মুহা : ইউসুফ আল আজিজ : আগামী ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিহন চালনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার এ ব্যপাারে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রনালয়। গন পরিবহন মালিকরা সীমিত পরিসরে তাদের পরিবন চালনোর কথা জানিয়েছেন। তবে এসময়ে তারা ভাড়া পুনবিন্যাস চান। লঞ্চ ভাড়া নিয়ে শুক্রবার মন্ত্রীর সাথে বৈঠক রয়েছে মালিকদের। অপরদিকে বাস মালিকরাও ভাড়া পুনবিন্যাস চাচ্ছেন।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী রবিবার থেকে সীমিত পরিসরে চলবে লঞ্চ। তবে ভাড়া বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। আজ শুক্রবার বিকালে লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে বি আইডবিøউটিএ’র চেয়ারম্যানের বৈঠকের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় নয়, সরকারের আদেশেই গণপরিবহনের অংশ হিসেবে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। যেহেতু আজকের (২৮ মে) সরকারি আদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্তসাপেক্ষে স্বল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়ে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু আগামী ৩১ মে থেকে লঞ্চ চলবে। তবে শর্ত পরিপালনের বিষয়সহ নানাদিক দিয়ে লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বি আইডবিøউটিএ’র চেয়ারম্যান।’ এই সময়ে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিয়েও ওই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সরকারের কোনও আদেশ অমান্য করতে পারবো না। তাই আগামী ৩১ মে রবিবার থেকে লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানাতে পারবো, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান আমি নিজেই। কারণ, ফেরিতে চলাচলের ক্ষেত্রে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাধারণ মানুষের ঘরে ফেরার দৃশ্য দেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চালালে ধারণ ক্ষমতার পাঁচ ভাগের একভাগ যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে রওনা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি তো প্রাসঙ্গিক। তাই এ বিষয়টি নিয়েও শুক্রবারের বৈঠকে আলোচনা হবে।’
মাহবুব উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা যাতে লঞ্চ চালাতে পারি, সেক্ষেত্রে সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও সহযোগিতা লাগবে। কোনোভাবেই আমাদের লঞ্চের স্টাফদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারবো না।’ তারা সুস্থ না থাকলে আমাদের আম-ছালা দুটোই যাবে বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি
ভাড়া পুনবিন্যাস চায় বাস মালিকরা
এদিকে আগামী ৩১ মে নুতন ভাবে ভাড়া পুন্যবিনাস করে বাস চালাতে চাচ্ছে পরিবহন মালিকরা। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে টার্মিনাল থেকে যাত্রী উঠা নামা করা হবে। বাংলাদেশ বাস –ট্রাক অনার্স এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক রাকেশ ঘোষ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান।
৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলবে রেল
এদিকে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। আগামী ৩১শে মে থেকে ১৫ই জুন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রির মাধ্যমে শুধুমাত্র আন্তঃনগর ট্রেন চালুর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী ।
তিনি বলেন, সীমিত পরিসরে ট্রেন চালানো হবে। সেক্ষেত্রে একটি সিট বাদ দিয়ে টিকিট বিক্রি করা হবে। একটি ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হবে। এদিকে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে চলমান সাধারণ ছুটি আগামী ৩০শে মে শেষ হচ্ছে। ৩১শে মে থেকে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালু হবে।
সব ধরনের গণপরিবহন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চালুর দাবি
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের গণপরিবহন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বৃহস্পতিবার (২৮ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় বলে আমাদের দেশের গণপরিবহনকে আইন মানানো এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে আয় বঞ্চিত থাকায় পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা নিদারুণ আর্থিক সংকটে পতিত। ফলে তাদের কাছে বেঁচে থাকায় এখন মুখ্য বিষয়। তাদের পক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন পরিচালনা করা কতটুকু সম্ভব তা প্রশ্নবোধক। অন্যদিকে সড়কে যারা চাঁদাবাজি করে তারা সক্রিয় হয়ে উঠবে। এমতাবস্থায় সরকারের পক্ষে পরিবহনের মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সাধারণের জন্য আরোপিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন পরিচালনা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
অপরদিকে দেশে গণপরিবহনগুলো দৈনিক ইজারাভিত্তিক চালানোর কারণে মালিক সমিতি, বাস শ্রমিক সংগঠনের নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে নিজ নিজ গণপরিবহনের শ্রমিকের নিয়ন্ত্রণের পরিবহনগুলো পরিচালিত হয়। এতে দেশের যাত্রী সাধারণ শঙ্কিত যে বাসে বাসে বেশি যাত্রী তোলা ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের একটি অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হতে পারে। তাই করোনা সংক্রমণ বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন পরিচালনার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দিলেই কেবল সড়কে শৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করা সম্ভব। তাই তিনি করোনা সংকটের সময়ে গণপরিবহন পরিচালনার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে প্রদানের জন্য জোর দাবি জানান।
যেকোনো সংকটে দেশে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ালে তা স্বাভাবিক সময়েও কমানোর কোনো নজির নেই। দীর্ঘ ছুটিতে দেশের মানুষ এখন এক ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পতিত, তাই অর্ধেক যাত্রী নিয়েও যাতে গণপরিবহনগুলো বিদ্যমান হারে ভাড়া আদায় করে পরিবহন সেবা চালু করতে পারে তার জন্য গণপরিবহন চালুর আগেই তেলের দাম কমিয়ে দেয়ার দাবি জানান তিনি।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, বিশ্ববাজারে বহু আগেই তেলের দাম কমেছে। বর্তমানে দেশের রিজার্ভারে উপচে পড়া জ্বালানি তেল মজুতের খবর গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে। এ পরিস্থিতিতে তেলের দাম কমিয়ে সাশ্রয়ী ভাড়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের যাত্রী সাধারণকে যাতায়াতের সুযোগ দেয়ারও দাবি জানানো হয়।