শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা

150

 * জয়ের দাবী ‘মা ভারতেই আছেন’

মিরর বাংলাদেশ  : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে ধোঁয়শা তৈরী হয়েছে। তিনি কোথায় আছেন তা নিয়ে একেক রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গনমাধ্যমের দাবী শেখ হাসিনা আরব আমীরাতে নারায়ণগঞ্জে সাবেক এমপি শামীম ওসমানের বাসভবনে আশ্রয় নিয়েছেন । তবে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় দাবী করেছেন তার মা (শেখহাসিনা) ভারতেই আছেন। আরব আমীরাতে যাওয়া খবর সঠিক নয়। এদিকে পররাষ্ট্র উপদেস্টা গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে কোন সুনিদিষ্ট তথ্য নেই।
জানা গেছে,ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই মাস যাবত তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। সেখানে থেকেই তিনি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ফিনল্যান্ডে আশ্রয়ের খোঁজ করছেন। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দু।
এদিকে, হাসিনার দুবাইয়ে অবস্থান নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বলা হচ্ছে, হাসিনা গত রোববার স্থানীয় সময় সকালে ভারত থেকে দুবাইতে অবতরণ করেন। সেখান থেকে তিনি দুবাইয়ের বিলাসবহুল এলাকা জুমেরিয়া-টু-তে আছেন। তবে এ তথ্যের কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যায় নি। কেউ কেউ এটাকে স্রেফ গুজব বলে অবিহিত করেছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানে না। দুবাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারাও কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। একই সাথে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানা গেছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ও এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দু জানিয়েছে, শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছেন। তবে সেখানে তার আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদিও হাসিনার বোন শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যের নাগরিক এবং তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক সেখানকার ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য এবং জুনিয়র মন্ত্রী। উল্টো যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকার হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক তদন্তের জন্য চাপ দিতে পারে বলেও জানিয়েছেন দেশটির এক সরকারি কর্মকর্তা।
হিন্দুর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইউরোপের মধ্যে হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলেনস্কি। সেখানে শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি থাকেন। ফিনল্যান্ডে হাসিনা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে পারেন কি না, এমন প্রশ্ন করা হয় ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী অ্যালেজান্ডার স্টাবের দফতরে। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। তবে তার পাসপোর্টে আগে থেকেই মার্কিন ভিসা লাগানো ছিল। কিন্তু তিনি দেশ থেকে পালানোর পরই এটি বাতিল করে দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয় যেহেতু হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তাই তার এ ভিসাটি আর বৈধ থাকছে না। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস করেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। যদি হাসিনা দেশটিতে যেতে পারতেন তাহলে তিনি হয়তো-বা সজীবের বাসায় উঠতেন।
এদিকে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় নিশ্চিত করেছেন তার মা এখনো ভারতেই আছেন। সোমবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ কে সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত ছেড়ে যাওয়ার খবর সঠিক নয়।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘আমার মা ভারত ছেড়ে গিয়েছে বলে যে খবর চাউর হয়েছে সেটি সঠিক নয়। তিনি এখনো ভারতেই অবস্থান করছেন।
এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো ভারতেই অবস্থান করছেন বলে জানা যাচ্ছে।তিনি দিল্লি ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে চলে গেছেন, এ জাতীয় সব খবরকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা।
দিল্লি থেকে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষ জানান, তিনি গত ৪৮ ঘণ্টায় বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলেছেন এবং তারা প্রত্যেকে নিশ্চিত করেছেন ‘শেখ হাসিনা এখানে গত সপ্তাহে যেভাবে ছিলেন, এই সপ্তাহেও ঠিক একইভাবেই আছেন!’
তিনি দিল্লিতে ঠিক কোথায় অবস্থান করছেন তা ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কখনোই জানায়নি, কিন্তু সেই ‘লোকেশন’ যে গত কয়েকদিনের ভেতরে মোটেও পাল্টায়নি, সে কথাও জানানো হয়েছে।
দিল্লির সাউথ ব্লকে একটি উচ্চপদস্থ সূত্র বিবিসির কাছে এমনও বলেছেন,‘যে পরিস্থিতিতেই আসুন না কেন, শেখ হাসিনা এই মুহুর্তে ভারতের সম্মানিত অতিথি। তিনি যদি পরে তৃতীয় কোনো দেশে যানও, সেটা নিয়ে আমাদের লুকোছাপা করার তো কোনো কারণ নেই! ফলে শেখ হাসিনা গোপনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কোনো দেশে পাড়ি দিয়েছেন, এসব ‘খবর’কে উপেক্ষা করতেই পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন গতকাল বলেন,‘ওনার (শেখ হাসিনার)অবস্থান সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা দিল্লিতে খোঁজ করেছি, আমিরাতেও খোঁজ করেছি, কনফারমেশন অফিসিয়ালি কেউ দিতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আপনারাও যেমন দেখেছেন, আমরাও দেখেছি উনি আজমানে সম্ভবত গেছেন। কিন্তু এটা রিকনফার্ম করার চেষ্টা করেও আমরা সফল হইনি।’
বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আসছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত চলে গেছেন। সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওয়াকিবহাল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওনার (শেখ হাসিনা) অবস্থান সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা দিল্লিতেও খোঁজ করেছি, আমিরাতেও খোঁজ করেছি। কনফারমেশন অফিসিয়ালি কেউ দিতে পারেননি। তবে আপনারা যেমনটি দেখেছেন আমরাও দেখেছি উনি আজমানে সম্ভবত গেছেন। কিন্তু সেটা রি-কনফার্মের চেষ্টা করেও আমরা সফল হইনি।
বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দেখলাম আমেরিকার চাপেই ভারত সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়ে দিয়েছে, এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারব না, আমেরিকাকেই জিজ্ঞেস করুন।