মিরর বাংলাদেশ : রমজানের প্রথম দিনই রাজধানীতে গ্যাসের হাহাকার শুরু হয়েছে। রবিবার রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় দুপুরের পর থেকেই ছিল না গ্যাস। কোথাও থাকলেও তা এত কম ছিল যে পানিও গরম করা যাচ্ছিল না। দেশের বড় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে একটি বিবিয়ানা। সেই ক্ষেত্রের ছয়টি কূপ বন্ধ। যার প্রভাব পড়েছে ঢাকায়। সংকট কাটতে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।
গ্যাসের সংকট দেখা গেছে ঢাকার মোহম্মদপুর, রায়েরবাজার, ধানমন্ডি, শংকর, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, রামপুরা, ওয়ারী, মগবাজার, বনশ্রী, গোপীবাগ, মিরপুর, ইস্কাটন, মানিকদিসহ আরও কিছু এলাকায়। পশ্চিম ধানমন্ডির বাসিন্দা আমেনা মুক্তা জানান, ‘দুপুর পর্যন্ত মোটামুটি গ্যাস ছিল। দুপুরের পর একেবারেই নেই। ইফতারের কিছুই রান্না করতে পারিনি।’
ইস্কাটনের বাসিন্দা নওরীন আক্তার জানান, ‘সকাল থেকেই গ্যাসের চাপ কম। দুপুরের পর আরও কমে গেছে। একই অভিযোগ মিরপুরের বাসিন্দা জাহানারা বেগম ও গোপীবাগের দীপংকর বরের। মানিকদি থেকে দীপা মল্লিক জানান, ‘মোটেও গ্যাস নেই। চুলাই জ্বলছে না।’
উত্তরা-৪ থেকে নাফিসা জানান, ‘কাল রাত থেকেই গ্যাস নেই। এখনও আসেনি। ইফতার বানাতে না পেরে দোকান থেকে কিনে এনেছি।’ একই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মগবাজার, রায়েরবাজার, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, রামপুর, বনশ্রী ও মিরপুরের বাসিন্দারা।
রবিবার দুপুরের দিকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ফেসবুক পেইজের একটি পোস্টে জানা গেছে, বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণ কাজের জন্য গ্যাস সরবরাহে ঘাটতিজনিত কারণে কিছু কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনে বিঘœ ঘটছে। ফলে কোনও কোনও এলাকায় সাময়িকভাবে সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। এই অসুবিধার জন্য মন্ত্রণালয় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছে।
ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলা স্ত্রূ জানায়, বিবিয়ানার ছয়টি কূপ থেকে গত রাতে গ্যাস উত্তোলনের সময় বালি উঠতে শুরু করে। এ কারণে বন্ধ করে দিতে হয় উৎপাদন। এতে রাতে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। আবাসিক এলাকায় সাধারণত প্রায় ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এখন সরবরাহ হচ্ছে প্রায় ১৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, ‘হঠাৎ বিবিয়ানায় দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। কিছুই করার ছিল না। আমরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। বিকাল নাগাদ একটি কূপ মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। আগামীকালের মধ্যে আরও তিনটি কূপ উৎপাদনে আসবে বলে আশা করছি। এরপর আরও একটি কূপ চালুর কথা। তবে একটি কূপ মেরামত করতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে শেভরন। ফলে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো ঘাটতি থেকে যাবে। ৮ এপ্রিল আমাদের একটি এলএনজির কার্গো দেশে পৌঁছাবে। এরপর ১০ এপ্রিল নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি। একই কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহেও ঘাটতির শঙ্কা তৈরি হলো। কারণ, দেশের প্রায় অর্ধেক কেন্দ্র এখনও গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহে সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে নাজমুল আহসান বলেন, ‘চেষ্টা করছি বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে। এখন তো গরম। চাহিদা এমন সময় বেশি থাকে। ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময় যাতে বিদ্যুৎ সংকট না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হচ্ছে।’
গ্রীন রোড এলাকায় বিভিন্ন কোচিংয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা বিকালের দিকে ইফতার কিনতে ভিড় করেন। আনন্দ সিনেমা হলের সামনে ইফতারি বিক্রেতা আমজাদ বলেন, সিলিন্ডার গ্যাসে ইফতারের কিছু আইটেম বানিয়েছি। আমার দোকানে গ্যাস নাই। তবে লাইনের গ্যাস থাকলে আরও সুবিধা হতো।
এদিকে দুপুরের পর থেকেই স্থায়ী দোকানের পাশাপাশি ঢাকার অলিগলির অস্থায়ী দোকানগুরো বাহারি ইফতার নিয়ে বসেন দোকানিরা । ফার্মগেটের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে নানা পদের ইফতারিতে ভরা দোকান। একইদৃশ্য পান্থপথেও। কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল এলাকাতেও বাহারি ইফতার নজর কেড়েছে সবার। প্রথম রোজায় সাধারণ মানুষও দোকান থেকে ইফতার কিনতে ছুটে যান।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজু, ছোলা, বেগুনি, আলুর চপ, কিমা, মুরগির কাবাব, বটিকাবাব, টিকাকাবাব, কোফতা, চিকেন কাঠি, শামিকাবাব, শিকের ভারী কাবাব, সুতিকাবাব, কোয়েল পাখির রোস্ট, কবুতরের রোস্ট, জিলাপি, শাহী জিলাপি, নিমকপারা, সমুচা, আলাউদ্দিনের হালুয়া, হালিম, দইবড়া, সৌদি পানীয় লাবাং, কাশ্মীরি শরবত, ইসবগুলের ভূষি, পুরি এবং ৩৬ উপকরণের মজাদার খাবার ‘বড়বাপের পোলায় খায়’সহ নানান পদ। দাম একেক এলাকাকায় একেক রকম। তবে কিছু সাধারণ পণ্য সবস্থানেই প্রায় একই দাম। বেগুনি, আলুর চপ সকল স্থানে একই দাম হলেও অন্য পদগুলোর দামে ভিন্নতা দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাহারি ইফতারের মধ্যে গরুর সুতি কাবাব, খাসির সুতি কাবাব সবাই কেজি হাজার টাকার ওপরে। কোয়েল পাখির রোস্ট ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস, ছোলা-ঘুঘনি ২৮০ টাকা কেজি। কোথাও আস্ত মুরগির রোস্ট ৩৫০, ফালুদা ছোট বক্স ১০০, বড় বক্স ২০০, দইবড়া ২০০ থেকে ৪৪০ টাকা কেজি, রেশমি জিলাপি ৩০০ টাকা, সাধারণ জিলাপি ২০০ টাকা কেজি। এছাড়াও বিভিন্ন সবজির পাকুরা ১০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।