসূচি ঘিরে মাঠে নামলে ব্যবস্থা নেবে বলে পুলিশ ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি মাঠে থাকবে ছাত্রজনতা।
জানা গেছে, গেলো বছর জুলাই আগষ্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন দমনে ভয়াবহ গনহত্যা চালায় আওয়ামীলীগ। দলীয় ক্যাডার এবং বিভিন্ন বাহিনীর নৃশংসতার শিকার হয়ে প্রাণ হারায় শত শত মানুষ। অনেকে চিরতর পঙ্গু হয়ে যায়। অনেকে বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গ হারায়। আওয়ামীলীগের বর্রবরতার প্রতিরোধ গড়ে তোলে ছাত্র জনতা। একপর্যায়ে ৫ আগস্ট গনঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় আওয়ামীলীগের প্রধান শেখ হাসিনা। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আওয়ামীলীগের অনেক রাঘব বোয়াল দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। অনেকে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে চলে যায়। অনেকে ঘাপটি মেরে আত্মগোপনে চলে যায়।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৬ মাসের মাথায় নুতন করে উকি মারছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ। দেশের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার টানানোসহ ঝটিকা মিছিলা করে। দেশে ঘাপটি মেরে থাকা দোসরদের উস্কানি দিচ্ছে হাসিনা। ভারতে বসে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন দাবিতে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মঙ্গলবার ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক কঠোর হরতাল।
তবে চলতি মাস (ফেব্রুয়ারি) জুড়ে আওয়ামী লীগ হরতাল-অবরোধসহ যে কর্মসূচি দিয়েছে তাতে শঙ্কার কোনো কারণ দেখছে না ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, ‘এটা বিশ্ব মিডিয়ার যুগ। এক মিনিটের ভেতরে এই ঢাকা শহরের খবর ব্রাজিল চলে যাচ্ছে। এমনকি যদি টাওয়ার থাকে, ব্রাজিলের আমাজন বনভূমিতে যোগাযোগ হয়ে যাচ্ছে। তাই এই যুগে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন প্রোগ্রাম আসছে। পুলিশ সেসব মোকাবিলা করবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ভিডিও বার্তা, মিডিয়ার জগৎ-প্রোগ্রাম দিতেই পারে। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের অনেক নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা যদি এ রকম কোনো প্রচেষ্টা নেয় অবশ্যই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। তবে আপাতত এ রকম কোনো শঙ্কা দেখছি না আমরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এমন মন্তব্য করেছেন, ক্ষমতায় থাকাকালে ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্যই আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে। তাই নিকট ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা নেই। আওয়ামী লীগের সময় জনগণের স্বাধীনতা ছিল না। রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্র তারা দখল করে রেখেছিল। নিজেদের স্বার্থে তারা সবকিছু করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগের পতাকাতলে কেউ ‘অবৈধ বিক্ষোভ’ করার সাহস করলে তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনো ধরনের প্রচেষ্টার সুযোগ দেব না। তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে এত বড় একটা হত্যাকান্ডের পরও আওয়ামী লীগের কোনো অনুশোচনা নেই।
শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই জুলাই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে শেখ হাসিনা জোরপূর্বক গুম ও হত্যার সরাসরি নির্দেশদাতা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় একটা হত্যাকান্ড হলো, আপনার-আমার চোখের সামনে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের খুন করা হলো, শত শত ছেলে অন্ধ হয়ে গেছে, অনেকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘তারপরও তো আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই, অনুতপ্তও নয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, ছেলেদের রক্তের ওপর পা রেখে দিল্লিকে কিবলা বানিয়ে ক্ষমতার মসনদে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জনগণের মুক্তির নিয়তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। আওয়ামী পুনর্বাসনের জন্য যারা উদ্যোগ নেবে, তাদেরকে ইতিহাস গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করবে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে যারা ধারণ করে, যারা গণমানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে চায়, তারা ২৪– পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করার দাবি ছাড়া আওয়ামী লীগ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আর কোনো দ্বিতীয় বক্তব্য দিতে পারে না।’
