* সাখাওয়াত হোসেন বাদশা *
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ) একটি বিবৃতি দিয়েছে সাংবাদিকদের বেতন প্রদান ও ঝুঁকি ভাতা দেওয়ার জন্য। অন্যথায় চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন। ব্যক্তিগতভাবে এই বিবৃতির জন্য আমার কৃতজ্ঞতা।
গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ওয়েজ বোর্ড একটি মধুর শব্দ। তবে সবার জন্য নয়। যারা প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করেন, তাদের জন্য ওয়েজ বোর্ড সত্যিই মধুর। টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়া এখনও ওয়েজ বোর্ডের আওতার বাইরে রয়েছে। কিন্ত বেতন বকেয়ার চিত্রটা এক ও অভিন্ন।
যে কথা না বললেই নয়, সরকার প্রিন্টমিডিয়ার জন্য ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করেন এবং তা বাস্তবায়ন ও দেখভালের জন্য একটি কমিটিও আছে। অথচ শক্তিশালী এই কমিটির জ্ঞাতসারেই অধিকাংশ পত্রিকা মালিক বেতন না দিয়ে সাংবাদিক-কর্মচারিদের টাকা আত্মসাৎ করার মানসিকতা পোষণ করেন। মালিকদের এই চরিত্র আমরা সবাই জানি। কিন্ত এই দু:সময়ে যেসব মালিক সাংবাদিকের বেতনসহ বকেয়া পরিশোধ না করে পত্রিকা বন্ধ করে দেয়; তারা আর যাই হোক মানুষের কাতারে পরে বলে আমি বিশ্বাস করিনা।
সরকার সাংবাদিক-কর্মচারিদের জন্য অষ্টম ওয়েজবোর্ড দিয়েছেন। এই ওয়েজবোর্ডে সাংবাদিকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি যেমন উল্লেখ রয়েছে, তেমনি সংবাদপত্র মালিকদের সরকারি বিজ্ঞাপনের হারও (রেট কার্ড) নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। যেসব পত্রিকা অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করবে না, সরকার তাদের নতুন রেট কার্ড অনুযায়ি বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধ করবেন না। এই শর্তের কারণে অধিকাংশ মালিক অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের নামে যে নাটক এবং ছলচাতুরি করেছেন-তার সবই সাংবাদিকদের জানা। ডিএফপি এবং তথ্যমন্ত্রনালয়ের কতিপয় অসৎ ব্যক্তি তদন্তের নামে উৎকোচ নিয়ে এমন সব পত্রিকাকে অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের ছাড়পত্র দিয়েছেন- যা ডাহা মিথ্যা ও সত্যের ধারে-কাছেও নেই। ৫০০ থেকে ৫০০০ পত্রিকা ছাপে এমন পত্রিকাগুলোও অষ্টম ওয়েজবোর্ডের ছাড়পত্র নিয়েছেন এবং সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। তথ্যমন্ত্রণালয় সংসদে একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন, ওই তালিকা দেখলেই বোঝা যাবে- মিথ্যা, ডাহা মিথ্যায় ভরা ডিএফপি’র এই রেট কার্ড।
পত্রিকা মালিকরা অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের নামে সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও দেশের অধিকাংশ পত্রিকায় নামমাত্র যে বেতন প্রদান করা হয় তাও নিয়মিত প্রদানতো দূরের কথা; বরং ৩ মাস, ৯ মাস থেকে শুরু করে ২০ মাসেরও বেশি বেতন বকেয়া রয়েছে অনেক পত্রিকায়। নির্যাতনের এমন একটি সার্কাস চলে আসছে তথ্যমন্ত্রণালয়ের জ্ঞাতসারেই। উল্টো তথ্যমন্ত্রণালয়ের একশ্রেণির কর্মকর্তা এসব পত্রিকাকে ধরার পরিবর্তে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন এবং অভিযোগ রয়েছে অর্থের বিনিময়ে ও চামচামির কারণে ওইসব পত্রিকায় নিয়মিত সাপ্লিমেন্টও প্রদান করা হয়। কিন্ত ওই সব পত্রিকার সাংবাদিক-কর্মচারিরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছে কিনা, তা একবারের জন্যও তথ্যমন্ত্রণালয় কিম্বা ডিএফপি থেকে একবারের জন্যও জানতে চাওয়া হয়না।
তথ্যমন্ত্রনালয়ের অধিনে একটি মনিটরিং কমিটি রয়েছে। ওই কমিটির পাওয়াফুল চারজন সদস্যই সংবাদপত্র থেকে নেওয়া। তাদের কাজ কি শুধুই পত্রিকায় অষ্টম ওয়েজবোর্ড পাইয়ে দেওয়া? এই কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে, পত্রিকার প্রচার সংখ্যা সঠিক কিনা, কোনসব পত্রিকা নিয়মিত বেতন প্রদান করছে, কারা দিচ্ছেনা সেসব পর্যবেক্ষণ করে তথ্যমন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো। কিন্ত আজ পর্যন্ত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনও তথ্যমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। উল্টো ডিএফপি’র ডিজির সভাপতিত্বে এই কমিটির যে বৈঠক হয়, সেখানে পত্রিকা মালিকদের প্রসংশায় পঞ্চমুখ থাকেন কমিটির সদস্যরা।
আমার জানা মতে, অষ্টম ওয়েজবোর্ড মোতাবেক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদানের অন্যতম শর্ত হচ্ছে-নিয়মতিত বেতন প্রদান এবং সরকারি বিল নেওয়ার সময় সাথে সেলারি পরিশোধের সিট যুক্ত করে দেওয়া। অথচ এই নিয়মটি মোটেও মানা হচ্ছে না।
এক্ষেত্রে বিএফইজে ও ডিইউজে’র দুই অংশের নেতাদের প্রতি আমার আহ্বান, করোনাভাইরাসের এই দু:সময়টায় সাংবাদিক-কর্মচারিরা মানবেতন জীবন যাপন করছে। যতটুকু জানি, পত্রিকার মালিকদের সরকারি বিলের বড় একটি অংশ পরিশোধের তোরজোড় চলছে। আপনারাও অবস্থান নেন যে, যেসব পত্রিকা মালিক চলতিমাসসহ টানা তিন মাসের বেতন পরিশোধের সিট দেখাতে পারবেন না; তাদের বিল যেন সরকার পরিশোধ না করেন।
আপনাদের এই অবস্থানের কারণে অসংখ্য সাংবাদিক-কর্মচারি এই কঠিন সময়ে তাদের পরিবারপরিজনসহ মানবেতন জীবন যাপনের কবল থেকে রক্ষা পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক:সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।