পারভেজ বাবুল, কবি ও সাংবাদিক
মনোবিজ্ঞান / Psyc,hology আমার খুব আগ্রহের একটা বিষয়। বিশ্ব বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড / Sigmund Freud এর মনোবিজ্ঞান বিষয়ক কয়েকটা বই পড়ার পরও আমার মন ভরলো না তৃষ্ণা মিটলো না। আরো পড়ার আগ্রহ জন্মালো।
প্রায় বিশ বছর আগে অর্থাৎ দুই হাজার সালের দিকে আমার এক আমেরিকান বন্ধু আসবে বাংলাদেশে। তাকে ফ্রয়েডের লেখা মনোবিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাত একটা বইয়ের নাম লিখে ইমেইল পাঠালাম। সে যেনো আমেরিকা থেকে আমার জন্য বইটি নিয়ে আসে। বন্ধুটি কথা রেখেছে। বাংলাদেশী টাকায় বইটির দাম পড়লো সাত হাজার টাকা। সমস্যা নাই। বইটি হাতে পেয়েই পড়া শুরু করলাম। বইয়ের নামটা ভুলে গেছি। খুঁজেও পাচ্ছিনা বাসায়। মনে হয় পুরাতন পেপার, বইয়ের সংগে আমার অনুপস্থিতিতে ঐ বইটাও ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে চলে গেছে!
যাহোক, সিগমুন্ড ফ্রয়েডের জন্ম অষ্ট্রিয়ায়। তিনি মনোবিজ্ঞানী/ Psychologist এবং স্নায়ূ রোগ বিশেষজ্ঞ/ Neurologist. স্নায়ূ / Neuron থাকে মানুষের মস্তিষ্কে/ Brain এ। মানুষের মস্তিষ্কে মোট ছিয়াশি বিলিয়ন – আবারো বলি : ছিয়াশি বিলিয়ন স্নায়ু/ Neuron আছে! একেকটা স্নায়ূ / Neuron অপরাপর দশ হাজারের অধিক স্নায়ূর সংগে সম্পর্কযুক্ত! বিষয়টা ভাবতে বসলে পাগল হয়ে যেতে হবে।
মহান আল্লাহপাক বা সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট মানুষের মাথায় কতো কিছু! মানুষও কতো কিছু পারে! হাইড্রোজেন বোমা আনবিক বোমা পারমাণবিক বোমা কতো শক্তিশালী ক্ষেপনাস্ত্র বানায়! অথচ মানুষের মাথার একটা চুলও বানাতে পারে না! অদৃশ্য করোনাভাইরাসের সামনে সব বড় বড় শক্তিধর ক্ষমতাবানরাও চুনোপুটি বা পোনা মাছের মতো ভয়ে আতঙ্কে কাবু হয়ে গেছে!
যা বলছিলাম, সিগমুন্ড ফ্রয়েড – মানুষের মন নিয়ে মাতামাতি করার কারণে মানুষের মন নিয়ে কাজ করার আগ্রহ বেড়েছে, চিকিৎসার সুযোগ বেড়েছে। চিকিৎসক বিশেষ করে যারা Psychologist, Neurologist বা Neuroscientist- মনোবিজ্ঞানী, স্নায়ূরোগ বিশেষজ্ঞ তারা ফ্রয়েডের লেখা বই পড়ে মন, মগজ, মস্তিষ্ক, স্নায়ূ, যে নামেই ডাকি, সে বিষয়ে জ্ঞানাহরণ করতে পারছেন। মন নিয়ে নতুন নতুন গবেষণায় অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে।
এখন কথা হলো মন কি? মনের কাজ কি? মনের প্রয়োজনীয়তা কি? মন না থাকলে কি হতো? এক কথায় উত্তরে বলা যায়, মন হলো মানুষের আবেগ অনুভূতি ভাবনা চিন্তা ভালো লাগা মন্দ লাগা ভাব ভালোবাসা সুখ দু:খ হাসি কান্না আনন্দ রাগ অনুরাগ মান অভিমান রং ঢং সব কিছু মনে রাখার এবং বোঝার অংগ। মূলত কাজগুলো করে আমাদের মস্তিষ্ক / Brain. আমরা তার সুন্দর একটা নাম রেখেছি মন/ Mind. মনটা দেখা যায় না, অথচ অদৃশ্য মনটাই সব বড় বড় কাজগুলো করে। মনের কারণেই পৃথিবীতে বিশ্ব যুদ্ধ হয়, মনের কারণেই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