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তৃতায় সেটি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ১৯৪৫ সালে জার্মানির ফ্যাসিস্ট নাৎসি পার্টিকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় এবং এখনো তারা নিষিদ্ধ রয়েছে সেখান থেকেই বোঝা উচিত আওয়ামী লীগের পরিণতি কী হওয়া উচিত।
তিনি বলেন,সংস্কার ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে ফ্যাসিবাদের সমর্থক জনগোষ্ঠীকে তাঁরা প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে বিএনপি সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমরা প্রত্যাশা করি সংস্কার ও ফ্যাসিবাদ বিলোপের চলমান যাত্রায়ও বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘গণহত্যার বিচারের পূর্বে আওয়ামী লীগকে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেব না। প্রয়োজনে ২য় অভ্যুত্থান হবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন ‘ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের বিচারের আগে দেশে কোনও নির্বাচন হবে না। ‘আওয়ামী লীগের এবং ফ্যাসিস্টদের যারা দোসর রয়েছে, তাদের বিচারের আগে বাংলাদেশে কোনও নির্বাচন হবে না। ‘আমরা বিজয় উদযাপন করছি ২০২৪-এ, সেটি হচ্ছে আওয়ামী এবং ফ্যাসিবাদমুক্ত দিবস, দিল্লির আগ্রাসনমুক্ত বিজয়।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশের ইতিহাসের সঙ্গে ভয়ঙ্কর প্রতারণা করেছে। তারা গত ১৫ বছরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ইতিহাস মুছে দিয়ে এক ব্যক্তি ও এক দল কেন্দ্রিক ইতিহাস তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ইতিহাসে কালপ্রিট রাজনৈতিক দল।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ বলেন , দেশে আওয়ামী রেজিমের পতন ঘটেছে। দেশে আর তাদের রাজনীতি চলবে না। জুলাই বিপ্লবে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্য ধরে রাখতে না পারে, তাহলে বিপ্লব ব্যর্থ হবে। আর বিপ্লব ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগ আবার দেশে ফিরে কাউকে রেহায় দেবে না, সবাইকে ফাঁসিতে ঝুলাবে। তাই নিজেদের মধ্যে একতা ধরে রাখুন।
আওয়ামীলীগকে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় থেকেছে তখনই এ দেশের মানুষ অত্যাচার-নির্যাতন, গুম ও খুনের শিকার হয়েছে। এই দল ৭১- ৭৫ পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে এদেশের হাজারো মানুষকে গুম খুন করেছে। আওয়ামীলীগের শাসনামলে দেশ- জনগণ কোনদিনই নিরাপদ ছিলো না।
জানা গেছে, দেশের মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় ছিল। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অন্য কোনো দলকে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। আওয়ামী সরকারের ফ্যাসিবাদের মূল ভিত্তি ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদ, কর্তৃত্ববাদ (শক্তিশালী ও কেন্দ্রীভূত সরকার), রাজনৈতিক বিরোধিতা দমন এবং অন্য জাতি বা গোষ্ঠীর প্রতি শত্রুতা।
শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের জাতীয়তাবাদী চেতনাকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মাধ্যমে ব্যবহার করেন। নিজেকে তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার হিসেবে উপস্থাপন করেন; যা তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম হাতিয়ার ছিল। পাশাপাশি তিনি গণমাধ্যমকে ব্যবহার করেছিলেন তাঁর ক্ষমতা ও আদর্শ প্রচার করতে এবং জনগণের মনে উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনা উসকে দিতে। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাসিনা সরকার ১৫ বছর ধরে দেশে এক কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। অবশেষে ৫ আগস্ট, বহু শহীদের রক্তের বিনিময়ে, এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ডাকা হরতাল কর্মসূচি প্রসঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘হরতালের ডাক দিলেন আর মানুষ লাফ দিয়ে পড়বে, এমনটা হবে না। মানুষ আপনাদের (আওয়ামী লীগ) শাস্তির জন্য অপেক্ষা করছে। জুলাই বিপ্লবে নিহত-আহতেরা বিচার চায়।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগ) আত্মা রক্তপিপাসু নেকড়ের আত্মা। শেখ হাসিনার কাছে নারী, শিশুর কোনো মূল্য নেই। একটাই মূল্য সিংহাসন। তিনি কতজনকে সন্তানহারা করেছেন হদিস নেই। গুলি ছিল শেখ হাসিনার কাছে একটা খেলা, ক্রসফায়ার ছিল আনন্দের বিষয়। বিরোধী পক্ষের লাশ দেখলে খুশি হতেন হাসিনা। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ এক নারী।’****