দেশের সম্প্রীতি, প্রতিবেশির প্রপাগাণ্ডা : বিশ্বজিত দাস

125
Oplus_131072

* প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে   সংখ্যালঘুদের বিপদে ফেলবেন না

গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমার ছেলে রিত খেলতে গিয়ে আঘাত পেয়ে বাম হাতের দুটা আঙুলের জয়েন্ট সরে গেলো।

নিচের ছবিটি তখনকার অবস্থা। বউ আমাকে কল দিলো দ্রুত আসো ছেলের হাত ভেঙে গেছে খেলতে গিয়ে। আমি অফিস থেকে দৌঁড়ে রিকশায় উঠে প্রথম একজন সাংবাদিক বড় ভাইকে বিষয়টা জানালাম উনি আমাকে পরামর্শ দিলেন। কিছুদিন আগে উনার ছেলেরও হাত ভাঙলো ওই ডাক্তার সহ আরো তিনজন ডাক্তারের নাম বললেন, সার্বক্ষণিক খোঁজ খরব রেখেছেন শেষ অবদি।( উনি একজন মুসলিম)। প্রথম একজন ডাক্তার বড় ভাইকে কল দিলাম উনি একটি খ্যাতিমান হাসাপাতলের সহকারী অধ্যাপক। ফোন রিসিভ করে সব শুনে বললো বিশ্বজিত আমি ওটিতে অপারেশন করতেছি তুই খানপুর হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দে, পরে আমি চেম্বারে এসে দেখবো। আর হাসাপাতালে কোন প্রয়োজন হলে কল দিস।(ওনিও একজন মুসলিম)। রিকশা নিয়ে বাসার কাছে গিয়ে দেখি ছেলেকে ঘিরে আছে ৩০/৪০ জন পুরুষ মহিলা। যাদের বেশির ভাগই ছিল মুসলিম। কেউ হাতে বরফ দিচ্ছেন কেউ শান্তনা দিচ্ছেন ছেলেকে শান্ত রাখারা চেষ্টা করছেন। ছেলেকে রিকশায় তুলে একাই রওনা দিলাম হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে হাসপাতালের একজন স্টাফ কে কল দিলাম, বললো দাদা আমার তো ছুটি হয়ে গেছে জরুরি বিভাগে যান কে আছে আমাকে ফোনে ধরিয়ে দেন। কথামত তাই করলাম ওনি বলে দিলেন হাসপাতাল থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেলাম। (ওই স্টাফ ভাইটিও মুসলিম) ছেলেকে বেডে শুইয়ে একাই সব করতে হচ্ছে, ছেলে কান্না করছে, পাশেই একজন অপরিচিত বৃদ্ধ বয়েসী চাচা মুখে বড় সাদা দাঁড়ি, মাথায় টুপি। বললো বাবা তুমি ডাক্তারের সাথে কথা বলো ওষুধ আনো তোমার বাচ্চা আমি খেয়াল রাখতেছি। তখনো আমার বউ হাসাপাতালে গিয়ে পৌছায়নি, এরমধ্যে আমার অন্য ভাইয়েরা কল দিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন কোথায় আছি ছেলেকে নিয়ে তারা আসবেন। দুই ভাই ভূল হাসপাতালে চলে গেছে। ডাক্তার এক্সরে দিলো দ্রুত করিয়ে আনতে। ছেলের আক্রান্ত হাত আমার দুই হাত দিয়ে ধরে আস্তে আস্তে হেটে টেস্ট করার উদ্দেশ্যে হাসপাতাল গেট থেকে বের হতেই আমাকে দেখে এক ছোট ভাই এগিয়ে আসলো, সাথে করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গিয়ে সব কম্পিলিট করে বিলও ডিসকাউন্ট করিয়ে দিয়ে এক্সে করিয়ে দিলো। ( ওই ছেলেটিও একজন মুসলিম ছিলো)এর মধ্যে বউ হাসপাতালে গেছে। কিন্তু মেয়েকে(৭ বছর বয়স) একা বাসায় রেখে গেছে তাই তার মোবাইল