মিরর বাংলাদেশ প্রশাসনের কেন্দ্র বিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়ে মধ্যরাতে অগ্নিকান্ডে ঘটনায় সন্দেহের ঢালপালা মেলছে। জনমনে এঘটনা নিয়ে দেখা নিয়েছে নানা প্রশ্ন। নেটিজনরাও সরব ঘটনা নিয়ে। এছাড়া রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে এ ঘটনায় ষড়যন্ত্রের সন্দেহ করছেন খোদ অন্তর্বর্র্তী সরকারের একজন উপদেষ্টাও। এ অগ্নিকান্ড দুর্ঘটনা, নাকি নাশকতা, সেই বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে চাননি। ক্ষয়ক্ষতির তথ্যও তাৎক্ষণিকভাবে মেলেনি।
তবে সাত সদস্যের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। এদিকে নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ৮ম তলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল কুকুরের একটি পোড়া দেহ উদ্ধারের ঘটনায় নানা প্রশ্ন জাগছে।
নাশকতা মনে করছেন কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা বলতে পারব না। এটা ইনভেস্টিগেশনের পরে বলতে পারব।
সচিবালয় ও ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার রাত ১টা ৫২ মিনিটে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। ঠিক কয়টার দিকে আগুনের লাগে সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেননি। তবে মধ্যরাতে আগুনের ঘটনা ঘটছে বলে অনেকে ধারণা করছে। ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান সচিবালয়ে সাত নম্বর ভবনের ষষ্ঠতলা পরিদর্শন করেন। পরে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদুল ইসলাম ও আসিফ মাহমুদও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁরা ভবনের ক্ষয়ক্ষতির বিষয় খোঁজখবর নেন।
সকাল ৯টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সচিবালয়ের মতো সুরক্ষিত জায়গায় এত বড় আগুন লাগা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্ঘটনা তো সব জায়গায়ই ঘটতে পারে। সচিবালয়েও ঘটতে পারে। এ জন্যই তো এখানেও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি রাখা হয়। এ ঘটনায় উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে সচিবালয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল সংবাদ সম্মেলনে জানান, ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। গেট ভেঙে দুটি গাড়ি ঢোকানো হয়। ফায়ার সার্ভিসে ২১১ কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত ছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জানান, ৬, ৭, ৮ ও ৯ তলায় আগুন ধরেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ছয়টি মন্ত্রণালয় ও একাধিক বিভাগের অফিস রয়েছে। সেগুলো হলোÍযুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই নানা ষড়যন্ত্র চলার কথা বলছেন অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টারা। সচিবালয়ে আগুন লাগার খবর শুনেই তেমন ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, সরকারের প্রশাসনিক সদর দপ্তর সচিবালয়ের যেই ভবনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে সেখানে মন্ত্রণালয় ছিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়ার। আগুনের ঘটনায় হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না। ফেসবুকের নিজস্ব আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনিএ হুঁশিয়ারি দেন।
নেভানোর দেরির কারণ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জাহেদ কামাল জানান, সচিবালয়ের ফটক দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়ি ঢুকতে না পারায় কাজ করতে বেগ পেতে হয়েছিল। সেই কারণে সামনের ফটক ভাঙতে হয়েছিল তাদের। সচিবালয়ে ঢোকার মোট পাঁচটি ফটক রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার ফটক আছে দুটি। তবে সেই দুটি দিয়েও বড় গাড়ি ঢোকানো যাচ্ছিল না। ৪ নম্বর ফটক দিয়ে ঢুকতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এখন জুলাই ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সারজিস ফেইসবুকে লিখেছেন, “বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের যারা চাটার দল ছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম স্টেকহোল্ডার ছিল আমলাদের বৃহৎ একটা অংশ। এদের উপর ভর দিয়েই হাসিনা এই দেশে তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল।
“যখনই বিপ্লবীরা হাসিনার অপকর্ম, চুরি, লুটপাট, দুর্নীতির দিকে নজর দিয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে, তখনই সচিবালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা হাসিনার দালালেরা বিভিন্ন অপকর্মের ফাইলগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে দিল। ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের শেকড় উপড়ে ফেলতে তার সহযোদ্ধা থেকে এখন উপদেষ্টার পদে থাকা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত করা হলেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় তেমন কিছু সরাসরি বলেননি। তিনি বলেন, “এটা ইনভেস্টিগেশনের আগে আমি তো বলতে পারব না। ইনভেস্টিগেশনের পরে আপনাদের আমরা জানাব।
এত সুরক্ষিত জায়গায় আগুন লাগার কারণ নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “অ্যাক্সিডেন্ট তো সব জায়গায় হতে পারে, এজন্যই তো অ্যাক্সিডেন্ট বলে। সচিবালয়ের ভেতরেও তো হতে পারে। এজন্য তো সচিবালয়ের ভেতরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি রাখা হয়।
কীভাবে আগুন লাগল কিংবা তাতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
সচিবালয়ে অগ্নিকান্ড নিয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে সাতটায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান। ইশরাক হোসেন লিখেছেন, জ্বলছে সচিবালয়। হাসিনা পরিবার ও তার দোসরদের দুর্নীতির নথিপত্র ধ্বংস করার জন্যে কি এই পরিকল্পিত অগ্নিকান্ড?
তিনি লিখেছেন, পত্রিকায় পাওয়া খবরের অংশ দেখাচ্ছে, মেগা দুর্নীতির মন্ত্রণালয়ের অফিস পুড়ে গেছে। যতদিন যাবে সংকট আরও গভীর হবে। তাই আমরা নির্বাচনের কথা বার বার বলছি। রাজনৈতিক সরকার ছাড়া আওয়ামী ও বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা সম্ভব না।
আবু বকর সিদ্দিক নামে একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন ,এতো বড় সচিবালয়ে কী একটা সিসি ক্যামেরাও নাই? নাটক সিনেমা আর কত?
নজরুল ইসলাম বাবুল লিখেন , ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত তুলতে পারলে জনগণ ত্যাগ স্বীকার করবেই! প্লিজ, না পারলে সময় নষ্ট করবেন না।
সাদেকুর রহমান লিখেছেন, অন্তত ৫০ জনের সাথে কথা বলেছি।কেউই সচিবালয়ের আগুনকে দুর্ঘটনা বলেনি, বলেছে ‘অন্তর্ঘাত’! মানে আগুন লাগেনি,‘লাগানো হয়েছে’!! কী ভয়ংকর!!!
ইঞ্জিনিয়ার জামাল উদ্দিন লিখেছেন, যেহেতু আপনারা তাদেরকে দৌঁড় এবং মাইরের উপর রাখেন নাই, তাই এখন তারাই আপনাদেরকে দৌঁড়ের উপর রাখবে! *****