* অনিয়মে যারা জড়িত তারা দলের লোক হলেও রেহাই নেই ওবায়দুল কাদেরের হুঁশিয়ারি
মিরর বাংলাদেশ : করোনা দুর্যোগের অহায় মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ টাকা প্রদান করার কার্যক্রম চালুর ৩ দিনের মধ্যে টাকা বিতরন করার তালিকা নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনিয়ম দুনীর্তি এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আসছে। ইতোমধ্যে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা জানাজানির হওয়ার পর তোলাপাড় শুরু হয়। দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেও হিিশয়ারি দিয়ে বলেছেন এসব কাজে যারা জড়িত তার দলের লোক হলেও রেহাই নেই।
জানা গেছে , করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের পক্ষ থেকে নগদ আড়াই হাজার টাকা সহায়তার উপকারভোগীর তালিকায় হবিগঞ্জে এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের আত্মীয় স্বজনদের চারটি মোবাইল নম্বর ৩০৬ জনের নামের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি নম্বর আছে ৯৯ জনের নামের পাশে, একটি ৯৭ জন, একটি ৬৫ জন ও একটি ৪৫ জনের নামের পাশে।এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা জেলায়। যদিও প্রশাসন বলেছে খসড়া তালিকায় অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ায় সংশোধন করা হচ্ছে।
সূত্র মতে, সরকারি সহায়তার আড়াই হাজার টাকার উপকারভোগীর তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা খসড়া তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জমা দেবেন। খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করার সময় এ অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে।
হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার মুড়িয়াউক ইউনিয়নে ১১৭৬ জনের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৩০৬টি তালিকার মধ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মলাই এর আত্মীয় স্বজনের চারটি মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয় পুরো জেলায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসার পর তালিকাটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলছে সংশোধনের কাজ। রবিবারের মধ্যে সংশোধন কাজ শেষ করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে লাখাই উপজেলার মুড়িয়াউক ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মলাই বলেন, ‘আমরা ইউনিয়ন অফিস থেকে ৭৩০টি তালিকা প্রণয়ন করেছি। বাকি তালিকা উপজেলা নির্বাহী অফিস থেকে করা হয়েছে। তাদের কম্পিউটার অপারেটর ভুল করেছে। এখন আমরা সংশোধন করছি।’ নম্বরগুলো আপনার আত্মীয়-স্বজনের- এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘একজন আমার ভাতিজা, তবে কাছের নয়, দূরের আত্মীয়। অপর জন আমার গোষ্ঠীর আত্মীয়। উপজেলা অফিসে তাড়াহুড়ো করে তালিকা প্রণয়নের কারণে একই নম্বর একাধিক তালিকায় দেওয়া হয়েছে। আমরা ইচ্ছে করে করিনি।’
এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুসিকান্ত হাজংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমি করোন পজিটিভ অবস্থায় আইসোশেনে আছি। বিষয়টি সহকারী কমিশনা ভূমি দেখভাল করছেন। তিনি বিষয়টি জানেন।’
লাখাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঞ্চিতা কর্মকর্তা জানান, ‘আমি দেখভাল করিনি, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী স্যার দেখাশোনা করছেন। তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, ‘খসড়া তালিকায় অনিয়মের বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসার পর সংশোধন করা হচ্ছে। কোনও তালিকায় অনিয়ম হবে না।’
৪০ জনের নামের পাশে এক মেম্বারের নম্বর
করোনার কারণে সংকটে পড়া অসহায় পরিবারগুলোকে নগদ আড়াই হাজার টাকা করে দিচ্ছে সরকার। বাগেরহাটের শরণখোলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডে এই টাকা আত্মসাতের জন্য অভিনব পন্থার অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রাকিব হাসান ১০০ ব্যক্তির তালিকার নামের ভেতরে ৪০ ব্যক্তির নামের সঙ্গে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তালিকা চেক করার সময় বিষয়টি তার নজরে আসে। পরে তিনি মেম্বার রাকিবের দেওয়া এই তালিকা আটকে দেন। পরবর্তীতে সংশোধন করে দরিদ্র মানুষের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে।
মেম্বার রাকিব বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের তথ্য কর্মকর্তা তালিকা টাইপ করার সময় আমার নম্বরগুলো দিয়েছেন। কেন তিনি দিয়েছেন আমিও বুঝতে পারছি না।’
২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১০০ জনের নামের তালিকা দিয়েছিলেন রাকিব। তালিকা দেওয়ার পর সেগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই এলাকার প্রাইমারি শিক্ষকদের দিয়ে চেক করান, কোথাও একই মোবাইল নম্বর রয়েছে কিনা জানাতে বলেন। তখন মেম্বার রাকিবের নম্বর ৪০টি নামের সঙ্গে পাওয়া যায়। এরপর সেই তালিকা আটকে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সর্দার মোস্তফা শাহিন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিটি তালিকা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের দিয়ে চেক করিয়েছি। তারা তালিকার ভেতরে মেম্বারদের নম্বর পেলে সেগুলো বাদ দিয়েছেন। যখনই বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি, তখনই মেম্বারদের মোবাইল নম্বর বাদ দিয়ে তালিকা ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। দুই একজন ধনী ব্যক্তির নামও এসেছিল, সেগুলোও বাদ দেওয়া হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সর্দার মোস্তফা শাহিন, ‘প্রথমে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল যাদের মোবাইল নম্বর নেই, তারা নিকটআত্মীয় বিশ্বস্ত বা মেম্বারের নম্বর দিতে পারবে। তবে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয়েছে মেম্বারদের নম্বর দিতে পারবেন না। আমি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিয়েছিলাম যাতে সঠিক ব্যক্তিরা এই সহায়তা পায়, সেভাবেই করার চেষ্টা করেছেন তারা।’
শরণখোলা উপজেলা থেকে ১৩ হাজার ৬৫৩ জনের নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তারা সাহায্য পেতে শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।
করোনার কারণে সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়ার জন্য এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বরাদ্ধের পর ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৩ মে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এই অর্থ পাওয়া শুরু করেছে। ১৮ মে’র মধ্যে নগদ বিতরণ সম্পন্ন হবে।