না’গঞ্জে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে উলামা পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ

401

মিরর প্রতিনিধি,নারায়ণগঞ্জ :
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পরিবারের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা মূল্যের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই একটি মাদরাসা ও মসজিদ উচ্ছেদ চেষ্টার অভিযোগে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ওলামা পরিষদ।
শুক্রবার বাদ জুম্মা নগরের চাষাঢ়া বাগ-এ জান্নাত জামে মসজিদের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। এর মাত্র ৭ দিন আগে শত কোটি টাকা মূল্যের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল চেষ্টার অভিযোগ এনে মেযর আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নগরের দেওভোগ ল²ী নারায়ণ আখড়ার পাশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
বিক্ষোভ সমাবেশে ওলামা পরিষদের নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কোন মসজিদ বা মাদরাসায় হাত দিলে লাখ লাখ আলেম ওলামা আল্লাহর ঘর রক্ষায় তাজা রক্ত দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে নারায়ণগঞ্জ হেফাজত ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মুফতি বশীরউল্লাহ বলেন, ফতুল্লার মাসদাইর কবরস্থানে একটি মাদরাসা ছিল। সেটি সিটি করপোরেশনের মেয়র আইভী উচ্ছেদ করে দিয়েছেন। এ ঘটনায় আমরা খুব আঘাত পেয়েছি। কিন্তু সিটি করপোরেশনের মেয়র আ্ইভী এবার নগরের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়া বাগ-এ জান্নাত জামে মসজিদ সংলগ্ন মাদরাসা উচ্ছেদে চিঠি দিয়েছেন। এমনকি তিনি নিজে এসে নাকি মাদরাসাটি উচ্ছেদে তাগাদা দিয়ে গেছেন। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই মসজিদ মাদরাসায় হাত দিলে দেশের আলেম ওলামারা বসে থাকবে না। আল্লাহর ঘর রক্ষায় বুকে তাজা রক্ষ দেওয়ার ইতিহাস আমাদের জন্য সামান্য বিষয়। তাছাড়া চাষাঢ়া বাগ-এ জান্নাত মসজিদটিও তিনি ভেঙ্গে দিতে চান। মসজিদ ভেঙ্গে দিয়ে তিনি নিচ তলায় মার্কেট করে উপর তলায় মসজিদ করতে চান। তিনি মেয়র আইভীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মেয়র আইভীর প্রতি আমরা দাবি জানাবো, ভাঙ্গার জন্য নয়, গড়ার জন্য আসুন।
মহানগর ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা ফৌরদাউসুর রহমান মেয়র আইভীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, আপনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাবান নন। প্রধানমন্ত্রী এই মাদরাসাকে মাষ্টার্স সম্মাননা দিয়েছেন। আর আপনি আসছেন মাদরাসা উচ্ছেদ করতে। আপনি যত শক্তি নিয়ে আসেন মাদরাসা উচ্ছদ করতে সফল হবেন না।
তিনি কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করেন। ভোটের জন্য কখনো হিন্দু সাজেন, আবার কখনো মুসলমান সাজেন। সিঁদুর দিয়ে প্রণাম করে কালি মন্দিরে সিজদা দেন। আপনি এখনো মুসলমান আছেন নাকি তা আমি মুফতি সমাজের কাছে ফতোয়া জানতে চাই। তিনি আরো বলেন, আপনি মাসদাইর কবরস্থানে থাকা একটি মাদরাসা উচ্ছেদ করে দিয়েছেন। আমরা এটা সহ্য করব না। অবিলম্বে আপনাকে ওই মাদরাসা পুনরায় স্থাপন করতে হবে।
মসজিদ কমিটির সদস্য শাহাদাৎ হোসেন সাজনু বলেন, চাষাড়া এলাকার মুসল্লীরা এখানে নামাজ আদায় করেন। ছোট বেলায় দেখেছি টিনের ঘরে নামাজ হতো। সম্পুর্ণ মুসল্লীদের অনুদানে সেই মসজিদ এখন ৩ তলা। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এখানে মসজিদ ভেঙ্গে শপিং মল আর মাদরাসা ভেঙ্গে পার্ক করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এই উদ্যোগ কখনোই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। মসজিদের উন্নয়ন করতে চাইলে উপরে পিলার দিয়ে করেন, কিন্তু শপিং মল করে দোকান বাণিজ্য করবেন সেটা হবে না।
স্থানীয় ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু বলেন, প্রয়োজনে কাউন্সিলর পদ থেকে অব্যাহতি নেবো। কিন্তু মুসলামানের প্রাণে আঘাত দেওয়াকে বরদাস্ত করবো না। শরীরের রক্ত ঢেলে দিবো, কিন্তু মসজিদ মাদরাসা ভাঙতে দিবো না।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাকির হোসাইন কাসেমী, সহ সভাপতি মাওলানা ইসমাইল আব্বাসী, ওবায়দুর রহমান খান নদভী, মুফতি হারুন অর রশীদ, মীর আহমেদ, মুফতি দেলোয়ার হোসেন, মুফতি আনিস আনাসারী, সাজ্জাদ হোসেন, মাওলানা তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
অভিযোগের বিষয়ে মেয়র আইভীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মাসদাইর কবরস্থান জামে মসজিদে যে মাদরাসা ছিল সেটি তিনি উচ্ছেদ করেননি। বরং যারা মাদরাসা পরিচালনা করতেন তারাই স্বেচ্ছায় নতুন মসজিদ নির্মাণ শুরু হলে মাদরাসাটি সরিয়ে নেন। বাগ-এ জান্নাত জামে মসজিদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে ২ হাজার চারশ বর্গফুট জমিতে মসজিদ গড়ে তুলতে ওই সময়ের পৌর কমিশনার তারা মিয়া সরদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর তারা অনুমোদন না নিয়েই ২০ শতাংশের উপর মসজিদ এবং ১১ শতাংশের উপর মাদরাসা নির্মাণ করেছে। আমি মসজিদ কমিটিকে বলেছি, যার সম্পত্তি তার অনুমতি ছাড়া মসজিদ নির্মিত হলে সেখানে নামাজই হওয়ার কথা নয়। তাই মসজিদ কমিটিকে বলেছি তারা যেন কাগজপত্র ঠিক করে সঠিক নিয়মে মসজিদটি নির্মাণের ব্যবস্থা করে।