‘‘ ফ্যাসিবাদের বীজ ৭২ সালের সংবিধানের মাঝেই নিহিত ছিল’’

61

৬ সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু

*  বিচার বিভাগ সংস্কার : বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত রাখা সুপারিশ
* জনপ্রশাসন সংস্কার : দেশকে ৪টি প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ
*  দুদক সংস্কার : ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা ও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলের প্রস্তাব
*  পুলিশ সংস্কার : পুলিশের শক্তি প্রয়োগের সীমা নির্ধারণের সুপাশির
*  সংবিধান সংস্কার : রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ও দেশের সাংবিধানিক নাম বদলের সুপারিশ
*  নির্বাচন কমিশন সংস্কার : ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনর্নির্বাচনের সুপারিশ

ইউসুফ আল আজিজ : রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শনিবার বিকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইট এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের ওয়েবসাইটে এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তবে ছয় কমিশনের সর্বসম্মত যে সুপারিশমালা প্রকাশ করা হয়েছিল, তা এখনো ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, কমিশনগুলো হলো সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক, জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর ছয়টি কমিশনের কার্যক্রম সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায়। একই সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেছেন, সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা রাজনৈতিক দল ও গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির কাছে পাঠানো হবে। এর আগে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ছয়টি কমিশনের কার্যক্রম ৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে। সেদিন থেকেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু। সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা রাজনৈতিক দল ও গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির কাছে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, এরপর রাজনৈতিক দল ও গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের সব শক্তির সঙ্গে আলোচনা এবং সমঝোতাক্রমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বসবে বলে আশা করছি। তারিখ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের আলোচনায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে ‘জুলাই সনদ’ হবে, তার বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়।
ছয়টি সংস্কার কমিশন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঐকমত্য কমিশন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ যিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনেরও প্রধান। বাকি পাঁচ সংস্কার কমিশন প্রধানরা হচ্ছেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। তারা হলেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক -সুজন এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক স্বরাষ্ট্র ও সংস্থাপন সচিব সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী।
বিচার বিভাগ সংস্কার :
বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত রাখার সুপারিশ কমিশনের। এছাড়া প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারকদের নিয়োগ এবং বিচারক হিসেবে নিয়োগের যোগ্যতা পরিবর্তনসহ বিচার বিভাগকে নির্বাহীন বিভাগের প্রভাবমুক্ত রাখার সুপারিশে করেছে এ বিষয়ে গঠিত সংস্কার কমিশন। সে জন্য সংবিধানের সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো সংশোধনেরও সুপারিশ এসেছে কমিশনের কাছ থেকে। এছাড়া স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস, স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা, বিভাগীয় শহরে হাই কোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ, জেলা আদালতের সম্প্রসারণ, আইনের সংস্কার, আইন শিক্ষার সংস্কার, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধ এবং আদালত অঙ্গন দলীয়করণ মুক্ত রাখাসহ একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।
জনপ্রশাসন সংস্কার :
দেশকে ৪টি প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। দেশের পুরাতন চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং সরকারের কার্যপরিধি সুবিস্তৃত হওয়ার ফলে বর্তমান মধ্য প্রশাসনিক ও স্থানীয় সরকার কাঠামো যথেষ্ট বলে প্রতীয়মান হয় না। অপরদিকে মেয়াদি এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় মন্ত্রণালয় পর্যায়ে খুঁটিনাটি বহু কাজ সম্পাদন করা হয়। ক্ষমতার প্রত্যর্পণ (ডেলিগেশন) বিবেচনায় দেশে বিশাল জনসংখ্যার পরিষেবা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষ্যে দেশের পুরাতন চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এর ফলে এককেন্দ্রিক সরকারের পক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ হ্রাস পাবে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা শহরের ওপর চাপ হ্রাস পাবে।
দুদক সংস্কার :
ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সংবিধানের অঙ্গীকার, দুর্নীতি বিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা ও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলের প্রস্তাবসহ ৪৭ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন।
দুদককে শক্তিশালী করতে আট সদস্যের কমিশনের তৈরি করা সংস্কার প্রতিবেদন নিয়ে কমিশন প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমরা দেখেছি দুর্নীতি দমন কমিশনের মত প্রতিষ্ঠান কোন দেশেই এবং বাংলাদেশেও এককভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তার উপরে কেন্দ্রীয় দায়িত্ব নীতিনির্ধারণের কিন্তু তার জন্য উপযুক্ত রাষ্ট্র এবং সামাজিক পরিবেশ লাগে। পুরো রাষ্ট্র এবং সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হয় এর অবকাঠামোতে। সেই বিবেচনায় আমরা আমাদের সংবিধানের ২০ এর ২ অনুচ্ছেদে যেটা আছে সেটার সংশোধন করতে চাই। সেটা হচ্ছে, সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সংবিধানের একটা অঙ্গীকার। তার কথায়, “রাষ্ট্র এবং আইনি ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধা অর্জনে যে ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশে সেটা প্রতিরোধ করতে তার বিরুদ্ধে সাংবিধানিক অঙ্গীকার লাগবে। যদিও এর সুযোগ আমাদের সংবিধানে আছে।”
