মিরর বাংলাদেশ : ২০০৬ সালের সেই ছবিটি মিডিয়ায় প্রকাশের পর সারা দেশে বিদেশে আলোচিত হয়েছিল। পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়ে শরীর বস্ত্র খুলে গিয়েছিল যুবমহিলা লীগ নেত্রী আয়েশার । রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে গিয়ে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহুবার। শুধু তাই নয় নির্যাতনের পাশাপাশি নিজেকে বস্ত্রহীন হতে হয়েছে রাজপথে। ওই সময়ে মিডিয়াতে প্রকাশ পেয়েছে বেশ গুরুত্ব দিয়ে। সেই অপরাধে স্বামী হারা হতে হয়েছে তাকে। তারপরও থেমে যাননি।
আওয়ামীলীগের আদর্শকে বুকে লালন করে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন তিনি। কখনই পদ পদবির লোভ তাকে গ্রাস করতে পারেনি। সেই আয়েশা আজ ধুঁকে ধুঁকে মরছে। একবেলা খাবারও অনেক সময় জোটে না। শারেরিক ভাবে অসুস্থ সেই আয়েশ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন অথচ তার পাশে নেই দলটির নেতারা । নারায়ণগঞ্জের শহরের চানমারি মসজিদের পাশে^ দাউদ মিয়ার বাড়ির ৪র্থ তলায় মায়ের সাথে থাকেন আয়েশা। সাথে তার এক মাত্র কন্যা সন্তান তিশাকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
আয়েশার অসহায়ত্বের খবরে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতা জানান, আওয়ামীলীগের পরিচয়ে আজ অনেকে আঙ্গুল খুলে কলাগাছ হয়েছে। অথচ যারা আওয়ামীলীগের জন্য নিবেদিত ছিল তারা অনেকে না খেয়ে মরেছে। তারা বলেন, আওয়ামীলীগের পরিচয়ে পাপিয়াদের আজ ভাগ্য খুলে গেছে তারা কোটি কোটি টাকার মালিক অথচ ধুঁকে ধুঁকে মরছে আয়েশার মতো ত্যাগী নেতা নেত্রীরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর থেকেই এই অসহায়ত্বকে সঙ্গী করে নিয়েছেন। ডাক্তারি রির্পোট হিসেবে তিনি কিডনি সমস্যার পাশাপাশি চোখে ছানি ও পুলিশের লাঠির আঘাতে মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রতি নিয়তই যন্ত্রনায় ছটফট করছে এই অসহায় আওয়ামী লীগের কর্মীটি। অসহায়েত্বের মতো দিনযাপন করছেন। ঠিক মত কথা বলতে পারছেন না, কানেও কম শুনছেন। তাই কারো কথার জবাবও দিতে পারেন না ঠিক মত।
আয়েশা মা রহিমা খাতুন নয়াদিগন্তকে বলেন, কি লাভ হয়েছে রাজনীতি করে। পায় নাই কিছুই, হারিয়েছে সব। আমরা এই বুড়া বয়সে মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যাবো আপনারা বলতে পারেন। দুইটা ছেলে ছিলো একজন দুর্ঘটনায় মারা গেছে আরেক জন রাস্তায় ঘুরে ঘুরে পান বিক্রি করে আমাদের সংসার চালাচ্ছে। ছোট মেয়ের জামাই এতো দিন তার চিকিৎসার খরচ চালাতো এখন সেও অসুস্থ। কি করবো আল্লাহ তুমি বলে দাও।
ছোট ভাই পান বিক্রেতা হোসেন বলেন, আমার বোন জামাতা শাহজালাল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা। সে এতদিন আপার চিকিৎসার খরচ চালাতো। এখন তার অবস্থাও ভাল না। আমি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে পান বিক্রি করে যে অর্থ পাই তা দিয়ে ঠিক মত সংসার চালাতে পারি না। আপার চিকিৎসা করাবো কিভাবে।
এদিকে আয়েশার অসুস্থতার খোজ পেয়ে বরিশাল সংরক্ষিত মহিলা এমপি সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা তার খালাতো ভাই নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি এলাকায় বসবাসকারী কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য বিল্লালকে দিয়ে শনিবার আর্থিক সহযোগীতার পাশাপাশি এক মাসের সংসারের যাবতীয় বাজার করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেই সাথে তিনি ঘোষনা দিয়েছেন অচিরেই আয়েশার সাথে দেখা করতে আসবেন।
সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা বলেন, আয়শা আপা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কর্মী সে দলকে ভালবেসে রাজপথে থেকে আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রেখেছে। আমাদের সকল নেতাদের ক্ষুদ্র চেষ্টাই তার সহযোগীতার জন্য যথেষ্ট। আমি নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমান ভাই, মেয়র আইভী আপা ও ব্যবসায়িক নেতা লিটনকে (ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি) আহবান করবো তাকে সহযোগীতা করার জন্য। আমি অচিরেই তার সাথে দেখা করতে আসবো। সেই সাথে আমি আহবান করবো আমাদের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিবেন।
এদিকে আয়েশারা না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অথচ নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন ওরফে মতি সুমনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য উঠে আসছে। সুনির্দিষ্ট পেশা না থাকা সত্তে¡ও তারা স্বল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ও অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।
র্যাব জানায়, রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার ইন্দিরা রোডে তাদের ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে ২টি ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল ব্যক্তিগত গাড়ি ও নরসিংদীর বাগদী এলাকায় ২ কোটি টাকার ২টি প্লট আছে।
এছাড়াও তেজগাঁও এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় অংশীদারীত্বে ‘কার এক্সচেঞ্জ’ নামক গাড়ির শো রুমে প্রায় ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে পাপিয়ার। নরসিংদী জেলায় ‘কেএমসি কার ওয়াস অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামক প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ আছে তার। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের নামে-বেনামে অনেক এ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে র্যাব আরও জানায়, পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমন নরসিংদীতে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, জমির দালালি, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স প্রদান, গ্যাস লাইন সংযোগ দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। পুলিশের এসআই ও বংলাদেশ রেলওয়েতে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে ১১ লাখ টাকা, একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ৩৫ লাখ, একটি সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স করে দেওয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকা তারা আদায় করেছেন। এছাড়া ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাÐের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে পাপিয়া তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
##