মশা যেন ভোট না খেয়ে ফেলে : প্রধানমন্ত্রী

942

মিরর বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নিজে সম্পদশালী হবো, ব্র্যান্ড পরবো, হাইফাই সোসাইটি দেখবো। আর আমার গ্রামের মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে, এই নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। জাতির পিতা এটা বিশ্বাস করতেন না, আমিও এটা বিশ্বাস করি না ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ শেষে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এবং উত্তরের মেয়র হিসেবে মো. আতিকুল ইসলাম আতিককে শপথ বাক্য পাঠ করান।
এরপর স্থানীয় সরকার পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম দুই সিটি করপোরেশনের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা এত অল্প সময়ের মধ্যে এত কাজ করে গেছেন, যেটা ভাবলে অবাক লাগে। আমি জানি না, পৃথিবীর আর কোনো দেশের নেতার এত দ্রæত একটা বিধস্ত দেশকে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন কি না? তার এই নেতৃত্বের ফলে এবং প্রশাসনিক দক্ষতার ফলে বাংলাদেশ অল্প সময়ের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিল।’
১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নের কাজ শুরু করি। যার শুভ ফল দেশবাসী পেতে শুরু করে।’
পরবর্তী কালে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে টানা তিন মেয়াদে সরকার প্রধান হিসাবে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যার ফলে দেশের উন্নয়নের কাজগুলি আমরা ধারাবাহিকভাবে করতে সক্ষম হচ্ছি। আজকের বাংলাদেশ মাত্র এক দশকের মধ্যে প্রবৃদ্ধি আট দশমিক ১৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। যেখানে দরিদ্র্যের সীমা ছিল ৪১ ভাগ (২০০৫-০৬ অর্থব বছরে) আজকে তা ২০ দশমিক পাঁচ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের গতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিস্ময় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন সরকার গঠন করেছি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ছিল। কিন্তু সেই মন্দার প্রভাব আমরা বাংলাদেশে পড়তে দেয়নি। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করে আর্থিক দিক থেকে শুরু করে সবদিক থেকে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টানা মেয়াদে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট বৃদ্ধির সক্ষমতা অর্জনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আগে অন্যের কাছে আমাদের হাত পাততে হত। এখন আর বাংলাদেশকে কারও কাছে হাত পেতে চলতে হয় না। এখন আমরা নিজেদের অর্থায়নে করতে এটা সক্ষমতা অর্জন করেছি। কিন্তু এই গতিধারা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।’
বাংলাদেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে দেশের উন্নয়নে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণসহ দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন উন্নয়ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে আমরা দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলবো, সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ইতোমধ্যে আমরা প্রণয়ন করেছি এবং অনুমোদন দিয়েছি।’
এসময় শত বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটু আরও আগে যেতে চেয়েছি। আমি তো থাকব না। কিন্তু দেশটা যেন এগিয়ে চলতে পারে। সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়ে যাচ্ছি। কারণ সরকার আসবে, সরকার যাবে। কিন্তু ভবিষ্যতে যেন এমন না হয়, উন্নয়নের কাজগুলি আবার থমকে যায়, যেটা হয়েছিল ১৯৯৬ পর্যন্ত ২০০১ পর্যন্ত যতগুলি কাজ আমরা করে গিয়েছিলাম তার সবগুলি কিন্তু থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টানা মেয়াদে বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নের ফলে তৃণমূলের মানুষের জীবনযাপনের চিত্র পরিবর্তন হয়েছে সেকথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মানুষের যে আর্থিক স্বচ্ছলতা গ্রামগঞ্জে, যেটা আমাদের লক্ষ্য ছিল। যার জন্য জাতির পিতা সারাজীবন সংগ্রাম করছেন। আমরা সেই লক্ষ্যটাই অর্জন করতে যাচ্ছি।’
‘অর্থাৎ কেউ খাবে কেউ খাবে না, সেটা হবে না। এখানে সকল মানুষের অধিকার আছে। সুন্দরভাবে বাঁচার উন্নত জীবন পাওয়ার, সেজন্য আমাদের সমস্ত পরিকল্পনা, সমস্ত অর্থবরাদ্দ। আমরা একেবারে প্রথমে গ্রামের দিকে দৃষ্টি দেই। যেকারণে প্রত্যেকটা গ্রামের মানুষ যেন নগরের উন্নয়নটা পায়, নগরের ছোঁয়াটা পায়, নাগরিক জীবনের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের পরিকল্পনা নিচ্ছি’Íবলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
মার্চ থেকে থেকে মুজিববর্ষ উদযাপনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমি সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি, কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। যেখানে যত ভূমিহীন মানুষ আছে, তাদের আমরা যেটুকু পারি ঘর-বাড়ি করে দেওয়া হবে।’
এছাড়া যেখানে সেখানে শিল্প কলকারখানা গড়ে না তুলে ফসলী জমি রক্ষা করে নগরায়ন করার দিকে সরকার নজর দিচ্ছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি শহরের বস্তিবাসীদের জন্য স্বাস্থ্যমত বাসস্থান করে দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার দুই সিটির নব-নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের মশা, বিশেষ করে এডিস মশার ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে বলেছেন, যাতে করে ছোট এ পতঙ্গ তাদের ভোট খেয়ে না ফেলে।
তিনি বলেন, ‘এখানে ডেঙ্গু নিয়ে সমস্যা রয়েছে। আপনাদেরকে এখন মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে হবে। আপনাদের এখানে মনোযোগ দিতেই হবে। তা না হলে মশা আপনাদের ভোট খেয়ে ফেলবে। আপনারা অবশ্যই এটি দেখতে পাবেন। আপনাদের মনে রাখতে হবে যে, মশা ছোট (পোকামাকড়) হলেও খুব শক্তিশালী।
এদিকে শপথ নিলেও এখনই দায়িত্ব বুঝে পাচ্ছেন না নব-নির্বাচিত মেয়রদ্বয়। কারণ দুই সিটির মধ্যে বর্তমান মেয়রদ্বয়ের পাঁচ বছরের মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। ডিএনসিসি বর্তমান মেয়রের মেয়াদ শেষ হবে ১৩ মে এবং ডিএসসিসি মেয়রের মেয়াদ শেষ হবে ১৭ মে।
প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রæয়ারি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জয়ী হন।
মেয়র পদ ছাড়াও ডিএসসিসি-তে ১০০টি কাউন্সিলর পদের মধ্যে ৭৫টি ওয়ার্ড থেকে ৭৫ জন সাধারণ কাউন্সিল এবং ২৫ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর রয়েছেন। আবার ডিএনসিসির ৭২টি কাউন্সিলর পদের মধ্যে ৫৪টি ওয়ার্ড থেকে ৫৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ১৮ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর রয়েছেন।