সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন শেখ হাসিনা
* অগ্নিসন্ত্রাস করে তারা নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি
* গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিল
* লুটপাট ও জনগণের ভোট চুরিই ছিল তাদের কাজ
* নির্বাচন বন্ধ করবে এত সাহস কোথা থেকে পায়
* সব নাশকতায় বিএনপির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে
মিরর বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, ভোট দিতে চায়। আমরা ভোটের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিয়েছি আমাদের দলকেও। সবাই দাঁড়াবে, সবাই কাজ করবে। জনগণ যাকে বেছে নিবে, সেটাই।
বুধবার বিকেলে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জনসভার মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে তিনি হজরত শাহজালাল ও শাহপরানের (র.) মাজার জিয়ারত করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা যখন উন্নয়নের কাজ করছি, তখন তারা (বিএনপি) আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে। কোনো মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব থাকলে এভাবে আগুন দিয়ে মা-শিশুকে হত্যা করা হয় না। মা তার শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরে আছে। কিন্তু মা-শিশু কয়লা হয়ে গেছে। তারা আগুন দিয়ে রেল, বাস পোড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালেও এভাবে আগুন দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে তারা। নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে ৫৮২টি স্কুল, ৭০টা সরকারি অফিস, ৬টি ভূমি অফিস, ৩ হাজার ২৫২টি গাড়ি পুড়িয়ে ও ভাঙচুর করে। তারা মানুষকে পুড়িয়ে কয়লা করে ফেলে। ২৯টি রেলগাড়ি পুড়িয়ে তিন হাজারের মতো মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। ৫০০ মানুষকে হত্যা করে। এখনো তারা অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। অগ্নি সন্ত্রাস করে তারা নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। ২০১৪ সালে মানুষ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। আমরা সরকারে এসেছি। ২০১৮ সালেও নির্বাচনে এসেও নমিনেশন বাণিজ্য শুরু করে। তাদের নির্বাচন শেষ। দোষ কার- দোষতো তাদের।
তিনি বলেন, আগামী ৭ই জানুয়ারির নির্বাচন উপলক্ষে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। এই সিলেট অলি-আউলিয়ার দেশ। এ দেশ থেকেই আমি আমার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করছি। ১৯৮১ সালে এ দেশে ফিরে এ সিলেট থেকেই আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে সভা শুরু করেছিলাম। সে সময় মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেই হাজার হাজার মানুষ সে সভায় উপস্থিত ছিলেন। এখানে এসেছিলাম একটি প্রত্যয় ও স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য। সে স্বপ্নটা হলো- দুঃখী বাংলার দুঃখী বাঙালির মুখে হাসি ফোটানো। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের মানুষকে দারিদ্রমুক্ত করে উন্নত জীবন দেবেন- সেটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সব ধরনের নাশকতায় বিএনপির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণ বারবার নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, বিএনপি বাণিজ্য করেই ধ্বংস করেছে নির্বাচন। একজন লন্ডনে বসে মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে। আরেকজন গুলশানে বসে মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে। আবার পল্টন থেকেও আরেকবার বিক্রি করেছে। তারা এভাবে নির্বাচনকে বাণিজ্যে পরিণত করে ধ্বংস করেছে নির্বাচনকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ পরবর্তী দেশে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের সকলের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও অর্থনীতিকে ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি তুলে এনেছিলেন। সময় পেয়েছিলেন মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন। এর মধ্য দিয়ে বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে স্বল্প উন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন। দেশের