প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজ শুভঙ্করের ফাঁকি, আওয়ামী লীগ সরকারি রিলিফও লুট করছে: রিজভী

595

মিরর বাংলাদেশ:   করোনাভাইরাস সঙ্কটে সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণের চাল সারাদেশে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বেছে বেছে নিজস্ব লোকজনের মধ্যে বিতরণ করছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। একইসাথে প্রধানমন্ত্রী ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার যে প্রণোদন ঘোষণা করেছেন সেখানে অসহায় গরিব মানুষের জন্য কোনো কিছুই বরং সেটি শুভঙ্করের ফাঁকি বলে দলটির দাবি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ সোমবার সকালে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব কথা বলেন। তিনি গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, গরীব মানুষের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। ত্রাণের চাল চুরি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তা থাকলেও থেমে নেই অপকর্ম। প্রতিদিনি সংবাদপত্রে আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনেক নেতাদের বিরুদ্ধে ত্রাণের চাল চুরি ও লুটপাটের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কারো কারো গুদামে অভিযান চালিয়ে বিক্রয় নিষিদ্ধ ভিজিডির চাল, ত্রাণের চাল উদ্ধার করা হচ্ছে। এতদিন হয়েছিল সরাসরি টাকা লোপাট, এখন হচ্ছে রিলিফ লোপাট। রিজভী বলেন, দেশের বর্তমান সঙ্কট মানুষের বাঁচা-মরার সঙ্গে জড়িত। এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিএনপি সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত। কারণ বিএনপি বিশ্বাস করে, ‘দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি’।

লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার পাঁচটি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তার এই প্যাকেজগুলো মূলত সরকার সমর্থক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের কম সুদে ব্যাংক থেকে ঋণের সুবিধা দেয়া। ঋণ দেয়া তো ব্যাংকের স্বাভাবিক ব্যবসা। এটা তো প্রণোদনা নয়। সুদের হারের কমানো যে অংশটুকু সরকার ভর্তুকি দেবে, প্রণোদনা শুধু সে অংশটুকুই। কাজেই মোট ঋণের সাড়ে ৭২ হাজার কোটি টাকাকেই প্রণোদনা প্যাকেজ হিসেবে দেখানো আসলে মস্ত একটা শুভঙ্করের ফাঁকি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেড় কোটি মানুষ কর্মচ্যুত হতে যাচ্ছে। এসব মানুষ ও তাদের পরিবারকে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ প্রতি পরিবারে ৪ জন করে হিসাব করা হলেও প্রায় ৫ কোটি মানুষকে খাবার সরবরাহ করতে হবে। সেটার কোনো কার্যকর পরিকল্পনা নেই এই প্যাকেজে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে প্রকট ভুক্তভোগী দরিদ্র লোকেদের বাঁচাবার জন্য কিছু আছে কি এই প্যাকেজে? ক্ষুধা লকডাউন বোঝে না, কোয়ারেন্টিন বোঝে না, বোঝে না সামাজিক বা শারিরিক দূরত্ব। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ‘লকডাউন’ করা হয়েছে এই দিনমজুর শ্রেণীর খাবারের ব্যবস্থা করে। আর আমাদের দেশে প্রনোদনা প্যাকেজেও এই মানুষগুলোর জন্য কিছু নেই। এরা তাহলে কি করবে, কোথায় যাবে? এছাড়াও বিভিন্ন সেবামূলককাজে যারা জড়িত তাদের নিরাপত্তা ও ঝুঁকিভাতার কথা কোথাও নেই। বিশেষ করে এতদিন ধরে গণমাধ্যমকে সহায়তার যে কথা বলা হয়েছিল তাও প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজে উল্লেখ নেই। অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণমাধ্যমের কর্মীরা দায়িত্ব পালন করছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত বিশ্ব। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। আমাদের দেশে গত দুই দিন ধরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। যা ভীতিকর পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। শুধু বাংলাদেশই নয় সারাবিশ্ব এক অকল্পনীয় কঠিন সংকটের মুখোমুখি। আমরা কিংবা বিশ্বের হাতেগোনা সৌভাগ্যবান শতায়ু মানুষেরাও তাদের জীবদ্দশায় কখনোই এমন ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হননি। বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলনা করা হচ্ছে বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়ঙ্কর হিসেবে। এমনও ঘোরতর সংকটেও বাংলাদেশ সরকারের হেয়ালি দেশের জনগণকে অসহায় করে তুলেছে। সরকার বিষয়টি নিয়ে জনগণের সঙ্গে কেনো এতো লুকোচুরি করছে এটি বোধগম্য নয়। দেশের ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীরা প্রতিদিন যেভাবে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ও স্ববিরোধী বক্তব্য মন্তব্য করছেন, তাতে মনে হয় সরকার এখনো পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলদ্ধি করতে পারছেনা। অনেকেই দেখছেন, এখানে সেখানে মানুষের মরদেহ পড়ে থাকার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। এটি শুভলক্ষণ নয়।
রিজভী বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছি, এই সঙ্কটটি আমরা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করতে চাই না। কারণ, এ কারণে আপনারা জানেন- আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ২৪ মার্চ তার বক্তব্যে স্পষ্ট করেই বলেছেন ‘দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে অবশ্যই বর্তমান সরকারের বৈধতার সঙ্কট রয়েছে, কিন্তু চলমান করোনা ভাইরাস সঙ্কট অত্যন্ত ভয়াবহ এবং বিপর্যয়কর। বর্তমান সংকটে আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরার পরও আপনারা দেখছেন, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কিংবা হাসান মাহমুদ বিএনপির বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথা বলা তাদের অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। আওয়ামী লীগের কথার জবাব দিয়ে বিএনপি সময় নষ্ট করতে চায় না। আমরা বরং সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলতে চাই, যেহেতু রাষ্ট্রীয় অর্থ ও রাষ্ট্রীয় যন্ত্র আপনাদের হাতে সেহেতু এই মুহুর্তে দেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানো আপনাদের দায়িত্ব।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশের হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে সরকার যে আচরণটি করেছে, এটি কোনো সভ্য রাষ্ট্র কিংবা সভ্য সরকারের আচরণ হতে পারেনা। শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অবস্থানগত পার্থক্য সর্বোপরি সমন্বয়হীনতা সংশ্লিষ্ট সবাইকে মর্মাহত করেছে। কারখানা খোলা ও বন্ধ রাখা নিয়ে লুকোচুরি খেলা খুবই ন্যক্কারজনক। চাকুরি হারানোর ভয়ের কাছে মৃত্যু ভয়কেও হার মানিয়েছে পোশাক শ্রমিকসহ নিন্ম আয়ের মানুষজনকে। যে পরিমাণে জনসমাগম হলো, তা সত্যিই আতঙ্কের। আমাদের মনে ভয় জাগছে। জানিনা আমরা ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি কি না?
রিজভী বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা ছাড়াও, ভ্যান চালক, কুলি, মজুর, কায়িক শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষসহ বিভিন্ন পেশার লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরবন্দি। দুমুঠো খাবারের জন্য তাদের হাহাকার আর আহাজারির খবর আসছে। ত্রাণের আশায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে মানুষ। প্রতিটি মোড়ে, অলিগলিতে নিরন্ন বুভুক্ষ মানুষের সারি। এতোদিন মন্ত্রীদের ভাষায়-আমাদের দেশ তো সিঙ্গাপুর- ব্যাংকক ছিলো! বিশ্বের রোল মডেল ছিলো। দেশে কুলখানির দাওয়াত দেয়ার জন্য নাকি ভিক্ষুক খুঁজে পাওয়া যেতো না। রাস্তায় বের হলে আমাদের মন্ত্রীরা ভিক্ষুক খুঁজে পেতেন না। মন্ত্রীরা আশ্বাস দিয়ে বলতেন, এই তো আর কিছুদিন পর আমরা কানাডায় রুপান্তরিত হবো। কিন্তু এখন শুনি ডাক্তারের পিপিই নাই। ভেন্টিলেটরতো সোনার হরিণ। গতকালও আইইডিসিআরের ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যের ডিজি সামর্থ্যবানদের সহায়তা চেয়েছেন। ঢাকার বাইরে করোনা পরীক্ষার কীট নাই। মধ্যবিত্তের পকেটে টাকা নাই। গরীবের পেটে ভাত নাই। চারদিকে কেবল নাই, নাই, নাই!
তিনি বলেন, এইসব মানুষদের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করতে সরকার সারাদেশে যেসব চাল বরাদ্দ করেছে ইতোমধ্যেই এইসব চাল বিতরণের জন্য তৈরী করা তালিকা নিয়ে দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে। রাজধানী আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বেছে বেছে নিজস্ব লোকজনের মধ্যে চাল বিতরণ করছেন। এ মহা দুর্যোগের আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতারা মিথ্যা কথা বলা থেকে সরে আসতে পারেনি। গতকালও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন- ‘বিএনপি জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি’। কিন্তু আপনারা দেখেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল এমনকি ওলামা দল দুস্থ মানুষকে চাল, ডালসহ খাদ্য সামগ্রি, সাবান, জীবাণুনাশক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করছেন।