মেয়ের কাছে রেখে গেছে। মোবাইল না থাকায় কল দিতে পারেনি। আমাদের না দেখে এদিক সেদিক ছুটাছটি করতে দেখতে সেই বৃদ্ধ চাচা বউকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি কি হাত ভাঙা বাচ্চাকে খুঁজছো? তার বাবা তাকে টেস্ট করতে নিয়ে গেছে। ফোন করো তাকে। বউয়ের কাছে ফোন নেই শুনে নিজের ফোন দিলেন আমাকে কল করার জন্য, বউ কল দিলো কথা হলো জানালাম ওখানেই থাকো আসতেছি আমি। সন্ধ্যায় যে ছেলেটির আঘাতে রিতের হাতের এই অবস্থা ওই ছেলের বাবা বাসায় আসলো রিতকে দেখতে। বাসার ভেতরে না ডুকেই বাইরে থেকে খোঁজ নিচ্ছিলো, অনেকবার বলার পর বাসায় ডুকলো কিন্তু কোথাও বসতে চাচ্ছে না সংকোচ বোধ করছে। কারণ উনারা মনে করে আমরা হিন্দুদের আমাদের বাড়িতে মুসলিমদের যাওয়া পছন্দ করিনা, বা তারা বাসায় ডুকলে আমরা ভাল ভাবে দেখিনা এমন একটা ধারণা পোষন করে। অনুরোধের পর সোফায় বসে ছেলের সাথে অনেক সময় কথা বললো। রাতে সেই ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে গেলাম, খুব যত্ন নিয়ে দেখলেন আঙুলের দুইটা জয়েন্ট বসিয়ে স্টেপ করে দিলেন। ২১ দিন রাখতে বললেন, ৫ দিন পর চেকাপে নিতে বললেন। ছেলে এখন ভাল আছে। উল্লেখিত সকলের কাছে আমি কৃতজ্। প্রত্যেকটা ঘটনা খুবই ক্ষুদ্র। কিন্তু এখানে একটা সম্প্রীতির প্রকাশ পায়। কেউ ভাবেনি আমি হিন্দু নাকি মুসলিম, আমার গলায় তুলসির মালা আছে যে কেউ দেখা মাত্রই বুঝবে আমি হিন্দু। সবাই যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। হ্যা এটাই আমার বাংলাদেশ। এমন সহযোগিতা পশ্চিমবাংলা, কলকাতায় পাওয়া যায়না, সেখানে এমন সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশীদের টাকা দিতে হয়। আর রিপাবলিক বাংলা প্রচার করছে বাংলাদেশের হিন্দু নারীরা শাখা সিধুর পড়ে বাইরে যেতে পারেনা। হিন্দুরা মার খাচ্ছে। আর দাদা আমরা বাংলাদেশে ভাল আছি, নিরাপদ আছি সহবস্থানে আছি। প্লিজ এমন প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে আপনাদের স্বার্থ হাসিলে আমাদের ৮% সংখ্যালঘুদের বিপদে ফেলবেন না। হ্যা ৫ আগস্টের সরকার পতনের পর অনেক ঘটনা ঘটেছে, অনেকে আক্রান্ত হয়েছে। বাড়িঘর লুট হয়েছে, আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। কিন্তু সেটা হিন্দু দেখে নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বাড়িতে। হিন্দুর থেকে অনেক গুন বেশি আক্রান্ত হয়েছে মুসলিমরা।

দয়া করে আমাদের দেশে জাতিগত বিভেদ ঢুকাবেন না। রাজনৈতিক বিভেদের থেকে ধর্মীয় বিভেদ অনেক বিপজ্জনক। পৃথিবীতে যত মানুষ ধর্মীয় বিভেদে হত্যা হয়েছে, ততো মানুষ দুইটা বিশ্ব যুদ্ধ সহ সকল যুদ্ধেও মারা যায়নি।

বিশ্বজিৎ দাস, সংবাদকর্মী

(লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া)