মনের কারণেই মানুষ মানুষকে ভালোবাসে, মনের কারণেই মানুষ মানষকে ঘৃণা করে। মনের কারণেই মানুষ মানুষকে ভুল বোঝে সন্দেহ করে, মনের কারণেই মানুষ মানুষকে আপন মনে করে। মনটা বা মস্তিষ্ক চলতে চলতে কোনো কারণে হ্যাক/ Hack করলে মানুষের ব্রেইন ষ্ট্রোক / Brain stroke হয়। তাই মনের উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ রাখা বা থাকা অবশ্যই অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
মন উড়ে বেড়ায় ঘুরে বেড়ায়। মানুষ পরাধীন অথচ মানুষের মনটা সম্পূর্ণ স্বাধীন। মন না থাকলে মানুষ মৃত। কারণ শুধু দেহ নিয়ে মানুষ এক মৃহুর্তও চলতে পারবে না। তাই তার মন লাগবে।
উদাহরণস্বরূপ : ডোনাল্ড ট্রাম্পের “মনে হয়েছে” চীন করোনাভাইরাসের রাজনীতি শুরু করেছে তাকে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারিয়ে জো বাইডেনকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বানানোর জন্য। অর্থাৎ বিষয়টা ট্রাম্পের “মনে হয়েছে।” এই “মনে হওয়া” থেকেই পৃথিবীতে কতো যুদ্ধ কতো রক্তপাত কতো মৃত্যু কতো ধ্বংস কতো অশান্তি কতো রাজনীতি!
বাংলাদেশের কিছু মানুষের “মনে হয়েছে” করোনাভাইরাস কোনো ব্যাপার না। তাই তারা ঘরে না থেকে লক ডাউন না মেনে ইচ্ছে মতো বাইরে ঘুরছে, মাার্কেটে যাচ্ছে। সে কারণে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও কিছু মানুষের “মনে হচ্ছে” করোনা কোনো ব্যাপার না! তাই তারা বাইরেই আছে এবং মরার আগ পর্যন্ত বাইরেই থাকবে। তারা রাস্তায় মরবে তবু ঘরে থাকবেনা!
বাংলাদেশের কিছু মানুষের “মনে হয়েছে” করোনায় আক্রান্ত মানুষকে ঘরে ঢুকতে দিলে তারাও মরে যাবে! বউ সন্তানের “মনে হয়েছে” করোনায় আক্রান্ত মানুষটাকে ঘরে ঢুকতে দিলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই তারা ঘরে ঢুকতে দেয়নি!ঘরের মানুষ আপন মানুষদেরকেও তাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়িওয়ালার “মনে হয়েছে” করোনায় আক্রান্ত ভাড়াটিয়াকে বাড়িতে ঢুকতে দিলে তার কোটি কোটি টাকার বাড়িটা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই ভাড়াটিয়াকে বাড়িতে ঢুকতে না দিয়ে পিটিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে!
অর্থাৎ সব কিছু ঘটছে তাদের “মনে হয়েছে” থেকে, আবারো বলি: “মনে হয়েছে” থেকে! ” কী জঘন্য মন তাদের! ভাবতেও কষ্ট হয়! এখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প, ঘর ছেড়ে বাইরের লোকেরা, বউ সন্তান, বাড়িওয়ালা – তাদের কারো মনের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই বা তারা মনের ইচ্ছায় পরিচালিত। এধরণের মানুষ – ব্যক্তির জন্য পরিবারের জন্য সমাজের জন্য রাষ্ট্র বা দেশের জন্য জাতির জন্য পৃথিবীর জন্য ক্ষতিকর!
মানুষের মন বড় বিচিত্র! মনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ব্যার্থ মানুষগুলোই যা ইচ্ছা তাই করে! তাদের কাজ কর্ম পশুদেরও লজ্জায় ফেলে দেয়! মনের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না চাওয়া মানুষরুপী অমানুষেরাই চোর, খুনি ধর্ষক দূর্নীতিবাজ বেঈমান বিশ্বাসঘাতক প্রতারক যুদ্ধবাজ চক্রান্তকারী ষড়যন্ত্রকারী নারী ও শিশু নির্যাতনকারী ইত্যাদি ইত্যাদি সকল খারাপ কাজের হোতা বা নাটের গুরু!
তাই ভালো মানুষ হতে চাইলে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষের মন / মনোজগত সৌর জগতের চেয়েও বড়। তাই যার মন যতো বড় তার পৃথিবী/ জগতটাও ততো বড়।