মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের জয়জয়কার

636

আব্দুস সালাম,মুন্সীগঞ্জ :
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব দ্বিতীয়বারের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। শুধু তিনি নির্বাচিত হয়েছেন এমনটা নয়, তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন নিয়ে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বুদ্ধিদীপ্ত সামগ্রিকভাবে বিজয়ী হয়েছেন মেয়র বিপ্লব। তারই জয়জয়কার হয়েছে। অন্যদিকে, মুন্সীগঞ্জ-৩ (মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন নিয়ে যারা কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে লড়েছেন তাদের ভরাডুবি হয়েছে। ফলে তিনি মুন্সীগঞ্জ শহরকেন্দ্রিক যে শক্তি সামর্থ্য অর্জন করেছিল তা খর্ব হয়েছে। এটাই এখন টক অব দ্য টাউন। আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু। মেয়রের রাজনৈতিক দূরদর্শিতাকে তিনি প্রমাণ করেছেন বলে অনেকেই তার প্রকাশ্যে প্রশংসা করছেন।

পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৯টিতেই মেয়র হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব এর প্রত্যক্ষ সমর্থনে তার নিজস্ব লোক বলে পরিচিত বিজয়ী হয়েছেন ১নং ওয়ার্ডে খায়রুল ইসলাম (উটপাখি), ২নং ওয়ার্ডে মো: সোহেল রানা রানু (পানির বোতল), ৪নং ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন (ব্লাকবোর্ড), ৫নং ওয়ার্ডে মো. মতিউর রহমান স্বপন (পাঞ্জাবি ), ৬নং ওয়ার্ডে আবু সাত্তার মুন্সি (টেবিল ল্যাম্প), ৮নং ওয়ার্ডে আওলাদ হোসেন (উটপাখি) ও ৯নং ওয়ার্ডে সাজ্জাদ হোসেন সাগর (উটপাখি)। এছাড়াও ৩নং ওয়ার্ডের বিজয়ী কাউন্সিলর মোঃ মকবুল হোসেনকে (ডালিম) নির্বাচনের পূর্বে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে (উট পাখি) বসিয়ে দেন। ফলে নির্বাচনে বিজয়ী হতে কোনো বাধাই মকবুলের ছিল না। ৭নং ওয়ার্ডের বিজয়ী শফিকুল হাসান তুষার (পানির বোতল) মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকেও নির্বাচনপূর্বে বিশাল মিছিল নিয়ে মেয়রের বাসায় বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে তিনি মেয়রের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। মেয়র বিপ্লবকে সমর্থন এবং তার সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তিনি এ কাজ করেন। এসময় তার এ বক্তব্য বিভিন্ন মিডিয়ায় আসে এবং ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। তাতে তিনি জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদ হারান। শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাকে ছাত্রদলের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়।

এছাড়াও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর বিজয়ী প্রার্থী নার্গিস আক্তার (আনারস) মেয়র হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের অনুগ্রহ পেয়েছেন, তার বিরুদ্ধে মেয়র বিপ্লবের কোনো শক্ত অবস্থান ছিল না। মহিলা কাউন্সিলর পারভিন আক্তার (আনারস) ও রুমা বেগম (জবা ফুল) বিজয়ী হয়েছেন। তারা দু’জনই মেয়রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

অপরদিকে, ১নং ওয়ার্ডে এডভোকেট মৃণাল কান্তি এমপি’র কাছের লোক হিসাবে পরিচিত আবির হোসেন (পানির বোতল), ২ নং ওয়ার্ডে এডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের নিজের ওয়ার্ডে আব্দুল মান্নান দর্পণ (উট পাখি), ৪ এডভোকেট মাহবুবুর রশীদ সবুজ (টেবিল ল্যাম্প), ৫ হাজী মনির (উট পাখি) ৯ নং ওয়ার্ডে আলহাজ্ব জাকির হোসেন (পাঞ্জাবী ) পরাজিত হন। এ ওয়ার্ডে প্রশাসনের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। শক্তিশালী এ হেভিওয়েট প্রার্থীর পরাজয় এমপি’র শিবিরে চরম হতাশা নেমে এসেছে। ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো: মকবুল হোসেন এর পরেই তার শক্তিশালী অবস্থান ছিল। সংসদ সদস্য এডভোকেট মৃণাল কান্তির সকল মিটিং ও মিছিলে জাকির হোসেন বিশাল বাহিনী নিয়ে অংশ নিয়ে থাকেন। এখন জাকির হোসেনের সেই সমর্থন থাকবে কিনা তাও ভাবিয়ে তুলেছে এমপি’র শিবিরে। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে পারভীন আক্তার (আনারস) মার্কা পরাজিত হন।

প্রশাসন ভূমিকা নিয়ে যদি বলা হয়, তাহলে বলতে হবে নজিরীবিহীন নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন শেষ হয়েছে। জিরো টলারেন্সের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ প্রশাসন তাদের কথা রেখেছেন। ২৫ টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮ টি সাধারণ কেন্দ্রে ১৩ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং ১৭ টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ১৫ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া ৯ টি মোবাইল টিম, ৯ জনের সমন্বয়ে ৩ টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ডিবির দুইটি মোবাইল টিম ছাড়াও ২০ পুলিশ সদস্যের স্ট্যান্ডবাই টিম দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া, ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৫টি বিজিবি টিম ও ৩টি র‌্যাব স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করেছে। এই বিপুল সংখ্যক ভ্রামমান আদালত, স্টাইকিং ফোর্স, বিজিবি, পুলিশ, আনসার ব্যাটেলিয়ার ও আনসার নিয়োগ করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া থেকে পুরোপুরি মুক্ত থেকেছেন। ফলে এ নির্বাচন নিয়ে নানা রকমের শঙ্কা ও সংশয় থাকলেও তার ভুল প্রমাণিত হয়েছে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কিছুই ঘটেনি। এক কথায় বলা যায়, সবকিছুই ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সকল শ্রেণী-পেশার ভোটররা এতে ভীষণ খুশি। বিপুল সংখ্যক ভোটারের ভোট প্রদান করা তারই প্রমাণ বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণীর জনসাধারণ। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভায় মোট ২৫টি কেন্দ্রে ৫৩ হাজার ৩৭৪ জন ভোটারের মধ্যে ৩২ হাজার ৪১৫ জন তাদের ভোট প্রয়োগ করেছেন। ভোট প্রয়োগের হার ৬০.৭৩ শতাংশ। তা সময়ের ইতিহাসের অংশ হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে।

উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগ দু’ গ্রুপে বিভক্ত। একটির নেতৃত্বে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও তার ছেলে মেয়র হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব। তাদের সাথে আছেন আলহাজ্ব মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের সহোদর মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনিছুজ্জামান আনিস ও তার দুই ছেলে জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান রাজীব ও যুবলীগ নেতা জালাল উদ্দিন রুমী রাজন। অপর গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন এডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি ও তার অনুসারীরা।