গ্রাহক পর্যায়ের আপাতত বাড়ছে না বিদ্যুতের দাম

168

মিরর বাংলাদেশ  : বিতরণ কোম্পানি লোকসান করলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করাা প্রধান লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে মন্ত্রনালয়।  বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বিভাগে বাজেট নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। বাজেট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আইএমএফ বছরে চারবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির শর্ত দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুবার দাম বাড়ানো হয়েছে। এটি একটি নিয়মিত সমন্বয়। সরকার চাইলে আমরা দাম বৃদ্ধি করি। আমাদের আবার যখন দাম বৃদ্ধির কথা বলা হবে, তখন আমরা দাম বৃদ্ধি করবো। তবে আপাতত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে না।
ঝড় ও বন্যার কারণে বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থার বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের ৩০ হাজার পোল বিনষ্ট হয়েছে। সিলেট অঞ্চলে বন্যার কারণে সবক’টি সাবস্টেশন পানির নিচে চলে গেছে। আমরা এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণের ব্যবস্থা সাজানোর চেষ্টা করছি. যাতে গ্রাহককে ঝড় ও বন্যার মধ্যেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ ঘাটতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় উৎপাদন শুরু করেছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বেড়েছে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সরবরাহ আরও বাড়বে। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
গ্যাসের স্বল্প চাপ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঝড়ের কারণে আমাদের একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী ১৪ থেকে ১৫ জুলাই টার্মিনালটি পুনরায় গ্যাস সরবরাহ করলে গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে।
আগামী ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে যাচ্ছেন। এ সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির কোন কোন সমঝোতা স্মারক সই হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মহেশখালী থেকে সমান্তরালভাবে আটটি পাইপলাইন গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছি। বিষয়টি চীন সফরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থা ও বিতরণব্যবস্থার কিছু প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে যেসব বিষয়ে অনুদান পাবে, সেগুলোর চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হবে। টাকার অঙ্কে এই বিনিয়োগ এক বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৭ সালের মধ্যেই আমরা গ্যাস-সংকট দূর করতে পারবো বলে আশা করছি। এ জন্য আরও দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। এর বাইরে স্থলভাগে ও অগভীর সমুদ্রে নতুন করে কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী মাসের শেষের দিকে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি সই হতে পারে।
নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট আট টাকা। এটি বেশি কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সুবিধা হচ্ছে কুড়ি বছর ৮ টাকা ইউনিটেই বিদ্যুৎ আমদানি করা যাবে। জীবাশ্ম জ্বালানির দাম বাড়লে যেমন বিদ্যুতের দাম বাড়ে, এখানে এটা হবে না।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আমরা ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। সেই হিসাবে এখন ২৬ হাজার মেগাওয়াট হলে ২৬০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসার কথা। কিন্তু আমরা পাচ্ছি মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ মেগাওয়াট। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য ২৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রকে নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও ছয় হাজার মেগাওয়াট পাইপলাইনে রয়েছে। এই পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ আসবে বেসরকারি খাত থেকে।
নসরুল হামিদ বলেন, সঙ্গত কারণে এখানে বাজেটে বরাদ্দের প্রয়োজন নেই। ২০৪১ সালের মধ্যে ১০ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য হাতে নিয়েছি। এ জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক কিছু প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায়। আমরা তাদের জমি দেবো। তারা সেই জমি উন্নয়ন করে দেবে। একইসঙ্গে গ্রিড লাইন নির্মাণ করে দেবে। এরপর আমরা দরপত্র আহ্বান করবো। এতে সৌর বিদ্যুতের দাম আরও কমে আসবে। আমরা আশা করছি ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের গ্রিডে ছয় হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎ যোগ হবে।
সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ডাকা দরপত্রের সময় বাড়ানো হচ্ছে জানালেও কতদিন বাড়ছে, এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

২০২৭ সালের পর দেশে গ্যাস সংকট থাকবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সাত প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, ২০২৭ সালের পর দেশে গ্যাসের চাহিদা হবে প্রতিদিন ৬০০ কোটি ঘনফুট। সেজন্য ১৪৬ কূপ খননের পাশাপাশি আরও দুটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করা হবে। তখন গ্যাসের কোন সংকট থাকবে না।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা করেছি, মহেশখালী থেকে একটি এলএনজি পাইপ লাইন নির্মাণের প্রস্তাব থাকবে আমাদের। এখন দৈনিক ৩৫০০ এমএমসিএফ গ্যাসের চাহিদা থাকলেও আগামী ৫ বছরের মধ্যে তা ৬০০০ এমএমসিএফডি হয়ে যাবে। সে কারণে আমদানি ও দেশীয় যোগান থেকে এটা মেটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
২০২৭ সালের পর দেশে গ্যাস সংকট থাকবে না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে আমরা ১৪৬টি কূপ খনন করব। সেজন্য অনশোর বিডিংয়ের একটি পিএসসি প্রস্তুত করা হচ্ছে। আমরা আরও কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে আমরা চীনকে গ্যাস পাইপ লাইনের প্রস্তাব দিচ্ছি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছরে দুইবার বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। আবারও সময় মত দাম সমন্বয় করা হবে। সরকার গত বছর বিদ্যুতে যে ভর্তুকি রেখেছিল তা মোটামুটি বন্ড ইস্যু করে ও অন্যান্যভাবে পূরণ করা গেছে। গত বছরের বাকি টাকাটা পাওয়ার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।’
নবায়নযোগ্য জ্বালানির হিস্যা বাড়ানোর পক্ষে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এটা ১০ শতাংশ করা আমাদের মূল টার্গেট। (মোট উৎপাদন) ২৬ হাজার ধরলে (রিনিউয়েবলে) ২৬০০ মেগাওয়াট লাগবে। এখন ৪০০ মেগাওয়াটের মত হচ্ছে। আড়াই হাজার মেগাওয়াটের এলওয়াই দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে চীন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। আর এ মাসেই নেপালের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি করা হবে বলে জানান নসরুল হামিদ। *****