প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর বিরক্তি

262

মিরর বাংলাদেশ : উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ায় বিরক্ত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রæত করতে হবে। কেননা দেরি হলে ব্যয় যেমন বাড়ে, তেমনি জনগণও সঠিক সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়।
মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে এমন বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি। একনেকসভা শেষে ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ এবং আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমসহ অন্য সদস্যরা।
নেত্রকোনা-বিশিউড়া-ঈশ্বরগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করতে গিয়ে বিরক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেননা প্রকল্পটি ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু এখন মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মূল ব্যয় ছিল ২৬১ কোটি টাকা। এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় আমাদের ইউরিয়া সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সার উৎপাদন করতে গেলে প্রচুর গ্যাসের প্রয়োজন হয়। যার ফলে মাঝে মাঝে গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। এজন্য একনেক সভায় অনেকে বিদেশে কারখানা করে সার উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।’
একনেক সভায়, ৭২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ প্ল্যান্ট স্থাপন’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদেশে সার উৎপাদন করতে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করতে পারবে। বিদেশে উৎপাদিত সেই সার বাংলাদেশের চাহিদা মেটাবে। উদ্যোক্তারা চাইলে বাইরের দেশেও ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে গ্যাসের সংকট কমবে এবং বিদেশে বিনিয়োগও বাড়বে।’ তবে দেশের স্বার্থ যেন আগে রক্ষা হয় সেই বিষয়টি উদ্যোক্তাদের নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘‘হাওরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘হাওর এলাকায় পিলারের সাহায্য নিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে।’ এই জন্য সকল ধরনের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’’
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হাওরে যেখানে ছোট সেতু দরকার, সেখানে তা করতে হবে। যেন ঠিক মতো পানি চলাচল করতে পারে। চলাচলকৃত নৌকার কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা যেন সৃষ্টি না হয়। খুঁটি দিয়ে ছোট ছোট সেতু বানিয়ে ফেলতে হবে। হাওরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে। ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ প্রজেক্টের (সিএসএডবিøউএমপি) আওতায় সিলেট অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নও করা হবে।’’ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় সিলেট হাওরের কথা উঠে আসে।
বিটাকের ৬টি নতুন আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপনসহ ১০ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৫৫ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ১ হাজার ৫৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, নেত্রকোনা-বিশিউড়া- ঈশ্বরগঞ্জ সড়ক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। ১৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
শেখ হাসিনা সেনানিবাস বরিশাল স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩১ কোটি ১০ লাখ টাকা। ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ৮ লাখ টাকা।
আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুর এর এ্যাপ্রোচ সড়ক প্রশস্তকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২ লাখ টাকা।
ফ্লাড এন্ড রিভারব্যাংক ইরিশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ (ইউএফ-৮৫) প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, রংপুর, জামালপুর এবং যশোর জেলায় বিটাকের ৬টি কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৩২ কোটি ৬১ লাখ টাকা।