দুধের সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে খাইয়ে শিল্পপতিকে হত্যার পর লাশ টুকরা টুকরা, বান্ধবী গ্রেফতার

54

মুহা: ইউসুফ আল আজিজ :
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের লেক থেকে ৭টুকরা লাশ উদ্ধার এবং পরিচয় সনাক্ত হওয়ার পর এবার হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের জের ধরে খুন হন শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুম। পুলিশ হত্যার সাথে জড়িত শিল্পপতির বান্ধবী রুমা নামের এক নারী ও তার সহযোগী রুকুকে রাজধানীর বনানীর একটি বাসা থেকে গ্রেফতারের পর হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়। গ্রেফতারের সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত হেক্সো ব্লেড,চাপাতি, নিহতের সাফারি পোষাক উদ্ধার করে পুলিশ। জসিম উদ্দিন মাসুম ফতুল্লার চাঁদ ডাইংয়ের মালিক ও সস্তাপুর ঈদগাহ মসজিদ কমিটির সভাপতি ।

রূপগঞ্জে উদ্ধার খন্ডিত ৭ টুকরা লাশ ফতুল্লা শিল্পপতি মাসুমের

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার রুমার সাথে ব্যাবসায়ি মাসুমের অবৈধ সম্পর্কের জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। গতকাল বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন
এসপি বলেন, শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুমকে হত্যা করে মরদেহ সাত টুকরো করে গুমের চেষ্টায় রুমা নমে এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, শিল্পপতি জসীমউদ্দিন মাসুমের ক্ষতবিক্ষত সাত টুকরো লাশ রূপগঞ্জ লেক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ তাৎক্ষণিক এর তদন্ত শুরু করে। গুলশান থানার একটি জিডির সূত্র ধরে আমরা এই ডিসিস্টের পরিচয় জানতে পারি। তার সাথে রুমা নামের একটি মহিলার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রথমিকভাবে জানা গেছে। তিনি হত্যা করে মরদেহটি টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন। হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড মূল হোতা নিহতের প্রেমিকা রুমা (২৮) ও তার সহোযোগি রুকু(২৮) কে গ্রেফতার সহ উদঘাটন করা হয়েছে হত্যাকান্ডের রহস্য।

নিহত শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুম

এসপি বলেন, শিল্পপতি জসীমউদ্দিন মাসুমের বুধবার রূপগঞ্জ থেকে ক্ষতবিক্ষত সাত টুকরে লাশ উদ্ধার হয়। এর পর পুলিশ তাৎক্ষণিক এর তদন্ত শুরু করে। গুলশান থানার একটি জিডির সূত্র ধরে আমরা এই ডিসিস্টের পরিচয় জানতে পারি। তার সাথে রুমা নামের একটি মহিলার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রথমিকভাবে জানা গেছে। পরে তরুনীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তারা প্রায় সময় মিরপুরের একটি ভাড়া বাসাট ফ্ল্যাটে মিলিত হতো। সেই ফ্ল্যাটে নিহত ব্যবসায়ী জসিমউদদীন অপর এক নারীকে নিয়ে যায়। সেই বিষয়টি জানতে পারে গ্রেফতারকৃত রুমা। এতে রাগে ক্ষোভে রোববার নিহত জসীমউদ্দিন কে মিরপুরের শেওরাপাড়ার ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়।সেখানে নিয়ে গিয়ে দুধের সাথে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে জসীমউদ্দিন কে পান করায়। এতে করে সে অচেতন হয়ে পরলে তার দেহ বেশ কয়েকটি টুকরো কর। পরবর্তীতে টুকরোগুলো রুমা নিজেই দু দফায় উবারে এবং সিএনজিতে করে লাশ ফেলে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার

তিনি আরো বলেন, আমরা লাশের টুকরা ও এই কাজে ব্যাবহৃত চাপাতি ও জামার টুকরো উদ্ধার করেছি। এ কাজে রুমা সহ অপর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
গত বুধবার দুপুরে কুড়িল-কাঞ্চন সড়কের উত্তর পাশে পূর্বাচলের ৫ নম্বর সেক্টর থেকে মাসুমের মরদেহের খন্ডাংশগুলো উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায় তিনটি পলিথিন ব্যাগে একজন পুরো শরীরের অন্তত সাতটি অংশ পাওয়া গেছে।
নিহতের বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু বলেন, দাড়ি, নখ ও বাঁ পায়ের কিছু চিহ্ন দেখে বাবার লাশ শনাক্ত করি। গত ১০ নভেম্বর বিকেল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি জিডিও করেছি। সেরা করদাতা হিসেবে আমার বাবা একাধিকবার কর বাহাদুর পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি একজন শিল্পপতি। চাঁদ ডাইং ফ্যাক্টরিসহ আমাদের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাবার সঙ্গে কারও শত্রুতা রয়েছে বলে জানা নেই।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১০ নভেম্বর বিকেলে বাসা থেকে গাড়িতে করে বের হয়ে গুলশান যান জসিম উদ্দিন। এর পর ব্যক্তিগত গাড়িচালককে ছেড়ে দেন। চালককে জানিয়েছিলেন অন্য গাড়িতে নারায়ণগঞ্জের কারখানায় যাবেন। তবে রাতে বাসায় না ফেরায় ও মোবাইল বন্ধ থাকায় পরদিন গুলশান থানায় জিডি করেন তাঁর বড় ছেলে
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত আলী জানান, স্থানীয়রা বুধবার সকালে লেকের পাড়ে তিনটি কালো পলিথিন ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে এক এক করে পলিথিনের ব্যাগগুলো খুললে একজন পুরুষের শরীরের মাথা, দুইটি হাত, শরীরের পেছনের অংশ, নাড়ি ভুঁড়ি, বাম পা, বাম উড়ুর কাটা অংশ উদ্ধার করা হয়। ***
কামাল উদ্দিন সুমন নারায়ণগঞ্জ ০১৭১২৫২৭৯৫৯