ছবি : বাবার জন্য কেনা ঈদের জামা গায়ে বদরুদ্দোজ্জা লস্কর ছবিটি গত ঈদুল আযহার দিন তোলা
* মৃত বাবার প্রতি সন্তানের অন্যন্য ভালোবাসা
মিরর প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ :
করোনা দুর্যোগের মধ্যে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঈদের নতুন জামা কেনার জন্য এ মার্কেট থেকে ওই মার্কেটে ছুটে বেড়াচ্ছেন, নতুন জামা না হলে ঈদই হবে না- এমনটা ভাবছেন তাদের জন্য অনুসরণযোগ্য ব্যক্তি হতে পারেন বদরুদ্দোজা লস্কর। ২৩ বছর ধরে চলছে তার একই পোশাকে ঈদ পালন।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের এনায়েতনগর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা লস্কর। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার এজি অফিসের সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন। তবে বদরুদ্দোজা লস্কর অভাবের টানে নয়, তার মরহুম বাবা শামসুদ্দোহা লস্করের প্রতি ভালোবাসার নির্দেশন হিসেবে এ কাজটা করে আসছেন। শামসুদ্দোহ লস্কর নারায়ণগঞ্জ ড্রেজার পরিদফতরের সিনিয়র ফোরম্যান ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ২৮ মার্চ তিনি ইন্তেকাল করেন। বদরুদ্দোজা তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয়।
বদরুদ্দোজা লস্কর গতকাল শুক্রবার দুপুওে নয়া দিগন্তকে জানান, ‘১৯৯৮ সালের মার্চ মাসে আমার বাবা মারা যাওয়ার কয়েক মাস আগে আমি টিউশনি করে যে টাকা পাই তা থেকে ৭৫০ টাকা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি থেকে বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনে দেই। ওই পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে বাবা সে সময় ঈদুল আযহা পালন করেন। এর কয়েক মাস পরেই তিনি মারা যান। তখন থেকে আমি সিদ্ধান্ত নেই ঈদে নতুন জামা পড়বো না। বাবার সে জামাটা গায়ে দিয়েই ঈদের নামাজ পড়বো।’
প্রথম প্রথম মিলাদ মাহফিলসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এ পাঞ্জাবিটা গায়ে দিতেন বদরুদ্দোজ্জা। বাবার স্মৃতি নষ্ট হওয়ার ভয়ে আর বাবার প্রতি ভালোবাসার নির্দশন হিসেবে এখন প্রতি ঈদে ওই পাঞ্জাবিটা গায়ে দেন তিনি। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, এই প্রিয় পাঞ্জাবিটা পরেই ঈদের জামাত আদায় করবেন এমনটাই জানালেন তিনি।
বাবার স্মৃতি তুলে ধরে তিনি আরো জানান, তার দাদী এক সময় বাকরখানি খেতে চেয়েছিলেন। তার বাবা তার দাদীর জন্য বাকরখানি বাজার থেকে নিয়ে এসে দেখেন তার দাদী মারা গেছেন। সে থেকে বদরুদ্দোজ্জার বাবা জীবনে আর বাকরখানি খেতেন না। বাবার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে বদরুদ্দোজ্জা তিন বছর ধরে বাকরখানি খান না। শুধু তাই না, বাবাকে ভালোবেসে অনেক নিয়মকানুনই পালন করেন তিনি।
বদরুদ্দোজার প্রতিবেশী সাংবাদিক লুৎফর রহমান কাকন জানান, আমার স্কুলের এবং মহল্লার বড় ভাই বদরুদ্দোজ্জা লস্কর। মরহুম বাবর প্রতি তার অসীম ভালোবাসার এক বহিঃপ্রকাশ হলো, তিনি দীর্ঘ সময় ধরে তার বাবার পাঞ্জাবি পরে ঈদের নামাজগুলো পড়ছেন। নিশ্চয় পরম করুণাময় আল্লাহ এমন সন্তানের দোয়া কবুল করবেন এবং তার বাবাকে জান্নাতবাসী করবেন- এ দোয়াই করছি, বলেন লুৎফর রহমান কাকন।