‘ভারতীয় আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে সাবেক সেনা কর্মকর্তারা ঐক্যবদ্ধ

32

* হাইকমিশনে হামলা এবং জাতীয় পতাকা অবমাননা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ‘হুমকি

মিরর বাংলাদেশ :  ‘ভারতীয় আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সেনা কর্মকর্তারা। তাঁরা ভারতীয় যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা এবং জাতীয় পতাকা অবমাননা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ‘হুমকি’ মনে করে দেশটির ক্ষেত্রে আর ‘নতজানু’ পররাষ্ট্রনীতি নয়, বরং ‘সাম্যতার ভিত্তিতে’ সেটি ঠিক করতে সরকারকে আহ্বান জানান।
শনিবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও সমাবেশে অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা এই ডাক দেন। বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ‘সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যবৃন্দ জাতীয় ঐক্য ও গণসংহতি পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা বলেন, প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নাই। কিন্তু এরপরও একটি গোষ্ঠী বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই, আমাদের আঘাত করলে আমরা যে প্রতিবাদ করব তা সহ্য করতে পারবে না কেউ। তাই তাদের উচিত, শত্রুতার মনোভাব দূর করে সার্ক কার্যকর করা এবং সার্কভুক্ত সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক নিশ্চিত করা। বিক্ষোভে সাবেক সেনা কর্মকর্তারা ভারত বিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও স্লোগান প্রদর্শন করেন।
সরকারকে আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোহাম্মদ আহসানুল্লাহ বলেন, আর কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নয়, সাম্যতার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি চাই। কোনো ধরনের নতজানু নীতিকে কোনো অবস্থাতেই আমরা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেব না।
বিক্ষোভ শেষে সংগঠনটির আহ্বায়ক কর্নেল (অব) মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। শুধু ভারত নয়, দেশ এবং দেশের বাইরে যেখানেই বাংলাদেশ এবং আমার মাতৃভূমির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হবে আমরা সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলব। সামরিক ও বেসামরিক সব শ্রেণি পেশার মানুষকে নিয়ে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব।
সামরিক ও বেসামরিক মানুষের মধ্যে বিভাজন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এই দেশের সন্তান। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই সামরিক ও বেসামরিক মানুষের মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। বিশেষ করে গত সরকারের আমলে এই আস্থার আরও অধঃপতন হয়েছে। কিন্তু এ রকম হওয়া উচিত নয়। আমরা সবাই একসঙ্গে খেলেছি, লেখাপড়া করেছি। এখন হয়তো কেউ ব্যবসা করছেন, কেউ বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করছেন, কেউ সামরিক কেউ বেসামরিক কর্মকর্তা। আমাদের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। আমরা দেশের প্রয়োজনের সবাই একসঙ্গে কাজ করব।
অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোহাম্মদ আহসানুল্লাহ বলেন, হজরত শাহজালাল, হজরত শাহ মখদুম, অতীশ দীপঙ্কর, শ্রী চৈতন্য, অনুকূল ঠাকুর, লোকনাথ ব্রহ্মচারী প্রমুখের আবাসভূমি এই বাংলাদেশ। আমরা যুগ যুগ ধরে এই শ্যামলভূমিতে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছি। কিন্তু অতি উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, সম্প্রীতি বাংলাদেশের লেডি ফেরাউন পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতের হিন্দু নেতৃত্বের শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে আমাদের দিকে। তাদের ইদানিংকালের কর্মকাণ্ড এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে।
তিনি বলেন, তাদের সর্বশেষ উদ্যোগ ছিল আগরতলা এবং কলকাতার বাংলাদেশি দূতাবাসে আক্রমণ চালানো এবং আমাদের বাংলাদেশের পতাকাকে অবমাননা করা। আমরা এই সমস্ত ঘটনাগুলোকে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে মনে করছি। এ ছাড়া ভারতের কিছু মিডিয়া ও রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশকে নিয়ে সার্বক্ষণিক বিষোদগার করে চলেছে। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী যে কোনো দূতাবাসে হামলা মানে সেই দেশের সার্বভৌম এলাকার ওপরে হামলা। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে যখন আমাদের সার্বভৌমত্বের উপরে হামলায় হয়, আমাদের পতাকা পদদলিত হয়, তখন আমরা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা চুপ করে থাকতে পারি না।
৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিনেও সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যদের ভূমিকা তুলে ধরে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনীষ দেওয়ান বলেন, পুনরায় আবার এখানে জমায়েত হয়েছি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম জারি রাখার জন্য।
ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে ‘বার্তা দিয়ে’ তিনি বলেন, মোদিজি, অমিতজি এবং রাজনাথজি, আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যেটা দেখেছেন, ৭২ সালের সেই সেনাবাহিনী এখন আর নাই। আমরা এখন যে কোনো শত্রু মোকাবেলায় প্রস্তুত। আপনারা আর আস্ফালন তুলবেন না, ভয় দেখাবেন না। আমরা শুধু সশস্ত্র বাহিনী নই, ১৭ কোটি জনতা আছে আমাদের সাথে আপনাদের সীমান্তেই রুখে দিতে।
সরকারের উদ্দেশে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল লুৎফুল হক বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সকল জাতীয় চুক্তিগুলো তুলে ধরুন। যেসব ভারতীয় বাংলাদেশে আছে, সেগুলো পুনর্বিবেচনা করে প্রয়োজন না থাকলে তাদের ফেরত পাঠানো হোক। যেসব ভারতীয় মিডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে দেশে সেগুলো বাতিল করা হোক।
সমাবেশ শেষে বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক সদস্যসহ পাঁচ শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি রাওয়া ক্লাব থেকে শুরু হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংলগ্ন ক্রসিং হয়ে ঘুরে আবার রাওয়া ক্লাবে এসে শেষ হয়।
****