মিরর প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ : করোনার এপিসেন্টার নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রায় প্রতিদিন শুনতে পাওয়া যায় করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর সংবাদ। পরিস্থিতি এমন, করোনার ভয়ে প্রিয় মানুষটির কাছে আসতেও নারাজ স্বজনরা। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে পরেন। এমন পরিস্থিতিতে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন একই পরিবারের ৬ সদস্য। ওই পরিবারের ৮ সদস্যের মধ্যে ৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বর্তমানে তাদের মধ্যে ৬ সদস্য সুস্থ আছেন। গত মাসে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি জেলা সাধারণ সম্পাদক সভাপতি শিবনাথ চক্রবর্তীর পরিবারের ৭ সদস্য করোনা আক্রান্ত হন। তারা হলেন, শিবনাথ চক্রবর্তী (৭০), তার স্ত্রী শিল্পী চক্রবর্তী (৬২), বড় ছেলে শিশির চক্রবর্তী (৪৪), ছেলের স্ত্রী মনিকা মিত্র (৩২), বড় নাতি মনীষ চত্রবর্তী (১০), ছোট নাতি অর্হমিস (১৮ মাস) এবং বড় ভাই বিশ্বনাথ চক্রবর্তী (৭৪)। বর্তমানে এই পরিবারের ৭ জন সুস্থ আছেন। গত ২২ এপ্রিল সকলের নমুনা পরীক্ষা করা হলে বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। দ্বিতীয় দফায় ৩০ এপ্রিল পরিবারের সকলের নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৬ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ, শুধু শিশির চক্রবর্তীর রিপোর্ট পজেটিভ আসে। এরপর গত ৪ মে তৃতীয় দফায় পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রেরণ করা হয়েছে। শিবনাথ চক্রবর্তী জানান, ২ এপ্রিল জ্বর অনুভব করেন তার বড় ভাই ৭৪ বছর বয়সী বিশ্বনাথ চক্রবর্তী। পরে পারিবারিক চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী রাজধানীর আজগর আীল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা দেন। পরে ১৪ এপ্রিল নমুনার পরীক্ষায় বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর করোনা শনাক্ত হয়। এরই মধ্যে শিবনাথ চক্রবর্তী ও তার পুত্রবধুর শরীরে করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। তাই ১৫ এপ্রিল ওই পরিবারের বাকি ৭ সদস্যের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ১৯ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষায় ৭ জনের মধ্যে ৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থাকেন এই পরিবার। শিবনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘বড়দা’র যখন জ্বর আসে তখন আমরা ঘাবড়ে যাই। তার বয়স বেশী এবং ডায়বেটিসসহ বিভিন্ন রোগ আছে। তখন নমুনা পরীক্ষার তেমন ব্যবস্থাও ছিল না। ভিকারুননিসা নুন স্কুলের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের সাহায্যে ও পারিবারিক চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে তার নমুনা পরীক্ষা করাই। এদিকে ৫ এপ্রিল থেকে আমার করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। আমার পর পুত্রবধু মনিকার। পরে একে একে আমরা ৭ জন আক্রান্ত হই। আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে বলা হয়। তখন বিএমএ জেলার সাধারণ সম্পাদক ডা. দেবাশীষ সাহা বলেন, বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে। প্রয়োজনে নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি হতে। এরপর থেকে আমরা বাড়িতে আইসোলেশনে আছি।’ শিবনাথ চক্রবর্তী জানান, আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আইসোলেশনে ছিলেন তারা। প্রতিদিন সকালে পরিবারের সকলে গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা, দিনে নিন্মতম ৭ ঘন্টা ঘুম, চা পান করা, ভিটামিন সি, প্রোটিনযুক্ত খাবার, সবুজ সাক-সবজি গ্রহণসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতেন তারা। শিবনাথ বলেন, ‘অসুস্থ অবস্থায় সকলের সহযোগিতা পেয়েছি। আমাদের প্রতিবেশী, স্বজন, দলীয় লোকজন সবার। সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন চিকিৎসকরা। তারা প্রতিনিয়ত আমাদের খোঁজ খবর নিয়েছেন, চিকিৎসা পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের কারণে এখন আমরা সুস্থ্য।’ করোনা পরীক্ষার বিড়ম্বনা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষা করানোর পর রিপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বিড়ম্বনায় পরতে হয়েছে। নমুনা দেয়ার অনেক দিন পর রিপোর্ট আসে। আবার রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে সেটা দেয়ই না। রিপোর্ট না দেয়াটা আমাদের কেন, সকলকে বিভ্রান্ত করে। আমরা সকলেই করোনা আক্রান্ত, সব সময় চিন্তিত থাকি। রিপোর্ট পেলে নিশ্চিন্ত হতে পারি।