জনগণ তখন একটি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল। কিন্তু সে সময়ে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তারপর বুকভরা বেদনা নিয়ে যেদিন আমি বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম, সেদিনই আমি ঘোষণা করেছিলাম যে- এ বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। তাদের জন্য আমি কাজ করবো। সেই লক্ষ্য নিয়েই পথে নেমেছি। বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে জাতির পিতার স্বপ্ন অনুযায়ী বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দিতে সক্ষম হয়েছি। সেটি সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে বারবার আমাদের নির্বাচিত করেছিল বলেই।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যেভাবে জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যা করে, সংবিধান ও সামরিক আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল তারা কখনো গণমানুষের দিকে তাকায়নি। মানুষের কল্যাণ করেনি। লুটপাট ও জনগণের ভোট চুরিই ছিল তাদের কাজ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে তারা কোনো কাজ করেনি। এটাই ছিল দুর্ভাগ্যের বিষয়। সেই কাজ করলে অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নত হতে পারতো। তারা এসেছিল ক্ষমতাকে ভোগ করতে।
তিনি বলেন, ২১ বছর পর সরকার গঠনের সুযোগ পাই। তখন থেকে চেষ্টা করেছি, এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু বার বার চক্রান্ত হয়েছে। পাঁচটা বছর ক্ষমতায় ছিলাম- বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম, সাক্ষরতার হার বেড়েছিল, ৪০ হাজার মেট্রিকটন খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে ২৬ হাজার মেট্রিকটন খাদ্য মজুদ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এরপর ২০০১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম। কিন্তু সে সময় আমাদেরকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। কেন দিল না। বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক গ্যাস। ওই আমেরিকা প্রস্তাব করল গ্যাস বিক্রি করতে হবে। কারণ আমেরিকার কোম্পানি এখানে গ্যাস উত্তোলন করে। আমি বলেছিলাম আমি গ্যাস বেচবো না। এই গ্যাস আমাদের জনগণের, এই গ্যাস জনগণের কল্যাণে ব্যবহার হবে। জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করে যদি ৫০ বছরের রিজার্ভ রেখে অতিরিক্ত থাকে তাহলে বেচবো। তারা খুব নাখোশ হলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। তা ছাড়া আমাদের দেশেরও কিছু লোক ছিল।
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতায় এলো বিএনপি-জামায়াত জোট। যে বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রæয়ারির নির্বাচনে জনগণের ভোট চুরি করেছিল। ভোট চুরির অপরাধে এ দেশের মানুষ আন্দোলন করে ওই খালেদা জিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। সেই ক্ষমতাচ্যুত, ভোট চোর, জনগণের সম্পদ চোর বিএনপিকে ক্ষমতায় বসালো ভোট কারচুপির মাধ্যমে। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া। সে ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বেচবে। সেজন্য তার পিঠে বাহবা দিয়ে ক্ষমতায় বসালো। তার রেজাল্ট কী? জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুঃশাসন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বোমাবাজি-খুন-অগ্নিসন্ত্রাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষের জীবন কেড়ে নেবে। মানুষকে ভোট দিতে দেবে না। নির্বাচন বন্ধ করবে। এত সাহস কোথা থেকে পায়।
তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনে হাত পুড়ে এটা তাদের মনে রাখা উচিত। তারা মনে করেছে, দুটো আগুন দিয়েই সরকার পড়ে যাবে। অত সহজ নয়। অত ভাত দুধ দিয়ে খায় না।
নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই নৌকা নুহু নবীর নৌকা। এই নৌকায় মানবজাতিকে রক্ষা করেছিলেন আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন। এই নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। আবার এই নৌকা যখন সরকারে এসেছে, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। আজকে আপনাদের কাছে আমার আহ্বান, আগামী নির্বাচনে আমরা যাদের নৌকা মার্কার প্রার্থী দিয়েছি, তাদের ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।’ এ সময় তিনি হাত তুলে ওয়াদা করতে বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্য়াদা পেয়েছি। দেশের মানুষ বার বার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে পেয়েছে বলেই আমরা এটা করতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
জিয়াউর রহমানের শাসনামলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা গণমানুষের দিকে তাকায়নি। মানুষের কল্যাণ করেনি। তারা লুটপাট, জনগণের ভোট চুরি এই চুরি করাটাই ছিলে তাদের কাজ। তারা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনও কাজ করেনি। সেটা করলে অনেক আগেই বাংলাদেশের উন্নতি হতে পারতো। তারা এসেছিল ক্ষমতাকে ভোগ করতে। দেশে ফিরে এসে আমি দেখেছি কীভাবে ক্ষমতা ভোগ করে কুক্ষিগত করে রাখে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি বলে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। ক্ষমতায় আনা হলো বিএনপিকে। ভোটচোর, জনগণের সম্পদ চোরকে ক্ষমতায় বসালো ভোট কারচুপির মধ্য দিয়ে। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া। যার কারণে তার পিঠে বাহবা দিয়ে ক্ষমতায় বসালো। ফলাফল হলো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি আর দুঃশাসন।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া যে কুপ খনন করে গ্যাস পায়নি, আওয়ামী লীগের আমলে আমরা সেই কুপ খনন করে কেবল গ্যাস নয়, তেলও পেয়েছি। আল্লাহ জন বুঝেই ধন দেয়। আল্লাহ জানেন, ওদের কাছে দিলে সব নয়-ছয় করবে। আওয়ামী লীগের হাতে পড়লে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগবে। ঠিক কিনা বলেন?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন উন্নয়নের কাজ করছি, তখন বিএনপির কাজ হচ্ছে পেট্রোল দিয়ে মানুষ পোড়ানো। যারা লুটেরা, খুনি, হত্যাকারী, দুর্নীতিবাজ, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী তারাই এদেশের মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়। নির্বাচন বানচাল করতে চায়। লন্ডনে বসে একটা কুলাঙ্গার হুকুম দেয়, আর কতগুলো লোক নিয়ে এখানে আগুন নিয়ে খেলে। কোনও মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকলে এইভাবে আগুন নিয়ে মা-সন্তানকে পোড়াত পারে? আজ আগুন দিয়ে বাস পোড়াচ্ছে, রেল পোড়াচ্ছে। ২০১৩ সালে নির্বাচন ঠেকাতে অগ্নিসংযোগ করে, গাড়ি পোড়ায়। তাদের আগুনে ৩ হাজারের মতো মানুষ পুড়ে যায়। পাঁচশোর মতো মানুষ মারা যায়। তবে অগ্নিসংযোগ করে তারা ২০১৩ সালের নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। ২০১৮ সালে তারা নির্বাচনে এলো। কিন্তু ভোট করবে কী? ওই লন্ডনে বসে একটা নমিনেশন দেয়। গুলশানে বসে একটা দেয়, আর পল্টন বসে আরেকটা। নমিনেশন বাণিজ্য শুরু করে দিলো। এই সিলেটেও বাণিজ্য করেছে। বাণিজ্য করেই তাদের নির্বাচন শেষ। দোষ কার? দোষ তো তাদের।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারম্যান কে? মানিলন্ডারিং, গ্রেনেড হামলা, অস্ত্র চোরাকারবারী এবং দুর্নীতি। তাদের দুর্নীতির শাস্তি এফবি আই দিয়ে গেছে। কোনও দিন রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে চলে গেছে। আর এখন ওখানে বসে বসে হুকুম দিয়ে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়। এটা হলো তাদের চরিত্র।’
সিলেট অঞ্চলে সরকারের উন্নয়নের কর্মকাÐগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটবাসী সব সময় আমাদের পাশে আছে। আমরা সিলেটে যত উন্নয়ন করেছি, জানিনা সিলেটবাসী সেটা মাথায় রাখবেন কিনা?’ সিলেটে মেট্রোরেল স্থাপনের সম্ভাবনা পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে সরকার প্রধান উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন,‘আমাদের কাজই হচ্ছে জনগণের সেবা করা। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছি। স্মার্ট নাগরিক আমরা গড়ে তুলবো। স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি। করেই আমরা আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান-সম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। ##