পছন্দের ভেন্যুতে সমাবেশ করতে অনঢ় আওয়ামীলীগ- বিএনপি-জামায়াত

256

মিরর বাংলাদেশ :
স্বল্প সময়ের মধ্যে ২৮শে অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ভেন্যু পরিবর্তন সম্ভব না বলে ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) জানিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাই পূর্ব নির্ধারিত বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেইটে-ই সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে দলটি।

বৃহস্পতিবার পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দিন মিয়া বরাবর এক চিঠিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ এ কথা জানান।
অন্যদিকে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের জানান, আগামী ২৮শে অক্টোবর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেইট, অনলি ওয়ান ভেন্যু আই ম্যানশন। যেটা বলেছি সেটাই।

ডিএমপিকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, সমাবেশে লোকসমাগম সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে এবং সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হবে। সমাবেশে প্রায় ২ লাখ লোক হবে। সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে পল্টন মোড়, জিপিও মোড়, শিক্ষা ভবন, গোলাপ শাহ মাজার, নতুন ভবন, নবাবপুর সড়ক, মহানগর নাট্যমঞ্চ, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল সড়ক এবং স্টেডিয়াম পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সমাবেশে বক্তব্য প্রচারের জন্য উল্লিখিত স্থানগুলোতে মাইক স্থাপন করা হবে। সমাবেশে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মী সমর্থক, নারী সংগঠন, তরুণ প্রজন্ম ও সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করবে। সমাবেশে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে।

স্থান সম্পর্কে বলা হয়, ২৮শে অক্টোবর শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এমতাবস্থায় স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ভেন্যুতে নতুনভাবে সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ দুরুহ ব্যাপার।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ২৮শে অক্টোবর, শনিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের অনুষ্ঠানস্থল ও তার সংলগ্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের বিনীত অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই করতে অনড়।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পল্টন থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন মিয়াকে দেওয়া চিঠিতে বিএনপির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নয়া পল্টনে সমাবেশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং সেখানে সোয়া লাখের মতো লোকসমাগম হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

পল্টন থানার ওসিকে চিঠিটি পাঠান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। চিঠিতে বলা হয়েছে, গতকাল ২৫ অক্টোবর দিবাগত রাতে আপনার (ওসি) স্বাক্ষরিত একটি পত্র বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গৃহীত হয়। পত্রে ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশ সম্পর্কিত সাতটি তথ্য জানতে চাওয়া হয়। ক্রমানুসারে সাতটি তথ্যের জবাব নিম্নরূপ:

১। সমাবেশ বেলা ২টায় শুরু হবে এবং মাগরিবের আজানের আগে শেষ হবে।

২। সমাবেশে এক লাখ থেকে সোয়া লাখ লোক হতে পারে।

৩। সমাবেশটি পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় ও পূর্বে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

৪। সমাবেশ উপলক্ষে পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় এবং পূর্বে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত কিছু দূর পর পর মাইক লাগানো হবে।

৫। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন না।

৬। সমাবেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দলের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন, যার সংখ্যা হবে ৫০০ জন।

৭। ২৮ অক্টোবরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়া পল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনেই আয়োজনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অন্য কোনও ভেন্যুতে যাওয়া সম্ভব হবে না।

এদিকে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরেই আগামী ২৮ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামী মহাসমাবেশ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। মহাসমাবেশ সফল করতে প্রশাসন এবং দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বিকালে মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা জানান।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ২৮ অক্টোবর মতিঝিল শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করবে জামায়াত।’

ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, ‘বাংলাদেশের সংকটময় এক কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর মাত্র কিছুদিন পরই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অথচ এখনো নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করা পূর্বশর্ত। কিন্তু সরকার লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করার কোনো চিন্তাই করছে না।’

জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ গোটা জাতি মনে করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। সরকার গণতন্ত্রকামী মানুষের সে দাবি পাশ কাটিয়ে যেনতেন প্রকারে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিনা ভোটের সরকার দলীয় বিবেচনায় প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়েছে।’

‘২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে বিএনপির লোক আখ্যা দিয়ে তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, যাতে তিনি কেয়ারটেকার সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিতে না পারেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে বহু মানুষকে হত্যা করে দেশে এক ভয়াবহ অরাজকতা তৈরি করা হয়েছিল। জাতির প্রশ্ন দলীয় লোক বিবেচনায় বিচারপতি কে এম হাসানের অধীনে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে সম্ভব? এটি শেখ হাসিনার দ্বিমুখী আচরণ।’বলেন ভারপ্রাপ্ত আমির।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। অথচ জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে বারবার লিখিতভাবে আবেদন জানানো সত্ত্বেও প্রশাসন সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা না করে উল্টো বাধা দিচ্ছে।’

‘জামায়াতে ইসলামী তার সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী আগামী ২৮ অক্টোবর শনিবার রাজধানী ঢাকা মহানগরীর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়ে পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিতভাবে অবহিত করেছে। পক্ষপাতদুষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন- জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। পুলিশের দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা, বাধা দেওয়া নয়। তার এই বক্তব্য অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক, এখতিয়ার বহির্ভূত ও বেআইনি। পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

মুজিবুর রহমান বলেন, বিগত সময় অসংখ্যবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করার সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। এটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক।