মিরর বাংলাদেশ :
রাজধানীর বুড়িগঙ্গায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে।
নিখোঁজ অন্যদের উদ্ধারে এখনও অভিযান অব্যাহত রেখেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও কোস্ট গার্ড।
সোমবার সকালে সদরঘাটের শ্যামবাজার পয়েন্টে ময়ূর-২ নামের লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় মর্নিং বার্ড লঞ্চ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও কোস্ট গার্ড। তাদের সঙ্গে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছেন স্থানীয়রাও।
এ রিপোর্ট লেখার সময় বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৫ জন নারী ও ২ জন শিশু রয়েছে।
উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে। অভিযান শেষে হলে বিস্তারিত জানাবে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা শেষে প্রাণহানির সঠিক সংখ্যা জানানো হবে।
সূত্রে জানা গেছে, সকাল পৌনে ৮টার দিকে মর্নিং বার্ড লঞ্চটি অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। পথে শ্যামবাজার পয়েন্টে ময়ূর-২ নামের লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে ডুবে যায় সেটি।
কেরানীগঞ্জের একটি ডকইয়ার্ড থেকে মেরামত শেষে ময়ূর-২ নদীতে নামানোর সময় ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
তবে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি থেকে কয়েকজন যাত্রী সাঁতরে পাড়ে উঠলেও অন্যরা তলিয়ে যান বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, সকাল ৯টার দিকে মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি সদরঘাটে বার্দিং করার আগ মুহূর্তে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চটি ধাক্কা দেয়। এতে সঙ্গে সঙ্গে তুলনামূলক ছোট মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। এ সময় লঞ্চটিতে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিলেন বলে জানান তিনি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) মো. রফিকুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক এবং বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা) মো. রফিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন সরকার, বিআইডব্লিউটিসি’র প্রধান প্রকৌশলী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি, নৌ পুলিশের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি।
কমিটি দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন, দুর্ঘটনার জন্য দায়ি ব্যক্তি/সংস্থাকে শনাক্তকরণ এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রদান করবে।
এর আগে, ঢাকার শ্যামবাজার এলাকায় ১৫০ জনের অধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনায় সোমবার ছয়জন নারী ও তিনটি শিশুসহ কমপক্ষে ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সদরঘাট নৌ থানার ওসি রেজাউল করিম ভূঁইয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, লাশগুলো হস্তান্তরের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, সকাল ৮টায় মুন্সীগঞ্জ জেলার কাঠপট্টি থেকে লঞ্চটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের উপসহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) শাজাহান শিকদার জানান, বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে লঞ্চটি শনাক্তের পর লাশগুলো উদ্ধার করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, সকাল ৯টা ৩৩ মিনিটের দিকে মনিং বার্ড ফরাশগঞ্জ ঘাটে ভেড়ার সময় বেগার দিতে গিয়ে ময়ুর-২ লঞ্চের সাথে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা এবং উদ্ধার কাজ শুরু করেন, বলেন এ কর্মকর্তা।
ইউএনবির কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি ঘটনাস্থল থেকে জানান, ১৫০ জনের অধিক যাত্রী নিয়ে ‘এমভি মর্নিং বার্ড’ লঞ্চটি ডুবে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ জন যাত্রী স্থানীয়দের সহায়তায় সাঁতরে পাড়ে উঠে আসেন।
বিআইডব্লুউটিএর যুগ্ম পরিচারক একেএম আরিফ উদ্দিন জানান, বেশিরভাগ যাত্রী উপরে উঠতে সক্ষম হয়েছে। নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা কাজ করছে। এদিকে, বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক জানিয়েছেন।
দুর্ঘটনার ভিডিও দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10207485836860466&id=1724934319