শতভাগ সফল,এমন দাবি করব না : শেখ হাসিনা

192

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা

*  ঋণখেলাপিদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে
* ২০৩০ সালের মধ্যে দেড় কোটি নতুন কর্মসংস্থান
*  সাংবাদিকদের জন্য দশম ওয়েজ বোর্ড
* ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের প্রতিশ্রুতি
*  সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো

মিরর বাংলাদেশ  : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন। এবারের ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনসহ ১১টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুস রাজ্জাক ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ইশতেহার ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা থাকা সত্তে¡ও সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে সব সময় যে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি, এমন দাবি করব না। তবে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা যা বলি তা বাস্তবায়ন করি’।
তিনি বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে সরকার পরিচালনার পথ-পরিক্রমায় যা কিছু ভুলত্রুটি তার দায়ভার আমাদের। সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের। আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কথা দিচ্ছি, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মকান্ড পরিচালনা করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এ উত্তরণ যেমন একদিকে সম্মানের, চ্যালেঞ্জেরও। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সক্ষমতা থাকতে হবে। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে।’
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত হবে। আসুন, আরও একবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। আপনারা আমাদের ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি দেব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন তারই প্রমাণ। তবে মাঝেমধ্যে মনুষ্যসৃষ্ট, প্রাকৃতিক এবং বৈশ্বিক বাধাবিপত্তি আমাদের চলার গতিপথকে মন্থর করেছে। ২০১৩-১৬ সময়ে বিএনপি -জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ বিস্তারের চেষ্টা মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়েছে। ২০০৯ সালের পর থেকে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে ২০২০ সালে যখন বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। এ মহামারি গোটা বিশ্বের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছিল। আমাদের সরকার একবিংশ শতাব্দীর এ ভয়াবহ মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করার পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির ধকল কাটতে না কাটতে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এ বছর ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। যেকোনো যুদ্ধ শুধু দুই প্রতিবেশীর সমরাস্ত্র ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। যেমন- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমরাস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি ভয়াবহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছে। অবরোধ-পাল্টা অবরোধের ফলে গোটা বিশ্বের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা হয়েছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অধিক মূল্যে পণ্য ক্রয় ও আমদানি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। দেশীয় মুদ্রার মানের ব্যাপক অবনতিতে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দ্রব্যমূল্য এবং মানুষের জীবনযাপনের ওপর। বহুমুখী ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্তে¡ও আমরা অনেক সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে পারিনি।,
সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন-সাধ কোনো দিনই পূরণ হবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন এলেই মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ এবং উন্নয়নবিরোধী একটি চক্র ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। নির্বাচনে কূটকৌশল অবলম্বন বা কারচুপির মাধ্যমে কিংবা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে তারা আটঘাট বেধে মাঠে নামে। সফল না হলে জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিশোধস্পৃহায়। অগ্নিসন্ত্রাস, যানবাহন পোড়ানো, বোমাবাজি, নাশকতা বা সন্ত্রাসী কর্মকাÐের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে ঘরবন্দি করতে চায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তার ওপর এবার তারা বিদেশ থেকেও কলকাঠি নাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট পাবে না, এটা বুঝতে পেরে আগে থেকে এবার তারা সন্ত্রাসী কর্মকাÐে লিপ্ত হয়েছে। হরতাল-অবরোধের নামে যানবাহন পোড়ানো, মানুষ হত্যা, রেললাইন উপড়ে ফেলাসহ বিভিন্ন নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। মা ও শিশুর অগ্নিদগ্ধ লাশ সকলের বিবেককে প্রচÐভাবে নাড়া দিয়েছে। এ ধরনের হীন কাজ আর সহ্য করা যায় না। জনগণের সাড়া না পেয়ে ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে এসব নাশকতা চালিয়ে জানমালের ক্ষতি করছে। সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন ও সাধ কোনো দিনই পূরণ হতে দেবে না এ দেশের জনগণ।’
ঘোষিত ইশতেহারে বলা হয়েছে, উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল প্রতিটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যাপ্ত, নির্ভরযোগ্য ও ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মূল্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংস্থান একটি পূর্বশর্ত। বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রথম সরকারের সময় (১৯৯৬ থেকে ২০০১) জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের ব্যাপক লুটপাট, অব্যবস্থাপনা এবং অদক্ষতার কারণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার সরকারের তিন মেয়াদে দেশে যুগান্তকারী ও বৈপ্লবিক উন্নয়ন করা হয়। ফলে শিল্প ও বাণিজ্য খাত প্রয়োজন অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলসহ দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ প্রাপ্তি সুনিশ্চিত হয়েছে।
ইশতেহারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি অঙ্গীকার প্রদান করা হয়েছে। এগুলো হলো- নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা।বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে ভাড়াভিত্তিক ও অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ (রিটায়ারমেন্ট) করা হবে।পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে দশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। নবায়নযোগ্য ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য গ্রিড যুগোপযোগী করা হবে।নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি এবং এই অঞ্চলে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাণিজ্য ত্বরান্বিত করা হবে।সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৪ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করা হবে।পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে দেড় কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রæতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে তরুণ সমাজের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। জনমিতিক পরিবর্তনে ২০৪১ সালে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স হবে ৩০ বছরের কম; ১৫-২৯ বছর বয়সের তরুণের সংখ্যা কম বেশি ২ কোটি হবে। বাংলাদেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আওয়ামী লীগ এই তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখবে। কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসার করা হবে। জেলা ও উপজেলায় ৩১ লাখ যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং তাদের আত্ম কর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ২০৩০ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বেকার যুবকদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বেকার যুবকদের সর্বশেষ হার ১০.৬ শতাংশ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩.০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। নিরক্ষর ও স্বল্প-শিক্ষিত তরুণ ও যুব-সমাজের জন্য যথোপযুক্ত কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগীদের সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা এবং ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হবে।
অনলাইনে শ্রমবাজার সৃষ্টিসহ নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অনলাইন শ্রমের বাজারে বিভিন্ন পেশাদারি সেবাসমূহ যুক্ত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে হিসাবরক্ষণ, পর্যালোচনা ও ব্যাখ্যা, পে-রোল, আইটি সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণের কাজসহ আরও নতুন নতুন ক্ষেত্র সংযুক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি ধীরে ধীরে দেশের সকল উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে প্রতি উপজেলায় যুব প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা ১৭.৮ শতাংশ যুবদের অনুপাত আগামী ৫ বছরে ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। আগামী ৫ বছরে ২ লাখ যুবকের মাঝে ৭৫০ কোটি টাকা যুব ঋণ বিতরণ করা এবং ২ লাখ ৫০ হাজার যুবককে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে দেশে-বিদেশে বিকাশমান কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে পলিটেকনিক ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটগুলো ঢেলে সাজানো হবে।
তিনি বলেন, যুবসমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য প্রতিটি উপজেলায় পাঠাগার স্থাপন, গণতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিক ও শরীরচর্চা কেন্দ্র এবং ‘স্মার্ট ইয়ুথ হাব’ গড়ে তোলা হবে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সহজ শর্তে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য বিশেষ সেল গঠন করে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হবে। অসহায়, অসমর্থ এবং শারীরিকভাবে অক্ষম যুবদের শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, অবকাঠামোর উন্নয়ন ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের মাধ্যমে শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটকে সেন্টার ফর এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠার জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনীয় ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতিগত সহায়তা প্রদান করা হবে।
সরকার প্রধান বলেন, দেশে প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি মানুষ শ্রম শক্তিতে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। শিল্প খাতের বিকাশ এবং নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে এদের প্রত্যেকের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা আওয়ামী লীগের অন্যতম লক্ষ্য। কর্ম সংস্থানের জন্য সবচেয়ে বেশি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা। এ খাতের বাধাসমূহ দূর, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও বিদেশি মানবসম্পদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এই খাতকে আরও শক্তিশালী, সুসংগঠিত ও গতিশীল করে তোলা হবে।
ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং এক্ষেত্রে ব্যাংক যাতে বিধি নির্ধারিত সঞ্চিতি রাখে তা নিশ্চিত করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, মুদ্রা সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায়-উপকরণ হবে নীতি সুদ হার ব্যবহার। কর্মোপযোগী প্রশিক্ষিত যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ঋণ সরবরাহ সম্প্রসারণ করা হবে। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে অনিশ্চয়তা লাঘব করবে।
পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।
ভোটে জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় এলে সাংবাদিকদের জন্য দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এমনকি এর কাজও চলমান রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণার সময় এই তথ্য জানান দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ১৫ বছরে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে পত্রিকার সংখ্যা ৩ হাজার ২৪১টি। ৩৩টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, ২৩টি এফএম বেতার এবং ১৮টি কমিউনিটি বেতারকেন্দ্র বর্তমানে সম্প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছে। সাংবাদিকরা যাতে নির্যাতন, ভয়ভীতি-হুমকি, মিথ্যা মামলার সম্মুখীন না হন তার ব্যবস্থা করা হবে। ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ অনুযায়ী ব্যক্তির গোপনীয়তা ও তথ্য সংরক্ষণ করা হবে এবং অপব্যবহার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে। এতে বলা হয়, নাগরিককেন্দ্রিক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, কল্যাণমুখী, উপাত্তনির্ভর এবং সমন্বিত দক্ষ-স্মার্ট প্রশাসন গড়ার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারবদ্ধ। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ, উদ্যোগী, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অধিকতর তৎপরতা বাড়িয়ে দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ সব ধরনের হয়রানি বন্ধে কাজ চলবে।