* ৫টি গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলছে
মিরর বাংলাদেশ :
দুর্নীতি দমনে শিল্প নগরী নারায়ণগঞ্জে অ্যাকশন শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিতে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ২৮টি সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির ৫৫টি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এর মধ্যে ৫০টি অভিযোগের সমাধান করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সময় নির্ধারণ করে দেয়া দুদক । বাকি ৫টি গুরুতর অভিযোগ আমলে নিয়ে সরাসরি তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে দুদক।
এদিকে স্বাস্থ্যখাতে বেপরোয়া অনিয়ম দুনীতির অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযান শুরু করে দুদক। তারই অংশ হিসেবে বুধবার নারায়ণগঞ্জ শহরের একিিট বেসরকারী ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে অভিযান চালায় দুদক। অভিযানে ঐ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের অনেক জালিয়াতির প্রমান পায় দুদক।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী জানান, অভিযানের সময় নোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কমিশনের ভিত্তিতে ডাক্তার অলক কুমার সাহা রোগী পাঠানোর প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা দুদকের গনশুনানীতে অভিযোগ দায়ের করার পর অভিযান পরিচালনা করা হয়।
দুদকের কাছে ভুক্তভোগীরা ভূমি অফিসের এক কানুনগোর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, ডিপিডিসির বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আদায় করে গ্রাহকদের হয়রানি, রাজধানী উন্নয়ন করপোরেশনের বিরুদ্ধে নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ, তিতাসের বিরুদ্ধে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরেও আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে পুনরায় সেই সংযোগ স্থাপনের অভিযোগ এবং ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ দেয় । দুদক এসব অভিযোগ সিরিয়াসভাবে আমলে নিয়ে এ পাঁচটি অভিযোগ দুদক সরাসরি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
দুদকের গণশুনানিতে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, বিআইডব্লিউটিসি, রাজউক, ভূমি অফিস, সাবরেজিস্ট্রার, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, বিআইডব্লিউটিএ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, জেলা কারাগার, জেলা পুলিশ, সদর উপজেলা আনসার ও ভিডিবি, খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালসহ ২৮টি সংস্থার বিরুদ্ধে। এসব সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী সেবা গ্রহীতারা।
এরমধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জে চিহ্নিত এক দালালকে এলাকাবাসী ধরিয়ে দিলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠে তিতাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এছাড়া অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরেও পুনরায় সেই সংযোগ স্থাপনের অভিযোগ তোলেন আরেক অভিযোগকারী। সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে রাস্তা নির্মাণ কাজে এক ব্যক্তির জমি দখলের অভিযোগ তোলেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। এতে ওই ব্যক্তি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে জানান তিনি। রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ করেন এক ভুক্তভোগী।
এছাড়া শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, পর্যাপ্ত মেশিনপত্র থাকা পরেও রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করার সুযোগ না দেয়া এবং দালালচক্রের প্রভাবসহ কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং চিকিৎসা সেবার মান নিয়েও অভিযোগ উঠে দুদকের গণশুনানিতে। হাসপাতালটির চিকিৎসক অলক কুমার সাহার বিরুদ্ধে একজন অভিযোগ করেন, হাসপাতালে পরীক্ষা না করিয়ে কমিশনের বিনিময়ে বেসরকারি নিম্নমানের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেয়াসহ স্লিপ প্রদান করে থাকেন তিনি।
জেলা পুলিশের ডিএসবি শাখার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্টের গ্রাহকদের ভেরিফিকেশন প্রদানের ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ ও অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। জেলা সিআইডি পুলিশের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলার বাদীকে দীর্ঘদিন হয়রানি ও ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঘুষ আদায়ের অভিযোগ করেন এক ভুক্তভোগী নারী। সিআইডির আরও এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করেন এক ভুক্তভোগী। জেলা প্রশাসনের এল এ শাখার এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ড ও কানুনগোর বিরুদ্ধে ভুয়া ব্যক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জাল দলিলের পক্ষে নামজারি করার অভিযোগ করেন এক ভুক্তভোগী। ফতুল্লা রাজস্ব সার্কেল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একই ধরণের অভিযোগ উঠে। বন্দর উপজেলার কুঁড়িপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদারের বিরুদ্ধেও নামজারির জন্য আবেদনকারীর কাছে বিশ হাজার টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠে। রূপগঞ্জ ভূমি অফিসের কানুনগোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠে। সিটি করপোরেশনের খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করলেও সংস্থাটি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এমন অভিযোগও উঠে দুদকের গণশুনানিতে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ২৮টি সংস্থার বিরুদ্ধে মোট ৫৫টি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫০টি অভিযোগ সমাধান করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তবে গুরুতর ৫টি অভিযোগ দুদক আমলে নিয়ে নিজ দায়িত্বে তদন্ত করবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’
দুর্নীতি দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেন, ‘সব ধরণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দুদক গ্রহণ করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি অভিযোগকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দুদক নিশ্চয়তা দেবে। অভিযোগকারীরা যাতে কারোর দ্বারা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে ব্যাপারে দুদক আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার করবে।’
তিনি বলেন, ‘সেবা গ্রহীতাদেরও সব কাজে সতর্ক এবং তৎপর হতে হবে। কোনো ব্যক্তি সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হলে দুদকের জেলা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করবেন। প্রয়োজনে দুদকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নিজে ব্যবস্থা নেবেন ।