পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনা উসকানি দিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত করেছে : ডা শফিকুর রহমান

43

ইউসুফ আল আজিজ :
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েও দেশের মধ্যে উসকানি দিয়ে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। মুক্তিপাগল মানুষ এসব সহ্য করবে না। এদেশের হাজার হাজার মানুষ যারা খুন গুম হলো, রক্তাক্ত পঙ্গু হয়ে এখনো হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে সেসময় আপনারা উস্কানি দেন এটা কি বাংলাদেশের মুক্তিপাগল মানুষ সহ্য করবে ? উস্কানির কারণে যত পরিবেশ সৃষ্টি হবে তার সমুদয় দায় উস্কানিদাতাদের নিতে হবে।
শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা শফিক বলেন, পতিত স্বৈরাচার সরকারের আমলে দেশ থেকে গত সাড়ে ১৫ বছরের ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।’ সেগুলো ফেরত এনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এদেশের কল্যাণ সুষম ব্যয় করার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক ধান্দাকে ঘৃণা করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন দেশের স্বপ্ন দেখে যেখানে ঘুষ দুর্নীতি থাকবে না।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ এতোদিন অনেক কষ্টে ছিল। এই নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজধানী বানিয়ে রাখা হয়েছিল। আমাদের তৎকালীন জামায়াতের আমীর ছিলেন গোলাম আযম। তার বিরুদ্ধে এই শহরের এক গডফাদার নারায়ণগঞ্জের সড়কে ৭২ ফিট লম্বা ব্যনাার টানিয়েছিল। তাতে লিখা ছিল, নারায়ণগঞ্জে গোলাম আযমের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ডিসি, এসপির উপস্থিতিতে গডফাদার শামীম ওসমান বলেছিলেন, আমার বিরুদ্ধে খুনের অগ্রিম মামলা করে রাখেন। আমি অধ্যাপক গোলাম আজমকে খুন করতে চাই।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে গোলাম আযম সাহেব মারা যান। গডফাদারের সুযোগ হয় নাই? আজ তিনি কোথায়? নারায়ণগঞ্জে নেই? এতো অহংকার ভালো না, দাম্বিকতা ভালো না। সন্ত্রাসকে কখনো পশ্রয় দিতে হয় না। তাহলে দুনিয়াতেই তার করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়। এছাড়া আখিরাতে তাকে শূলে চড়াবেন। যেটা হবে আগুনের মহাকুন্ড। তাই বলি, তওবা করুন। মানুষ মতো মানুষ হোন।
জামায়াত আমির বলেন, গত ৫৪ বছর এই জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল। আর সুকৌশলে এই বিভক্তি সৃষ্টি আওয়ামী লীগ করেছিল। তারা বিভক্তির শুরু করেন পাহাড়িদের নিয়ে। তারা ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা সবাই বাঙ্গালী। কিন্তু এটা নিয়ে পাহাড়িরা প্রতিবাদ করেন। তখন থেকে এই যে বিভক্তি শুরু হয়েছে তা এখনো চলমান রয়েছে। এখনো ওইখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় নাই। তারা এখন বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজেরা সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। এই বিভক্তি যতোদিন থাকবে ততোদিন এই জাতির মধ্যে একতা সৃষ্টি হবে না। যা দেশের মানুষ গত ৫৩ বছর প্রত্যক্ষ করেছেন।
তিনি বলেন, দেশের একজন নাগরিকের সব অধিকার পাওয়ার অধিকার আছে। এটাই মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। আমাদের এই সমাজ হবে বৈষম্যহীন। আওয়ামী লীগ দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। প্রশাসনকে, বিচার ব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগ পুরোদমে ধ্বংস করে দিয়েছে।
