মিরর বাংলাদেশ : লাদাখ সীমান্তে চীনা সৈন্যদের সাথে সংঘাতের জেরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২০ জন সদস্য মারা যাওয়ার পর প্রয়োজনে ‘সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে’ও নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করার অঙ্গীকার করেছে ভারত। বিবিসি বাংলা এ খবর জানায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছেন, ভারতের সীমান্তের ভেতরে কোনো বিদেশি সৈন্য নেই এবং ভারতের সীমানার ভেতরের কোন অংশের দখলও তারা হারায়নি।
তবে হিমালয়ে বিরোধপূর্ণ সীমান্তে সংঘর্ষের পর কতজন সৈন্য হতাহত হয়েছে, সে বিষয়ে এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি চীন।
দুই দেশের মধ্যে সীমান্তের এই এলাকা ভালভাবে চিহ্ণিত নয়। এই গালওয়ান উপত্যকার আবহাওয়া অত্যন্ত বৈরি, সেই সাথে এর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক ওপরে।
এলাকাটি যে কোনরকম ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে থাকে, যা স্পষ্ট সীমানা নির্ধারণ আরও কঠিন করে তোলে।
পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন দুই দেশ একে অপরের সেনাদের বিরুদ্ধে সীমান্তরেখা অতিক্রম করে সংঘর্ষে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে।
ভারত দাবি করেছে লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে হওয়া ঐ সংঘাতে দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
শুক্রবার টেলিভিশনে প্রচার হওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন ভারতের সেনাবাহিনীকে ‘প্রয়োজনীয় সব ধরণের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পূর্ণ ইঙ্গিত’ দেওয়া হয়েছে, যেন তারা ভারতের সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।
তিনি বলেন, “পুরো দেশ চীনের পদক্ষেপের ফলে আহত ও ক্ষুদ্ধ হয়েছে। ভারত শান্তি ও বন্ধুত্ব চায়, কিন্তু সার্বভৌমত্ব ধরে রাখা সর্বাগ্রে।”
মোদী দাবি করেন, গত সোমবারের সংঘর্ষের পর ভারতের সীমানার ভেতরে ‘কেউ অবস্থান করছে না, আর ভারতের কোনো অংশ দখলও করা হয়নি।’
ওদিকে চীনও জানিয়েছে, তাদের হেফাজতে কোনো ভারতীয় সৈন্য নেই।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, “আমি যতদূর জানি, চীনের হেফাজতে এই মুহূর্তে কোনো ভারতীয় সেনা নেই।”
তবে ভারতীয় সৈন্যদের আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করনেনি তিনি।
ভারতের সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ১৫ থেকে ১৬ জুনের সংঘাতের পর ভারত সেনাবাহিনীর ৬ জন জাওয়ান ও ৪ জন সেনা কর্মকর্তাকে আটক করে চীন, যাদেরকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঝাও রিজিয়ান বলেন, সোমবার দুই দেশের মধ্যে হওয়া সংঘাতের দায় ভারতের। তিনি যোগ করেন, “চীন ভারতের সাথে সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং আশা করে যে ভারত দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ নেবে।”
ঐ অঞ্চলে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার না করার শর্তে দুই দেশের মধ্যে ১৯৬৬ সালে একটি চুক্তি হয়েছিল।
সেই চুক্তির শর্ত মেনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করে দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যেখানে ৭৬ জন ভারতীয় সৈন্য আহত হয় বলে খবরে বলা হচ্ছে।
বৃহ্পতিবার একটি পেরেক লাগানো রডের ছবি প্রকাশিত হয়, যেই ধরণের অস্ত্র ঐ সংঘাতে ব্যবহৃত হয়েছিল বলে বলা হচ্ছে।
ভারতীয় সেনা বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসির কাছে এই ছবিটি দিয়ে জানিয়েছে চীন গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষে এই অস্ত্র ব্যবহার করেছিল।
ছবিটি ভারতে টুইটারে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা তাদের ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। তবে চীনা বা ভারতীয় কর্মকর্তারা এ নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় ছোটখাট সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও ৪৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।