দুর্নীতি বিরোধী কৌশলপত্র তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কোনো জাতীয় দুর্নীতি বিরোধী কৌশল নাই। কোন নীতিমালা নাই। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশ করছি, কৌশলপত্র প্রণয়ন করতে হবে। যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক কাঠামোতে দুর্নীতি বিরোধী শুধু প্রত্যয়ই না, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যে অঙ্গীকারগুলে দরকার, দায়িত্ব এবং কর্তব্য সেটি নির্ধারণ করা। দুনীতি বিরোধী কৌশল প্রতিপালিত হচ্ছে কী না সেটি পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের জন্য সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ন্যায়পালের গুরুত্ব তুলে ধরেন এই সংস্কার কমিশনের প্রধান।
সংবিধান সংস্কার : বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীনদের অগণতান্ত্রিক প্রবণতা ও ফ্যাসিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ১৯৭২ সালে রচিত দেশের প্রথম সংবিধানের ‘দুর্বলতাকে’ দায়ী করেছে অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই কমিশনের ভাষ্য, “ফ্যাসিবাদের বীজ ৭২ সালের সংবিধানের মাঝেই নিহিত ছিল।”২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্র্বতী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে প্রথম ধাপে যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছিল, সংবিধান সংস্কার কমিশন তার একটি।বাংলাদেশকে যেভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলা হয়, তার মধ্যে আসলে যে প্রজাতন্ত্রের কথা হয়, সেটায় আমরা দ্বিমত পোষণ করে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, দেশের সাংবিধানিক নাম বদলের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আলী রীয়াজ বলেন, “১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের যে জনআকাঙ্ক্ষা, তার প্রতিফলন হিসেবে আমরা রাষ্ট্রের পাঁচটি মূলনীতি সুপারিশ করছি। সেগুলো হচ্ছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র। বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ রয়েছে।
সেই মূলনীতির আলোকে ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত’ করাকে রাষ্ট্রের লক্ষ্য হিসাবে হয়েছে সংবিধানে।বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ সুপারিশ প্রতিবেদন করার কথা তুলে ধরেন সংস্কার কমিশনের প্রধান।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে যেভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলা হয়, তার মধ্যে আসলে যে প্রজাতন্ত্রের কথা হয়, সেটায় আমরা দ্বিমত পোষণ করেছি। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের পরিচিত হওয়া উচিত ‘জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
পুলিশ সংস্কার :
পুলিশের শক্তি প্রয়োগের সীমা নির্ধারণ চায় সংস্কার কমিশন । বাহিনী সংস্কারের জন্য ২২টি আইনের সংশোধন ও পরিমার্জন চেয়েছে এই কমিশন। বেআইনি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের শক্তি প্রয়োগের সীমা নির্ধারণ, পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও আসামিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা চেয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।
এছাড়া বাহিনী সংস্কারের জন্য ২২টি আইনের সংশোধন ও পরিমার্জন চেয়েছে এই কমিশন। প্রতিবেদন জমা দেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন। তিনি বলেছেন ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি পুলিশকে তিন হাজারের বেশি আইন নিয়ে কাজ করতে হয়। সব আইন খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে এ ২২টি আইনের হয় সংশোধন, পরিমার্জন বা কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হবে। ওই ২২টি আইনের কোন কোন ক্ষেত্র আমাদের আপত্তি আছে, বলে দিয়েছি; বলে সুপারিশ করেছি আমরা। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ বলেছেন ভিড় বা জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কিছু নিয়মকানুন আছে।
তিনি বলেন, “এটার ব্যপারে আমরা কোন আইডিয়া দেইনি। ইউরোপের মডেলটাই ফলো করতে বলেছি। সেটার ব্যপারে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে ডিটেল একটা গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সংস্কার :
জাতীয় নির্বাচনে কোনো আসনে ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে সেখানে পুনর্র্নিবাচন আয়োজন করার সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এছাড়া নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বাতিল, জাতীয় নির্বাচনে ‘না-ভোট’ ফেরানোর সুপারিশ করা হয়েছে। ‘না-ভোট’ বেশি পড়লে নির্বাচন বাতিল করা এবং পুনর্র্নিবাচনে বাতিল হওয়া নির্বাচনের কোনো প্রার্থী যেন অংশ নিতে পারেন, সে বিধান রাখতে বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল এবং পুনর্র্নিবাচনের ক্ষমতা দেওয়া এবং ঋণ-বিল খেলাপি, কোনো আদালত ঘোষিত ফেরারী আসামি, একাধিক আসনে কোনো ব্যক্তির প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী, সংসদে উচ্চকক্ষ, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দুই বারে সীমিত এবং ১০০ আসন নিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষ তৈরির সুপারিশ করেছে বদিউল আলম মজুমদার কমিশন। এছাড়া সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দুইবার নির্বাচত প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের অযোগ্য এবং এক সঙ্গে একজন দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা যাতে হতে না পারেন সে বিধান চালু করতে বলা হয়েছে। উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের হারের ভিত্তিতে (সংখ্যানুপাতিক) করতে বলা হয়েছে।
উচ্চকক্ষের নির্বাচনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রত্যেক দলের প্রাপ্ত আসনের ৫০ শতাংশ দলের সদস্যদের থেকে এবং বাকি অর্ধেক আসন নির্দলীয় ভিত্তিতে নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, মানবসেবা প্রদানকারী, শ্রমজীবী প্রতিনিধি, নারী উন্নয়নকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচিত করার বিধান করা।