মিরর বাংলাদেশ :
নারায়নগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন মামলার রায় কার্যকরের আশায় বুক বেঁধে আছেন স্বজনরা। নিহতদের পরিবারের আশা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখবেন আপিল বিভাগ।
নির্মম এ হত্যাকান্ডের ৮ বছর আজ।
মামলার বাদী নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি জানান,আমরা অপেক্ষায় আছি, আসামিদের উপযুক্ত শাস্তি দেখতে পাবো। আমি চাই রায় কার্যকরের মাধ্যমে মানুষ দেখুক খুনিদের পরিনতি কি হয়।
তিনি অভিযোগ করেন,প্রধান আসামী নূর হোসেন ফিরে আসবে এমন গুজবে তারা আতঙ্কিত। অভিযুক্ত আসামীদের বিচার দ্রুত কার্যকর করা দাবি জানান মামলার বাদী।
জানা যায়,
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার রায় বাস্তবায়নের অপেক্ষায় স্বজনরা। সাবেক র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন, এম এম রানা, সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদন্ড উচ্চ আদালতে বহাল থাকলেও, আসামিরা সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করায় মামলা দুটি এখন বিচারাধীন।
তবে করোনার কারণে আপিল শুনানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি জানান,সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ যেহেতু এখন কোন মামলা নিচ্ছে না
কোর্ট রেগুলার হলে মামলাটির শুনানী শুরু হবে। তখন মামলা শুনানির জন্য বাদীপক্ষ আবেদন না করলে আমরা আবেদন জানাবো।
অন্যদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবী এস এম শাহাজান জানান,আপীল শুনানির জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।তিনি জানান,এ ঘটনায় দুইটা মামলা যেটা অবৈধ।
জানা যায়, মামলায় র্যাব ১১ এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ, সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত।
এরমধ্যে র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, এমএম রানা, আরিফ হোসেন ও নূর হোসেন’সহ ১৫ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছেন উচ্চ আদালত। সাজা কমে যাবজ্জীবন হয় ১১ আসামির।
উচ্চ আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। যা এখনো বিচারাধীন।
চাঞ্চল্যকর এই মামলার আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, ৭ খুনের মামলাটি আপিল বিভাগে রয়েছে। রাষ্টপক্ষ মামলাটি গুরুত্ব দিলে দ্রুত শুনানি হতে পারে। আদালত যে আদেশ দিবেন তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে হাজিরা শেষে প্রাইভেটকারযোগে বাড়ি ফিরছিলেন নাসিকের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও সিনিয়র আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার গাড়িচালক ইব্রাহীম। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে আসলে সাদা পোশাক পরিহিত র্যাব সদস্যরা তাদের ৭ জনকেই অপহরণ করে। এর তিন দিন পর অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত নজরল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক ২টি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই দুটি মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নূর হোসেন, র্যাবের চাকরিচ্যুত অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, উপ-অধিনায়ক মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও ক্যাম্প ইনচার্জ লে. কমান্ডার (অব.) এম এম রানাসহ ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট নূর হোসেন ও র্যাব-১১ সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।