মিরর বাংলাদেশ :
চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবি ঘিরে সংঘর্ষকালে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বন্দর নগরীর কোর্ট বিল্ডিং চত্বরে। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে নগরের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবি ঘিরে সংঘর্ষে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের দু’দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বন্দর নগরীতে অনুষ্ঠিত এই জানাজায় অংশ নিতে কোর্ট বিল্ডিং চত্বর ও জমিয়তুল ফালাহ প্রাঙ্গণে হাজারো মানুষের ঢল নামে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় কোর্ট বিল্ডিং চত্বরে। আর সাড়ে ১১টার দিকে নগরের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেল ৪টায় লোহাগাড়ার চুনতি ফারেঙ্গা গ্রামের বাড়িতে সবশেষ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সাইফুল ইসলাম আলিফকে দাফন করার কথা রয়েছে।
সকাল ৯টার পর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ জড়ো হতে থাকে কোর্ট বিল্ডিং চত্বর ও ওয়াসা মোড়ের জমিয়তুল ফালাহ প্রাঙ্গণে। অনেককে ট্রাক-বাসে করে জেলা-উপজেলা থেকে আসতেও দেখা গেছে। ১১টা বাজতেই জমিয়তুল ফালাহ মাঠে মানুষের ঢল নামে জানাজার নামাজ ঘিরে।
জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ অংশ নেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরীসহ আরও অনেক রাজনীতিবিদ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা থেকে এসে জানাজায় শরিক হন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
জমিয়তুল ফালাহ মাঠের দ্বিতীয় জানাজায় ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগর আমির শাহজাহান চৌধুরী।
এ সময় শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘কোনো বক্তব্য নাই আর, সবাই কাতারবন্দি হয়ে যান। শুধু প্রশাসনের ভাইদেরকে বলতে চাই, গত ১৫ দিন ধরেই আমি বলে আসছিলামযে এই চিন্ময় দাস উস্কানিমূলক সমাবেশ প্রেসক্লাবের সামনে করেছে, চেরাগির পাহাড়ে করেছে, লালদীঘির ময়দানে করেছে। আমি বলেছি- এরা বেড়ে যাচ্ছে, তাদের কোনো কর্মসূচি করতে দেবেন না। কিন্তু কেউ পাত্তা দেননি।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে উপস্থিত আইনজীবীরা অবিলম্বে সাইফুল ইসলাম আলিফের খুনিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ফাঁসির দাবি জানান। একইসঙ্গে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি তোলেন তারা। কেউ কেউ এ সময় সহকর্মী আলিফের স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আপনারা জানেন আমাদের প্রিয় ভাই আলিফ মঙ্গলবার ইসকন সন্ত্রাসীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। তাই আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আজ কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। জানাজা শেষে আমরা আজকে বারে বসব। এরপর আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
তিনি বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে আসামির প্রিজন ভ্যান ঘেরাও করে রেখে গতকাল আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। এটিও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড বলে আমরা মনে করি। এই হত্যার বিচারের দাবিতে আইনজীবী সমিতি জিরো টলারেন্স নীতিতে অবস্থান নেবে।’
আসামিদের পক্ষে আইনজীবীরা লড়বেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসামিদের পক্ষে আইনজীবী লড়লে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাব আমাদের ভূমিকা কী হবে।’
এর আগে মঙ্গলবার চট্টগ্রামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম জালাল উদ্দিন। ২০১৮ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন সাইফুল। পরে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবেও নিবন্ধন পান।