ডা শফিক বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সবার আগে শিক্ষাব্যবস্থায় হাত দিবে। এদেশের ছাত্র সমাজের জন্য উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা করে তুলবে। শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার পর কাউকে আর বেকার থাকতে হবে না। প্রত্যেকের জন্য যথোপযুক্ত কর্মের ব্যবস্থা করা হবে। নারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হবে। এদেশের কৃষি শিল্প, এগ্রো শিল্পগুলোকে আরও সমৃদ্ধশালী করা হবে।
জামায়াত আমির বলেন, এই বাংলাদেশে কে কোন ধর্মের এই প্রশ্ন সম্পূর্ণ অবান্তর। ১৮ কোটি মানুষের দেশ একটা সাজানো ফুলের বাগান। আল্লাহ যাদেরকে এই বাগানে পয়দা করেছেন মিলেমিশে সবাই হবে এর অধিবাসী। বাংলাদেশের সংবিধান সবাইকে সাংবিধানিক অধিকার দিয়েছে। বিগত ৫৪ বছর এ জাতিকে ভাগ করে রাখা হয়েছে। এই কাজটি সুকৌশলে আওয়ামীলীগ করেছে। বিভক্ত জাতি কখনো বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনা।
তিনি বলেন, সংবিধান যতগুলো অধিকার দিয়েছে সবগুলো এদেশে নিশ্চিত হবে। শাসন ক্ষমতায় যারা যাবে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব এটা কোন দয়ার দান নয়। বাঁচার অধিকার, সম্মান পাওয়ার অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার, স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার, সন্তানের শিক্ষা পাওয়ার অধিকার, কাজের অধিকার সহকিছু তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। এটাই স্বাধীনতার মূল চেতনা। এই সমাজ হবে বৈষম্যহীন, মানবিক।
শেখ হাসিনার সরকার সবগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছেন উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, তিনটি মৌলিক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পার্লামেন্ট, নির্বাহী ও বিচার ব্যবস্থার সবগুলোতে আওয়ামীলীগ ধ্বংস করেছে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক এজলাসে দাঁড়িয়ে বলতে পারেন আমি হচ্ছি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। লজ্জা! একজন বিচারক যখন শপথ নেন তখন তিনি বলেন, আমি কারো প্রতি কোন পক্ষ বিপক্ষ অবলম্বন করবোনা, নিরপেক্ষ থাকবো। যার যা পাওয়া বিচারে সে তাই পাবে। সে যখন বলে আমি অমুক দলকে অন্তরে ধারণ করি, তার পক্ষে কি ন্যায়বিচার সম্ভব ?
তাদের কেউ কেউ এদেশের নন্দিত গর্বিত ব্যক্তিদের রায় দেয়ার পর টক শোতে গিয়ে বলতেন, অমুককে আজ ফাঁসি দিয়ে এসেছি। নাম ধরে ধরে বলতেন। তিনি একজন বিচারপতি তিনি টক শোতে যাবেন কেন? তার তো বিচারাঙ্গনের বাইরে বিচরণের কথা নয়। সেই বিচারকরা সিলেট সিমান্ত দিয়ে পার হতে নিয়েছিলেন, জনগন তাদের জঙ্গলের মধ্যে আবিষ্কার করলেন। তার অপকর্ম ছিল আকাশ্চুম্বী তাই সাহসের সাথে তিনি বাংলাদেশে থাকেননি।
তিনি আরো বলেন, এমন দেশ হবে যেখানে কোন দুর্নীতি দুঃশাসন থাকবেনা। নারায়ণগঞ্জেও যদি চাঁদাবাজি দখলদারি হয়, অফিস আদালতে ঘুষ চলে, তাহলে কেন এতগুলো মানুষের জীবন গেল, কেন এত মানুষ পঙ্গু হলো, কেন এতগুলো রক্তের ফোটা ভাসলো ? আমি বিনয়ের সাথে দল মত ধর্মের ঊর্ধে উঠে অনুরোধ করবো এই অপকর্মের সাথে যারাই জড়িত আছেন মেহেরবানি করে এই অপকর্মগুলো ছেড়ে দেন। এই অপকর্ম করলে এই শহীদদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। তাদের রক্তের সাথে অপমান করা হবে। ১৮ কোটি মানুষকে অপমান করা হবে। মানুষকে স্বস্তিতে বাঁচতে দেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর আমির মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা অঞ্চল দক্ষিণের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য ও জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য ড. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া। ****
কামাল উদ্দিন সুমন নারায়ণগঞ্জ । ০১৭১২৫২৭৯৫৯